নিজস্ব প্রতিবেদক : রেলওয়ের এসএসএই/ওয়ে/চট্টগ্রাম দপ্তরের টাইম কিপার মো. হাবিবুল্লাহ বকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। অস্থায়ী কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করার ভয় দেখিয়ে বেতন কেটে নেওয়া, রেলের মালামাল চুরিতে সহায়তা করা ও সরকারি বাসায় মাদকসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার মত গুরুতর অভিযোগ ওঠেছে।
রেলের এই কর্মচারির বিরুদ্ধে একের পর এক অসংখ্য অভিযোগের পরও বহাল তবিয়তে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন ফ্রি স্টাইলে। আর রেল কর্তৃপক্ষ যেন তার কোন অপরাধই দেখতে পাচ্ছেন না- এমন ভান করছেন।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৬ এপ্রিল রাতে পাহাড়তলী লোকোশেডে স্লিপার কাঠ ভর্তি একটি ট্রাক আটক করা হয়। তদন্তে জানা যায়, এই ঘটনায় বকুলের সরাসরি সহায়তা ছিল। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বরং এ ঘটনায় চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানায় যে মামলাটি করা হয় তাতে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। এর একমাত্র কারণ ছিল টাইম কিপার বকুলকে রক্ষা করা।
প্রতিবেদকের তদন্তে দেখা গেছে, কাঠ চুরির ঘটনায় ব্যবহৃত রোড পাশটি বকুলের স্বাক্ষরেই ইস্যু করা হয়েছিল। রোড পাশটিতে উল্লেখ ছিল, বিভাগীয় প্রকৌশলী-১/চট্টগ্রাম মহোদয়ের নির্দেশক্রমে অকেজো কাঠের স্লীপার সরবরাহ করা হয়েছে।
তবে এ চুরির বিষয়ে তৎকালীন উর্ধ্বতন উপ সহকারী প্রকৌশলী/পথ ও স্লীপার চুরির মামলার বাদি উপ-সহকারী প্রকৌশলী গোলাম সরওয়ার টাইম কিপার মো. হাবিবুল্লাহ বকুলের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, বকুলের স্বাক্ষর নকল ছিল এবং কেউ তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
এদিকে, এলাকাবাসীর অভিযোগ, বকুল রেলের সরকারি বরাদ্ধকৃত বাসায় মাদক ও পতিতা ব্যবসা চালাচ্ছে। এ নিয়ে এলাকার লোকজন বিভিন্ন জায়গায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও তিনি তোয়াক্কা করছেন না। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপকের দপ্তরে অভিযোগ জানানো হলেও বকুলকে থামানো যাচ্ছে না। এখনো অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, বকুল সরকারি বাসায় মাদক ও পতিতার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন, যা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য লজ্জাজনক পরিস্থিতি তৈরি করছে। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও রেল কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
এদিকে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির ২ তারিখ তার বদলির অর্ডারের এক মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও তিনি পূর্ব পদেই বহাল রয়েছেন। তাকে সরাবার জোর যেন কারোই নেই। এতো অপরাধের পরও কেন তার শাস্তি হচ্ছে না, তার খুঁটির জোর কোথায়? এমন প্রশ্ন তুলেছেন রেল সংশ্লিষ্ট অনেকে।
বকুলের বদলির বিষয়ে জানতে এসএসএই/ওয়ে/চট্টগ্রাম দপ্তরের ইনচার্য উর্ধ্বতন উপ সহকারী প্রকৌশল/পথ রিটন চাকমার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে টিএলআর কর্মচারী সংগঠনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, অস্থায়ী কর্মচারীরা রেলওয়েতে খুব কষ্টের সাথে কাজ করেন। এতো এতো প্রতিকূলতার পরও স্বাভাবিক ট্রেন চলাচলের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। অথচ টাইম কিপার হাবিবুল্লাহ বকুল টিএলআর কর্মচারীদের বেতন কম দিচ্ছেন, যা গুরুতর অন্যায়। আমরা সাংগঠনিকভাবে বিষয়টি নিয়ে মাননীয় মহাপরিচালক ও সচিব মহোদয়ের সাথে আলোচনা করবো। আমরা তার নানা অপরাধের দ্রুত শাস্তির দাবি করছি।
টিএলআর কেন্দ্রীয় শ্রমিক প্রতিনিধি মো. শাওন বলেন, আমরাদের কর্মচারীরা নামমাত্র বেতন পায়, তাও প্রতি মাসে নয় ৫-৬ মাস পরপর। তা আবার আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করতে হয়। শুনেছি বকুল আমাদের কষ্টে অর্জিত সেই টাকা আত্মসাৎ করছে। আমরা সকল টিএলআর কর্মচারীদের পক্ষ থেকে তার দৃষ্টান্ত শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।
তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টাইম কিপার মো. হাবিবুল্লাহ বকুল বলেন, এই সব অভিযোগ মিথ্যা, একটি পক্ষ আমার নামে ষড়যন্ত্র করছে। যদি আমি অপরাধী হতাম তবে আমার কর্মকর্তারা এতো দিনে আমার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিত।
বদলির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার বদলির অর্ডার এসেছে, তবে অমার কর্মকর্তা রিলিজ না দিলে তো আমি যেতে পারবো না। আমার যাওয়া না যাওয়া আমার কর্মকর্তার উপর নির্ভর করে।
চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/এসএ