ট্রেন চলাচল বন্ধে টিকেট কাটা যাত্রীদের চরম ভোগান্তি

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য টিকেট কাটলেও তাদের অনেকেই ক্লান্ত মনে ফিরে যাচ্ছেন বাসায়। আবার কেউ কেউ গন্তব্যে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দেয়া বিআরটিসির বাসে করে।

অন্যদিকে, চলমান কর্মবিরতির কারণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ক্রয়কৃত টিকেট ফেরত নেয়ারও ব্যবস্থা করেছে। এতে করে অগ্রিম টিকেট কাটা যাত্রীদের কেউ কেউ রেলের টিকেট ফেরত দিয়ে সড়কপথে যাতায়াতের ব্যবস্থা করছেন।

রেলওয়ে রানিং স্টাফদের ঘোষিত দেশব্যাপী কর্মবিরতি কর্মসূচির কারণে সোমবার ২৭ জানুয়ারি মধ্যরাতের পর থেকেই সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে রয়েছে। এর প্রভাব চট্টগ্রামের রেল নেটওয়ার্কেও পড়েছে। এ কারণে চট্টগ্রামের পাঁচটি ট্রেনের শিডিউল বাতিল হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, কর্মবিরতির খবর না জানা অনেক যাত্রীই ট্রেনের অপেক্ষায় স্টেশনে অপেক্ষা করছেন।

সরেজমিনে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম নতুন রেলওয়ে স্টেশনে কিছু বগি ও ইঞ্জিন দাঁড়িয়ে আছে। তবে এই স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের কোনো যাত্রীকে খুব একটা দেখা যায়নি। যারা এই কর্মবিরতির খবর আগে থেকে জানতেন না তাদের হাতেগোণা কয়েকজন স্টেশনে এসেছেন।

পরিবার নিয়ে কুমিল্লা যাবেন বলে অগ্রিম টিকেট কেটেছিলেন মো. আবদুল মালেক। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ভাইজির বিয়াতে বাড়িত যাওয়ার লাইগ্যা গত সপ্তাহে টিকেট কাটছিলাম। গতকাল থেকে ট্রেন বন্ধের বিষয়টি আমরা জানতাম না। স্টেশনে আইসা জানছি, ট্রেন চলতাছে না। এহন মাইকে শুনতাছি বিআরটিসির বাস দিছে। দেখি, বাসে কইরা কুমিল্লা যাওন লাগবো।

স্টেশনে আসা জাহেদ হোসেন নামে এক যাত্রী জানান, তিনি এই ধর্মঘটের খবর জানতেন না, ট্রেনে ঢাকা যাওয়ার জন্য রাতে স্টেশনে এসেছেন। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় মহাদুর্ভোগে পড়েছেন। স্টেশনেই নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন তিনি।

মোবারক হোসেন নামে আরেক যাত্রী এ সময় বলেন, চাঁদপুর যাওয়ার জন্য ভোরে স্টেশনে এসেছি। কিন্তু শীতের সকালে কষ্ট করে স্টেশনে এসে জানতে পারলাম কোনো ট্রেন চলাচল করছে না। ফলে স্টেশনেই সময় কাটাচ্ছি।

এদিকে, রেলের বিকল্প হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ রেল রুটগুলোতে যাত্রী পরিবহনের জন্য বিআরটিসির বাস সার্ভিস চালু করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকীর পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির পরিপ্রেক্ষিতে আজ (মঙ্গলবার) সারাদেশে রেল যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে রেলের বিকল্প হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ রেলরুটে যাত্রী পরিবহনের জন্য বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ও বিমানবন্দর রেলস্টেশন হতে চট্রগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, কুমিল্লা, বগুড়া ও ময়মনসিংহগামী যাত্রীরা তাদের ক্রয়কৃত রেলটিকিটে বিআরটিসি বাস সার্ভিসের মাধ্যমে ভ্রমণ করতে পারবেন। এসব স্থান হতে ঢাকাতে এই সার্ভিসের মাধ্যমে আসতে পারবেন। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এই বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু থাকবে।

তবে বিআরটিসি’র বাস সার্ভিস সহযোগিতা চালু করা হলেও অগ্রিম টিকেট কাটা যাত্রীদের ভোগান্তি কমার তেমন সম্ভাবনা নেই। কেননা ট্রেনে যাতায়াতকারী যাত্রীদের গন্তব্য সাধারণত রেল স্টেশনের কাছাকাছি এলাকা। এক্ষেত্রে রেলওয়ের কাছ থেকে সড়ক পথে যাতায়াতের সুবিধা পেলেও নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে তাদের অর্থ ও হয়রানি কমছে না-এমন অভিযোগ যাত্রীদের।

তবে কর্মবিরতির এ অবস্থায় অগ্রিম টিকেট কাটা যাত্রীদের কাছ থেকে টিকেট ফেরত নেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে আসা অনেক যাত্রীকে কাউন্টারে এসে টিকেট ফেরত দেখা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ রেলওয়ে, চট্টগ্রাম, ফারহান মাহমুদ চাটগাঁ নিউজকে বলেন, রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে সারাদেশে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে করে যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। স্টাফদের দাবি-দাওয়া পূরণের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার।

উল্লেখ্য, মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন দেওয়া এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার রাত ১২টার পর থেকে কর্মবিরতি ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন। সমস্যার সমাধানে সোমবার ঢাকার কমলাপুরে আন্দোলনকারী রানিং স্টাফদের সঙ্গে বৈঠক করেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তবে বৈঠকে কোনো সমাধান আসেনি। বৈঠক থেকে বের হয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি 

Scroll to Top