জুলাই অভ্যুত্থানের নারীরা কেন দৃশ্যমান না— চট্টগ্রাম সংলাপে প্রশ্ন

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকলেও পাঁচ আগস্টের পর তারা কেন দৃশ্যমান না– চট্টগ্রামে এক মুক্ত সংলাপে এমন প্রশ্ন উঠে এসেছে।

সংলাপে বক্তারা বলেন— এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি। কারণ, নারী ও তরুণদের অংশগ্রহণ ছাড়া প্রকৃত রাজনৈতিক পরিবর্তন সম্ভব নয়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী ও তরুণদের ভূমিকা নিশ্চিত করা, দুর্নীতি রোধ এবং জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে তরুণদের অংশগ্রহণ জোরদার করা সময়ের দাবি।

আজ শনিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে: রাজনৈতিক পরিসরে নারী এবং তরুণদের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।

নেদারল্যান্ড দূতাবাসের সহযোগিতায় ‘রাজনীতিতে নারী ও যুবাদের ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক চলমান প্রকল্পের অংশ হিসেবে এ সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চট্টগ্রামের নেতারা তাদের মতামত তুলে ধরেন।

সিজিএস-এর সভাপতি জিল্লুর রহমান এর সঞ্চালনায় সংলাপে অংশ নেন— চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন, সাবেক এমপি ও মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির শাহজাহান চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপমন্ত্রী মনি স্বপন দেওয়ান, গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমি, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রধান সমন্বয়কারী জুবাইরুল হাসান আরিফ ও সিপিবি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি অশোক সাহা।

বিএনপি নেতা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, নারীর অধিকার রক্ষায় সকল রাজনৈতিক শক্তির ঐক্য প্রয়োজন। আগামী নির্বাচনে আগের চেয়ে আরও বেশি নারী প্রার্থী দেখা যাবে। গত ১৬ বছরে বিএনপির ভেতরে অনেক নারী রাজনৈতিক পরিচিতি গড়ে তুলেছেন। আমরা চাই তাদের পূর্ণাঙ্গ নেতৃত্বে রূপান্তরের সুযোগ দিতে।

বিএনপি সাংগঠনিকভাবে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ভালো মেয়েরা রাজনীতি করে না— এ ধারণা এখন বদলাচ্ছে, যা আমাদের গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক।

চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, দেশের প্রায় সব ঐতিহাসিক আন্দোলনে নারীরা সক্রিয় ছিলেন, কিন্তু মূলধারার রাজনীতিতে তাদের প্রকৃত অন্তর্ভুক্তি ঘটেনি। এটা অবশ্যই বদলাতে হবে। গণতন্ত্র আগে নাকি নারীর অংশগ্রহণ আগে, এ বিভাজনের দরকার নেই। দুটি বিষয় সমান্তরালভাবে এগিয়ে নিতে হবে।

গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমি বলেন— আন্দোলনের সময় সাহসী নারী যারা ভাইদের গ্রেপ্তার থেকে রক্ষা করেছেন, তারা এখন কেন অনলাইনে হয়রানির শিকার? গত ১৫ বছর নারীদের জন্য রাজনীতি ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। এখনো পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলায়নি। নারীশক্তিকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আনতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি অশোক সাহা বলেন, জুলাই আন্দোলন বৈষম্যবিরোধী তরুণদের প্রতিবাদ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত। এবার তরুণদের অংশগ্রহণ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ছিল। দীর্ঘদিনের পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতি এক ধরনের রাজনৈতিক ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যতদিন না আমরা নারীবিদ্বেষ এবং আদিবাসীদের প্রতি ঘৃণার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো, ততদিন ঐক্য সম্ভব নয়। এখন যুক্ত হয়েছে সাইবার হয়রানি— এই ঘৃণা দূর না হলে কার্যকর গণতন্ত্র স্থাপিত হবে না।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার প্রধান সমন্বয়কারী জুবাইরুল হাসান আরিফ বলেন, এনসিপি সর্বোচ্চ পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা এমন একটি প্রস্তাব দিয়েছি, যাতে ১০০টি সংসদীয় আসনে শুধু নারীরা সরাসরি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো এখনো বুঝতে পারেনি, আন্দোলনের পর সমাজ কতটা বদলে গেছে। তাদের অবস্থান এখনো নারী ও তরুণদের দাবির থেকে অনেক দূরে।

সংলাপে উপস্থিত প্রায় ২০০ তরুণ, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশার মানুষ সরাসরি প্রশ্ন করেন নেতাদের উদ্দেশ্যে। তারা বলেন—সংরক্ষিত আসন কি প্রকৃত অংশগ্রহণের বিকল্প? এআই প্রযুক্তির ঝুঁকিতে নারীর অবস্থান কী? আন্দোলনের সময় নারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছিলেন, এখন কেন তাদের আহ্বান করতে হয়? ৫ আগস্টের পর নারী সহিংসতা কেন বেড়েছে?

এই সংলাপটি ছিল তরুণ নাগরিকদের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্ম, যার উদ্দেশ্য ছিল জ্যেষ্ঠ রাজনীতিকদের সঙ্গে তরুণদের মুক্ত আলোচনা, অংশগ্রহণমূলক শাসন, স্বচ্ছতা এবং প্রজন্মগত বোঝাপড়াকে উৎসাহ দেওয়া।

চানি/জেএইচ

Scroll to Top