ডিএনএ টেস্ট করে দলের নেতা নির্বাচন করা হবে

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : ভবিষ্যতে ডিএনএ টেস্ট করে দলের নেতা নির্বাচন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। এভাবে দলকে শক্তিশালী করা হলে আগামী ৫০ বছরেও কেউ বিএনপির কাছ থেকে ক্ষমতা নিতে পারবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের দাবিতে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ‘দলের নেতা নির্বাচনে ডিএনএ টেস্ট করতে হবে। ছাত্রদল থেকে আমরা নেতৃত্ব নেব। ডিএনএ টেস্ট করে নেতা নেওয়া না হলে কী হয়? তখন আমি মীর নাসির জেলে গেলে আমাকে কনডেম সেলে রাখা হয়, আর অন্যরা গেলে তারা কোরমা-পোলাও খায়। তারা কারা আর আমি কারা? আমার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কঠিন দুঃসময়ে এ দলের নেতৃত্ব নিয়েছিলেন। সেই বয়সে তিনি যে লোড নিয়েছিলেন, তার জন্য আজ বিএনপি এ পর্যায়ে এসেছে।’

‘আবারও বলছি, ডিএনএ টেস্ট করে আমরা নেতা নির্বাচন করব। লাল গেঞ্জি গায়ে দিয়ে, মাথায় হ্যাট পরে নেতা হওয়া যাবে না। নেতা হতে হলে অনেক কষ্ট করতে হবে।’

যুবদল নেতাদের উদ্দেশে মীর নাছির বলেন, ‘যুবদলের নেতাদের বলব, দলটির ৯০ শতাংশ নেতা আমার হাতে গড়া। আমি তাদের বকা দিয়েছি, শাসন করেছি, আবার আদর করেছি। এভাবে আমি তাদের গড়ে তুলেছি বলে তারা কেউ আমাকে ছেড়ে যায়নি। আমি তাদের বলব, বাই দিজ টাইম তোমরা একটা তালিকা তৈরি কর, কারা তোমাদের আর কারা ওদের?’

‘ওদের মানে আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মা। ওদের কোনোভাবেই আমাদের ভেতরে আসতে দেওয়া যাবে না। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ শুরু করি, ইনশল্লাহ ৫০ বছর বিএনপিকে কেউ ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে না, দুনিয়ায় এমন কোনো শক্তি নেই। কারণ, এ দল শহিদ জিয়ার দল, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ আর ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসীদের দল।’

তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা আমাদের ম্যাডাম সম্পর্কে যে বক্তব্যগুলো রেখেছে, সেগুলোর জবাব সে নিজেই পেয়ে গেছে। তাকে কারও তাড়াতে হয়নি, সে নিজেই পালিয়ে গেছে। আমরা রাজনীতিতে নতুন প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করব।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আয়নাঘরে কতজন বন্দি আছে সেটা কেউ জানে না। কেয়ারটেকার সরকারকে আমি অনুরোধ জানাই, আপনারা আয়নাঘরে কারা এখনও বন্দি আছে, কারা এখনও টর্চার সেলে আছে, সেটা আমাদের জানান, আমরা তাদের দেখতে চাই। আয়নাঘরে গুম হয়ে থাকা আমাদের দলের নেতাকর্মীসহ সবাইকে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দিতে হবে। কেয়ারটেকার সরকার আপনারা এসেছেন, আমরা সবাই আপনাদের সমর্থন দিচ্ছি। সমর্থন আরও গভীর থেকে গভীরতর হবে, যদি না আপনাদের দেয়া কমিটমেন্ট আপনারা পালন করেন।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণের রায় বাস্তবায়নের জন্য একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করা দরকার। আপনারা আপনাদের ক্ষমতায় থাকাকালীন অবস্থায় একটা অধ্যাদেশ আনবেন যে, আগামী নির্বাচনও কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে হবে। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বললে আওয়ামী লীগের গা চুলকানি শুরু হয়। এই গা চুলকানি বন্ধ করার জন্য আমরা অন্তত দুইটি নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে করতে চাই। এর মধ্যে যেসব আইন সংস্কার দরকার, সেগুলো আপনারা সংস্কার করে নেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা রাজনীতি-প্রশাসন ভালো বোঝেন, তাদের সরকারে রাখুন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়, সেই বিধান রাখবেন। ছাত্রদের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তারা আন্দোলন করে, রক্ত দিয়ে জাতির ওপর থেকে যে বিশাল বোঝা, সেটা সরিয়ে দিয়েছে, শেখ হাসিনাকে আজ পালিয়ে যেতে হয়েছে। কারণ, তিনি মানুষকে মানুষ বলেননি, তার ওপরে কেউ নাই, সব নাকি তার কথায় চলবে। আল্লাহ বলে সবুর লও, তোমাকে সুযোগ দেব না, সেজন্য তাকে সেভাবে বিদায় নিতে হয়েছে।’

ছয় বছর পর রাজনীতির মাঠে ফিরেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ৩২টি মামলা ও তিন বছরের সাজা নিয়ে দুবাই চলে গিয়েছিলেন। সরকার পতনের পর গত ১০ আগস্ট প্রবাস জীবন থেকে দেশে ফিরে আসেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে নগরীর কাজির দেউড়ির নসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উদ্যেগে আয়োজিত সমাবেশের মধ্য দিয়ে প্রকাশ্যে আসেন তিনি।

সমাবেশে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘ ছয় বছর পর একটি মঞ্চে উঠে মাইক ধরার সুযোগ পেয়েছি। যখন চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে ইমিগ্রেশন পার হলাম তখনও আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমি আদৌ কি বাংলাদেশে এসেছি, নাকি অন্য কোথাও পৌঁছে গেছি। স্বল্প সময়ের মধ্যে এ স্বৈরাচারের পতন কীভাবে হলো আমার এটা বিশ্বাস হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘আমার ছোট ছোট সন্তানরা রাস্তায় নেমেছে, গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাদের হাজারো সালাম জানাই। আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে তাদের কাছে। যারা ন্যায় বিচারে বিশ্বাস করে তারাই এভাবে গুলির সামনে এগিয়ে যেতে পারে। পিছপা হয় না।’

স্বাধীনতা ভোগ করতে হলে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে জানিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘দেশ আবার স্বাধীন হলো। এ স্বাধীনতা ভোগ করতে হলে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। আজ ১৫ আগস্ট। আমি যদি সরকারে থাকতাম তাহলেও এ ছুটি বন্ধ করতে পারতাম না। এটা শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য। তাদেরও হাজারো সালাম জানাই। ১৫ আগস্ট এ নাকি অনেকে গিয়ে ধানমন্ডি ৩২ এ গিয়ে ডিস্কো ডান্স করেছে।’

‘৫০ বছর পর এসব তরুণ-তরুণীরা ইতিহাস লেখবে। কে বেঈমান ছিল, আর কে দেশপ্রেমিক ছিল সেটা অবশ্যই লিখে যাবে। লিখে যাবে কোনো সেনাপতি যুদ্ধের ঘোষণা করে শত্রুর শিবিরে আত্মসমর্পণ করে না। সে নজির শেখ মুজিব করে গিয়েছিল। সেটা অপ্রিয় সত্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘মিথ্যা কথার আশ্রয় নিতে নিতে শেখ হাসিনা আজ কোথায় চলে গেছে। আওয়ামী লীগের কেউ টেরও পায়নি যে শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে পালিয়ে যাচ্ছে। এ হলো তাদের রাজনীতি। তারা বলেছিল, তাদের পরিবর্তে কে? এখন দেখছেন তো আপনাদের পরিবর্তে কে। দিল্লি থেকে দূরবীন দিয়ে দেখে নিন আপনার পরিবর্তে কে। আমরা সকলেই আজ তোমার পরিবর্তে এখানে উপস্থিত আছি।’

বিএনপিকে ভাঙ্গার জন্য অনেক অপচেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে গিয়াসউদ্দিন কাদের বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে জাতীয়তাবাদী দল বলে আসছে এ দেশ দুইটি শিবিরে বিভক্ত। বাংলাদেশ জিন্দাবাদের শিবির অমর হয়ে থাকবে এ দেশের মাটিতে। জয় বাংলার শিবিরের কবর হতেই হবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম থেকে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ স্লোগান তুলেছিল।’

‘এটার কোনোদিন মৃত্যু হবে না। এ বিএনপিকে ভাঙ্গার জন্য অনেকে অপচেষ্টা করা হয়েছে। ভাঙ্গতে পারেনি। উলটো তাদের কোমর ভেঙ্গে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অহংকার পতনের মূল। সকাল হলে রাত হবে। সূর্য অস্ত যাবেই। তারা মনে করেছিল সূর্য উঠেছে আর অস্ত যাবে না। সব অহমিকা তাদের ধূলিসাৎ হয়ে গেল। উনি যখনই বলেছেন উনার কাজের ছেলে ৪০০ কোটির মালিক। সেদিনই তার প্রধানমন্ত্রীত্ব চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি থেকেছেন। জনগণের ক্ষমতা নয় ভারতের মোদির জেরে।’

প্রধান বক্তার বক্তব্য মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। সে বিগত ১৫ বছরে গুম, খুন, হামলা মামলা দিয়ে নির্যাতন করেছে। তার হাত রক্তে রঞ্জিত। শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। সে বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায় ভাবে বন্দী করে রেখেছিল। তারেক রহমানকে সাজা দিয়ে দেশে আসতে দেয় নাই। আমরা বলতে চায়, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অনুরোধ করবো, রাষ্ট্র সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। জনগণ ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে।

বিশেষ বক্তার বক্তব্যে মীর হেলাল বলেন, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকসহ রাষ্ট্রের সকল কাঠামোকে ধবংস করেছে। দেশকে দেউলিয়া করে ফেলেছে। ছাত্র জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার থেকে দেশবাসী মুক্তি পেলেও ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এই অর্জিত স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও দেশে অরাজকতা ও ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট করছে। তাই কোনো দুষ্কৃতকারী যাতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। দেশকে পরিকল্পিতভাবে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তকে প্রতিহত করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে এরশাদ উল্লাহ বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে গেলেও এখনো তাদের ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়নি। ৫ আগষ্টের পর থেকে একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। তাই আমাদের দলকে সুসংগঠিত করে শক্তিশালী করতে হবে। কারণ এখনো আমাদের পরিপূর্ণ বিজয় আসেনি। যেদিন আমরা নির্বাচনে জয় লাভ করবো সেদিনেই আমাদের পরিপূর্ণ বিজয় হবে। তাই আমাদেরকে পরিচ্ছন্ন রাজনীতি উপহার দিতে হবে। জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ এম নাজিম উদ্দীন বলেন, বাংলাদেশটা আমাদের সবার। এ দেশ আমাদেরই গড়তে হবে। কেউ যেন কোনো নির্যাতন নিপীড়নের শিকার না হন। যে কোনো অপপ্রচার ও অপচেষ্টার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামবাসীকে সচেতন থাকতে হবে।

নাজিমুর রহমান বলেন, হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশের জনগণ আরেকটি বিজয় দেখেছে। তাই কেউ দয়া করে প্রতিহিংসা প্রতিশোধে লিপ্ত হবেন না। এমনকি কেউ বিএনপির নাম ব্যবহার করে কোনো অপকর্ম করলে তাঁকে ধরে আইনের হাতে তুলে দিন। বিএনপির কোন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে তাহলে আমাদের জানালে আমরা তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, নগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এম এ আজিজ, যুগ্ম আহবায়ক সৈয়দ আজম উদ্দীন, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারন সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলম, সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন প্রমুখ।

চাটগাঁ নিউজ/এআইকে

Scroll to Top