চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে খোলা চিঠি পাঠিয়েছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। চিঠিতে সাম্প্রতিক মানবাধিকার উদ্যোগের প্রশংসা করে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাগুলো।
চিঠিটি রোববার (১৯ অক্টোবর) হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। এতে স্বাক্ষরকারী ছয়টি মানবাধিকার সংস্থা হলো-সিভিকাস, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে), ফর্টিফাই রাইটস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট।
চিঠিতে অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রশংসা করে ছয় সংস্থা মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে ১২ দফা সুপারিশ তুলে ধরে। এর মধ্যে রয়েছে:
গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করা, মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ, র্যাব বিলুপ্ত এবং নিরাপত্তা খাত সংস্কার, গুমকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে আইন অন্তর্ভুক্ত করা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে প্যারিস প্রিন্সিপাল অনুযায়ী স্বাধীন ও কার্যকর করা। বিতর্কিত আইনসমূহ- সাইবার নিরাপত্তা অধ্যাদেশ, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন ও মানহানির ধারা- আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সংশোধন, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা ও জাতীয় তথ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক খসড়া অধ্যাদেশগুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পুনর্গঠন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার অধিকারের স্বীকৃতি দিতে হলে নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা জরুরি। সংস্থাগুলোর মতে, রাজনৈতিক দলের নিষিদ্ধকরণ প্রকৃত বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।
গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করে জাতিসংঘ যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তাতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠে আসে। এরপর বিভিন্ন মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১০ মে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয় এবং ১২ মে আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
সংস্থাগুলোর চিঠিতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, সাংবাদিকদের নির্বিচারে গ্রেফতার ও আটক থেকে মুক্তি এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা বাতিলের আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে এনজিও ব্যুরো সংস্কার এবং বিদেশি অনুদানপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করারও সুপারিশ করা হয়।
চিঠিতে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন বন্ধ করা, তাদের চলাচল, জীবিকা ও শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) রোহিঙ্গা নিপীড়ন মামলায় পূর্ণ সহযোগিতা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া আইসিসির চাহিদা অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের হস্তান্তরের আহ্বানও জানানো হয়।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ