জরাজীর্ণ মাটির ঘরে বসবাস, নেই কোন সম্বল বিধবার

কাপ্তাই প্রতিনিধি: কাপ্তাই উপজেলাধীন রাইখালী ইউনিয়নের লেমুছড়ি পাড়ার বাসিন্দা নির্মলা। দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবৎ জরাজীর্ণ মাটির ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে অসহায় বিধবা নির্মলা ভট্টাচার্য্যের (৫০) পরিবার। কয়েক বছর পূর্বে ঘূর্ণিঝড়ে গাছ পড়ে ঘরটির অর্ধেক ভেঙে যায়। এতে ঘরটির ব্যাপক ক্ষতি হলেও হতদরিদ্র পরিবারটি পুনরায় ঘরটি আর মেরামত করতে পারেনি। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসহায় বিধবা নির্মলা ভট্টাচার্য্যের পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের ভিতরে বেহাল দশা। ছোট্ট ঝুপড়ি ভাঙ্গাচুরা একটি মাটির ঘরের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। চালের টিনগুলোর বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। দেওয়ালের মাটি আলগা হয়ে আছে। যেকোন মুহুর্তে ঘরটি ভেঙে পড়ে প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। নিরুপায় নির্মলার পরিবার ঝুঁকি জেনেও থাকতে হচ্ছে ওই ঘরে।

কেন ঝুঁকি নিয়ে ঘরটিতে বসবাস করছেন জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কন্ঠে বিধবা নির্মলা জানান, মানুষের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে সামান্য টাকা আয় করি। যা আয় করি তাতে সংসার খরচে সব চলে যায়। কীভাবে আর এই ঘর মেরামত করবো, বাধ্য হয়ে এই ভাঙা ঘরে ঝুঁকি নিয়েই থাকতে হচ্ছে। ঝড়-তুফান শুরু হলে ঘরটিতে আর থাকার উপায় থাকেনা। তখন ঠাঁই হয় কারও বাড়ির বারান্দায়।

তিনি জানান, আশ্রয়ন প্রকল্পের নতুন ঘর পাওয়ার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। অনেকেই আশা দিলেও আমার আর ঘর পাওয়া হয়ে উঠেনি। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, আমাদের মতো কত অসহায় আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পায়, জমি পায়, অথচ আমি এত কষ্টে জীবন যাপন করেও একটি ঘর কিংবা কোন সহযোগীতা পেলাম না। স্বামীর দেওয়া এক টুকরো জমি আর এই ভাঙাচুরা এ ঘর ছাড়া সম্বল বলতে আমার আর কিছু নেই।

নির্মলার কাছে তার পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রায় ৩১ বছর আগে স্বামী হরেন্দ্র ভট্টাচার্য্য পরপারে চলে যান। ওইসময় গর্ভে ছিল তিন মাসের কন্যা সন্তান। এরপর থেকে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে জীবন সংগ্রাম শুরু করেন তিনি। এদিকে মেয়েকে বিয়ে দিয়েও মেয়েটির স্বামীর সংসারে সুখ জুটেনি। মেয়ের ঘরে দুটি ছেলে থাকলেও স্বামীর সাথে আর সংসার করতে পারেনি তার(নির্মলার) মেয়ে। বর্তমানে দুই নাতি, আর একমাত্র মেয়েকে নিয়ে কোন রকমে খেয়ে নাখেয়ে ওই ঝুঁপড়ি ঘরে বসবাস করছেন তিনি।

এ বিষয়ে রাইখালী ইউপি চেয়ারম্যান মংক্য মারমা জানান, নির্মলা আসলেই খুবই অসহায় ভাবে জীবনযাপন করছে। বর্তমানে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দের ক্ষেত্রে যার জমি ও ঘর নেই তাদের আগে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু নির্মলার কিছুটা জমি রয়েছে, তাই আগামীতে যদি আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেওয়া শুরু হয় তবে আমি অবশ্যই নির্মলাকে একটি ঘর পাওয়ার জন্য সহযোগীতা করব।

 

চাটগাঁ নিউজ/এমএসআই

Scroll to Top