সরোজ আহমেদ : বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষে লালদীঘির মাঠ ঘিরে জমে উঠেছে তিন দিনের বৈশাখী মেলা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) এই মাঠে অনুষ্ঠিত হবে ১১৫ তম ঐতিহাসিক জব্বারের বলি খেলা।
তিন দিনের মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য, বিশেষ করে হস্তশিল্প প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য অস্থায়ী দোকান বসিয়েছেন। চট্টগ্রাম জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহের কারণে প্রচণ্ড গরমে প্রথম দিনে মেলায় দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল খুবই কম। তবে মেলার পরের দুই দিন সন্ধ্যায় দর্শনার্থীদের ব্যাপক ভিড় হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
এবারের জব্বারের বলী খেলায় মোট ১০০ জন কুস্তিগির অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং মেলা ও প্রতিযোগিতা আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান জহর লাল হাজারী।
বলী খেলার জন্য মঞ্চ প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীকাল বলী খেলায় রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
লালদীঘির এই মেলার ঐতিহাসিক তাৎপর্য ছাড়াও ব্যবহারিক তাৎপর্যও আছে। বন্দরনগরীর বাসিন্দারা তাদের রান্নাঘর ও গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে সারা বছর ধরেই এই মেলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন।
মেলাটি অর্থনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শত শত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের হস্তশিল্পসহ গৃহস্থালীর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রির জন্য সারা বছর এই বৈশাখী মেলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন।
আজ বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, আন্দরকিল্লা মোড় থেকে কোতয়ালী মোড় পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কজুড়ে অস্থায়ী দোকান বসিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ব্যবসায়ীরা। তারা গৃহস্থালি ও রান্নাঘরের বাসন, মৃৎশিল্প, খেলনা, মিষ্টি, ঝাড়ু, পাটি, আসবাবপত্র, কাঠ ও বাঁশের তৈরি শো-পিস, বেতের জিনিসপত্র, গাছের চারা, মাছ ধরার জালসহ সব ধরনের হস্তশিল্প বিক্রি করছেন।
কে সি দে সড়কে ঝাড়ু বিক্রি করছিলেন চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ব্যবসায়ী শাহ আলম। তিনি একজোড়া ফুল-ঝাড়ু ১৮০ টাকায় এবং লাঠি-ঝাড়ু ১২০ টাকায় বিক্রি করছিলেন। যত দিন যাবে, মেলায় বেচাকেনা তত বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।
এদিকে বিভিন্ন গেরস্থালি পণ্যের দোকানে নারী দর্শনার্থীদের ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে ভিড় করতে দেখা গেছে। পাথরঘাটা এলাকার বাসিন্দা শান্তা চৌধুরীকে হাতপাখা, বেলুন, বেতের মোড়া কিনতে দেখা গেছে। তিনি জানান, প্রতিবছর মেলা থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনেন। সব জিনিস এক জায়গায় পাওয়া যায় এবং দামেও সস্তা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যবসায়ী নুর হোসেন কেসি দে সড়কে চাটাই বিক্রি করছিলেন। তিনি জানান, মেলায় তিনি পাটি (কার্পেট) বিক্রি করছেন। বেচা-বিক্রি ভালো হচ্ছে।
হস্তশিল্প সামগ্রী দোকানেও প্রচুর দর্শনার্থীকে ভিড় করতে দেখা গেছে। ফ্রাই প্যান, কাঠের ঘূর্ণায়মান বোর্ড, ঘূর্ণায়মান লাঠি, জলচৌকি (কাঠের আসন), হাঁড়ি, হাতুড়ি, যাঁতি, দা বেচাকেনা হচ্ছে প্রচুর।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুব সমাজকে সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালে চট্টগ্রােম নগরের বক্সিরহাট এলাকার স্থানীয় আব্দুল জব্বার সওদাগর নগরীর লালদীঘি মাঠে আয়োজন করেন কুস্তি প্রতিযোগিতা। যা সময়ের পরিক্রমায় জব্বারের বলী খেলা নামে খ্যাতি অর্জন করে। পঞ্জিকা অনুসারে বৈশাখের ১২ তারিখে লালদীঘির ময়দানে বলী খেলা হয়। এই উপলক্ষে তিনদিন ধরে চলে মেলা। করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে জব্বারের বলী খেলা ও মেলার আয়োজন হয়নি। লালদীঘির মাঠের উন্নয়নের জন্য ২০২২ সালে বলী খেলা অনুষ্ঠিত হয় মূল মাঠের বাইরে। সর্বশেষ গত বছর থেকে লালদিঘীর মাঠে ফিরছে ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলা।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ