সিপ্লাস ডেস্ক: আটলান্টিক মহাসাগরে ট্যুরিস্ট সাবমেরিনে করে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া পাঁচ সদস্যের পর্যটক দলে আছেন দুই পাকিস্তানি ব্যবসায়ীও। সাবমেরিনটি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ওশানগেট জানায়, দক্ষিণ-পূর্ব কানাডার উপকূলে নিখোঁজ হয় জলযানটি।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডন জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যে বসবাস করা পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ ও তার ছেলে এ সাবমেরিনে ছিলেন।
দাউদ পরিবার এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে, পরিবারের দুই সদস্য অভিযানে ছিলেন এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বন্ধু ও সহকর্মী যারা নিখোঁজ হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তাদের প্রতি আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। নিখোঁজদের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করতে সবাইকে অনুরোধ করছি।
শাহজাদা দাউদ অলাভজনক গবেষণা সংস্থা সেতি ইন্সটিটিউটের একজন ট্রাস্টি। তিনি ২০০৩ সালে এনগ্রো কর্পোরেশনের বোর্ড সদস্য হন এবং বর্তমানে এর ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের মতো গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ভূমিকা রাখেন শাহজাদা দাউদ। তার নিজের নামেও একটি ফাউন্ডেশন আছে। দাউদ হারকিউলিস কর্পোরেশন এবং দাউদ লরেন্সপুরসহ দাউদ গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিচালকও তিনি।
ওশানগেট সোমবার (১৯ জুন) এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানায়, সাবমেরিনে থাকা ব্যক্তিদের জীবিত উদ্ধারে সম্ভাব্য সব প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।
মার্কিন কোস্টগার্ড জানিয়েছে, সাবমেরিনে একজন পাইলট ও চার যাত্রী ছিল। সাবমেরিনটি ৯৬ ঘণ্টা পানির নিচে থাকতে সক্ষম। তবে এখনো স্পষ্ট নয় যে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সময় সেটি পানির নিচে ছিল নাকি উপরে।
কোস্টগার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মাগার বলেন, উদ্ধার অভিযানে যুক্ত যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার জাহাজ ও বিমানগুলো ৯০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। ১৩ হাজার ফুট পানির নিচে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম এমন প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হচ্ছে।
জন মাগার বলেন, ‘এটি একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং সেখানে অনুসন্ধান চালানো একটি চ্যালেঞ্জ।’ উদ্ধার অভিযানী বাণিজ্যিক জাহাজও কাজ করছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, সাবমেরিনে থাকা বাকি তিন যাত্রী হলেন, ব্রিটিশ ধনকুবের হামিশ হার্ডিং ও ফরাসি নৌবাহিনীর সাবেক কমান্ডার পল-হেনরি নারজিওলেট ও ওশানগেটের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী স্টকটন রাশ। তিনি নিজে একজন প্রশিক্ষিত পাইলট।
হামিশ হার্ডিংয়ের সৎ ছেলে ফেসবুকে তার বাবার সাবমেরিনের থাকার খবর জানান। তবে পারিবারিক গোপনীয়তা রক্ষায় তিনি পরে পোস্ট সরিয়ে ফেলেন।
হামিশ হার্ডিং নিজেও সাবমেরিনে উঠবেন বলে জানিয়েছিলেন ফেসবুকে। এটাই ছিল তার সর্বশেষ ফেসবুক পোস্ট।
পল-হেনরি নারজিওলেট নৌবাহিনী ছাড়ার পর যোগ দেন ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অ্যান্ড এক্সপ্লয়েটেশন অফ দ্য সি-তে। তিনি বিশ্বব্যাপী এমন অনেক ব্যাতিক্রমী অভিযানে যোগ দেন। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার মিশনও ছিল তার একটি।
ওশানগেট তাদের বিবৃতিতে জানায়, সাবমেরিনের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপনে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও গভীর সমুদ্রে কাজ করা কোম্পানি থেকে যে অকুণ্ঠ সহায়তা পেয়েছি আমরা তার জন্য কৃতজ্ঞ।
সাবমেরিনটির অভিযান বৃহস্পতিবার (২২ জুন) শেষ হওয়ার কথা। চলতি বছরে এটি ওশানগেটের পঞ্চম মিশন ছিল।
ওশানগেটের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, অভিযানে যেতে প্রত্যেক যাত্রীকে গুনতে হয় আড়াই লাখ ডলার। নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জনস থেকে শুরু হয় যাত্রা। সেখান থেকে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের দূরত্ব প্রায় ৬৪০ কিলোমিটার।