সিপ্লাস ডেস্ক: শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের হয়রানি ও নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের বিএনপি ও জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা।
বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের বিএনপি-জামায়াতপন্থিসহ অন্যান্য তিন শতাধিক আইনজীবীর সই করা বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুধু ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তাই নন, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে সমর্থন আদায় করার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ সিটিজেনস কমিটি’ গঠন করে বাংলাদেশের পক্ষে বহির্বিশ্বের সমর্থন আদায় করেছিলেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণের মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উজ্জ্বল করেছেন।
তিনি স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, কগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল, আন্তর্জাতিক গান্ধি শান্তি পুরস্কার ও প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডমসসহ নানান পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তার জন্য গর্বিত।বিজ্ঞাপন
‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে উপলব্ধি করছি যে, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণের এই মহান কারিগরের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে নানান রকম নিপীড়ন ও হয়রানিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। বর্তমান সরকার যাকেই তার প্রতিপক্ষ মনে করে, তাকেই রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে নির্যাতন, নিপীড়ন করে নিঃশেষ করার চেষ্টা করছে। বর্তমান অগণতান্ত্রিক সরকারের রোষাণলে পড়ে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও রাজনৈতিক ব্যক্তি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় তথাকথিত বিচারিক প্রক্রিয়ায় ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে হয় সাজাভোগ করেছেন নয়তো কারান্তরীণ আছেন।’
তারা বলেন, দেশের গর্ব নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক প্রক্রিয়া একপেশে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অবৈধ সরকারের আক্রোশ প্রসূত। আমরা দেশের আইনজীবী সমাজ মনে করি, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমান সরকারের প্রতিহিংসা ও সরকার প্রধানের ব্যক্তিগত আক্রোশ এবং নির্মম হিংসার শিকার।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ফরমায়েশি বিচারের নামে যে বিচারিক হয়রানি তা দেশে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ণ করছে বলেও দাবি আইনজীবীদের।
আইনজীবী হিসেবে আমরা দেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা ও আইনের সঠিক প্রয়োগ চাই। আমরা দেশের সাংবিধানিক আদালতের আইনজীবীরা সরকারের এহেন ফ্যাসিস্ট আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ফরমায়েশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অবিলম্বে বন্ধের জন্য এবং সব ধরনের হয়রানিমূলক চলমান মামলা প্রত্যাহার করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সভাপতি ও সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহাবুব, ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী সই করেছেন বিবৃতিতে।
এছাড়া অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, ড. ফরিদুজ্জামান, অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল, জগলুল হায়দার আফ্রিক, রেজাউল করিম রেজা, মো. মাহবুবুর রহমান খান, আবদুল্লাহ আল মাহবুব, রফিকুল ইসলাম মেহেদী, ফেরদৌস আখতার ওয়াহিদা, কে আর খান পাঠান, মাহমুদ হাসান, ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান, অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম সুমন, শফিকুল ইসলাম সপু, ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরী, মাহদিন চৌধুরী, রেদওয়ান আহমেদ রানজীব, অ্যাডভোকেট মোহাদেস ইসলাম টুটুল, মহসিন কবির রকি, আনিসুর রহমান রায়হান.ব্যারিস্টার মরিয়ম ই খন্দকার, অ্যাডভোকেট কাজী মোস্তাফিজুর রহমান আহাদ, একেএম জামিউল হক ফয়সাল, আল ফয়সাল সিদ্দিকী, এম এরশাদ হোসেন রাশেদ, অ্যাডভোকেট মো. ইছা, আব্দুল কাইয়ুম, জুলফিকার আলম শিমুল, ফজলুর রহমান ফাহিম, মশিউর রহমান শাহীন, ইমদাদুল হানিফ, মিজানুর রহমান, রেশমা রোকাইয়া, আইনুন নাহার শিউলি, সালমা সুলতানা, বিলকিস আরা মিতু, রেজওয়ান নূর সিদ্দিকী, ফারিহা ফেরদৌসসহ ৩০১ জন আইনজীবী বিবৃতিতে সই করেছেন।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, বহির্বিশ্বের নেতারা একটা আহ্বান জানিয়েছিলেন, অনুরোধ করেছিলেন। সেটি সরকার মানলে মানতো না মানলে নেই। কিন্তু তারা কেন পাল্টা বিবৃতি দিলো? ড. ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি। এ অবস্থায় আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না। সে হিসেবে আমরা একটি বিবৃতি দিয়েছি।
বিবৃতির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে কত ঘটনা রয়েছে, অর্থপাচার, পুড়ে আহত ও নিহত গার্মেন্টস শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ না দেওয়া এবং আমরা দেখেছি এমন অসংখ্য ঘটনা। সেসবের কোনো প্রতিকার নেই। অথচ কলকারখানা অধিদপ্তরের মাধ্যমে কয়েকজন শ্রমিকের লভ্যাংশ দেওয়া হয়নি বলে দেশের সম্মানিত ব্যক্তি ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।