জিমনেসিয়াম মাঠেই ফিরে আসছে একুশে বইমেলা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) আয়োজিত আলোচিত অমর একুশে বইমেলা আবার তার পুরোনো গন্তব্যে ফিরে আসতে চলেছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) চসিক সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত অমর একুশে বইমেলা আয়োজনের এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের নেতৃবৃন্দ মেয়রকে পূর্বের ভেন্যূ জিমনেসিয়াম মাঠেই এবারের বইমেলা আয়োজনের প্রস্তাব দেন।

জবাবে মেয়র জিমনেসিয়াম মাঠে মেলা আয়োজন এবং মেলার ব্যাপ্তী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

তিনি বলেন, বইমেলাকে সফল করতে এবং পুরস্কার বিজয়ীদের তালিকা নির্ধারণের জন্য কয়েকটি উপ-কমিটি গঠন করা হবে। এসব কমিটি সঠিকভাবে কাজ করলেই বইমেলা সার্থকভাবে আয়োজন করা সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বইমেলার সাফল্যের জন্য প্রয়োজন সকলের সমন্বিত প্রয়াস। একমাত্র সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আমরা একটি সফল, প্রাণবন্ত এবং স্মরণীয় বইমেলা উপহার দিতে পারব।

তিনি বলেন, চসিকের আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের বইমেলায় সম্পৃক্ত করতে হবে। এর মাধ্যমে তারা বইয়ের প্রতি আগ্রহী হবে এবং জ্ঞানের জগতে প্রবেশের সুযোগ পাবে। আমরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের মেলা পরিদর্শন এবং বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেব। বইমেলা হবে তাদের জন্য একটি নতুন অভিজ্ঞতার দ্বার উন্মোচন। বইমেলা শুধু বই কেনা-বেচার জায়গা নয়; এটি একটি চর্চার কেন্দ্র, যেখানে নতুন প্রজন্মকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করা সম্ভব। বই জ্ঞান ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে বিধায় তরুণ প্রজন্মকে মাদক, মোবাইল আসক্তি, কিশোর গ্যাং কালচার থেকে দূরে রেখে নৈতিক চিন্তাসমৃদ্ধ হিসাবে গড়ে তুলতে চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের বইমেলায় সম্পৃক্ত করব। প্রকাশকদের প্রস্তাবসমূহ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে।

প্রস্তুতি সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রকাশক ডা. মাহফুজুর রহামন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু, চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন, কবি ও প্রকাশক রাশেদ রউফ, মুহাম্মদ শামসুল হক, চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি মো. সাহাব উদ্দীন হাসান বাবু, সাধারণ সম্পাদক আলী প্রয়াস, কবি ও প্রকাশক রুহু রুহেল, চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সহ-সভাপতি রেহেনা চৌধুরী, মিজানুর রহমান শামীম, প্রকাশক ফারহানা রহমান শিমু, মঈন ফারুক, মুহাম্মদ নুরুল আবসার, গাজী মুহাম্মদ জাহেদ, এম জসিম উদ্দিন, লিটন শীল, শামসুদ্দীন শিশির, ওমর ফারুক, আরিফ রায়হান, শিফা রাসেল, মো: শহিদুল করিম চৌধুরী, সুব্রত কান্তি চৌধুরী, একরাম আজাদ, নিয়াজ মো: শিহাদ, মনিরুল মনির, গোফরান উদ্দীন টিটু, ড. সৌরভ শাখাওয়াত, মুহাম্মদ আজিম উদ্দীন, আবু নাছের মুহাম্মদ তৈয়ব আলী, আফছার উদ্দিন লিটন, মিনহাজুল ইসলাম মাসুম।

চসিক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় আগে বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বিচ্ছিন্ন ভাবে কয়েকটি বই মেলা অনুষ্ঠিত হত। তবে সমন্বয়হীন ভাবে অনুষ্ঠিত এসব বইমেলা নিয়ে নানামুখী আলোচনা সমালোচনা ছিল। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের উদ্যোগে সকল আয়োজকদের সমন্বিত করে বৃহত্তর পরিসরে চসিকের আয়োজনে একটি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম বারের মত চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার জিমনেসিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত হয় চসিকের এই ‘অমর একুশে বইমেলা’। তার আমলে বরাবরই জিমনেসিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্মিলিত অমর একুশে বইমেলা। এরপর প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের ছয় মাস মেয়াদে বইমেলা হয়নি। এরপর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চসিকের মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২১ সালে করোনা মহামারীর কারণে চসিকের বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। এই ধারাবাহিকতায় ২০২২ ও ২০২৩ সালে জিমনেসিয়াম মাঠেই অনুষ্ঠিত হয় বইমেলা।

তবে এর পর শুরু হয় অমর একুশে বই মেলার ভেন্যু নিয়ে রাজনীতি। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সাথে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সাথে স্নায়ুদ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই দ্বন্দ্বের যাতাকলে পড়ে পরিবর্তিত হয়ে যায় চসিকের বইমেলার ভেন্যু। কেননা আ জ ম নাছির উদ্দীন আবার সেইসময় চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছিলেন। যার কারণে জিমনেসিয়াম মাঠের কর্তৃত্ব ছিল আ জ ম নাছির ‍উদ্দীনের কব্জায়। এসময় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও ক্রীড়া অধিদপ্তরের নির্দেশনায় চসিক অমর একুশে বইমেলার ভেন্যু সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়।  রেজাউল করিম চৌধুরীকে চসিকের এই বইমেলা আয়োজন করতে হয় সিআরবি শিরীষ তলায়। ২০২৪ সালে প্রথম বারের মত চসিকের বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় এখানে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ডা শাহাদাত হোসেন মেয়র হন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের। এবার সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে মেয়র শাহাদাত হোসেন এবার চসিকের বইমেলার ভেন্যু আবার সিআরবি থেকে আবার জিমনেসিয়াম মাঠে ফিরিয়ে আনায় উদ্যোগী হয়েছেন।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি 

Scroll to Top