নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী জব্বাবের বলীখেলা ২৫ এপ্রিল শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে। ঐতিহাসিক লালদিঘী মাঠে এবার বলীখেলার ১১৬তম আসর বসতে যাচ্ছে। প্রতিবারের মত এবারও বলীখেলা হবে একদিন। তবে খেলা উপলক্ষে ২৪-২৬ এপ্রিল তিনদিন অনুষ্ঠিত হবে বৈশাখী মেলা। লালদীঘি মাঠসহ আশপাশের প্রায় চার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসবে এই মেলা। যে বলী খেলায় অংশ নিতে সারাদেশ থেকে শতাধিক বলীরা চট্টগ্রাম আসেন। অথচ বলীখেলার আসরের স্থায়িত্বকাল মাত্র কয়েক ঘণ্টা।
অভিযোগ রয়েছে, স্বল্প সময়ের মধ্যে তড়িঘড়ি করে বাছাইপর্ব সম্পন্ন করা, নির্দিষ্ট কয়েকজন বলীকে নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচ শেষ করা হয়। প্রতিভাবান অথচ অখ্যাত- এমন বলীদেরকে শুধু নামকাওয়াস্তে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়। রেজিস্ট্রেশনে সময়ক্ষেপন, বলীদের নানামুখী ভোগান্তিসহ জব্বারের বলীখেলা নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের কথা শোনা যায়। তবে তা নিরসনে আয়োজক কমিটির কোন কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায় না। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা এবার অন্তত নতুন কিছু চালু হবে জব্বারের বলীখেলায়।
সনাতনী নিয়মেই চলছে খেলা
প্রতিবছর ১২ বৈশাখ ঐতিহাসিক লালদিঘী মাঠে এই বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্যন্ত বলী খেলার ১১৫টি আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সেই সনাতনী নিয়মেই চলে আসছে প্রতিবারের বলীখেলার আসর। খেলায় পয়েন্ট ভাগাভাগির নিয়ম বা সুযোগ নেই। যত বলীই অংশগ্রহণ করুক না কেন, আয়োজকরা সব বলীকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেন। নরমাল ও চ্যালেঞ্জিং পর্ব। নরমাল পর্বে রাখা হয় তরুণ, প্রতিভাবান অথচ অখ্যাত বলীদের। আর চ্যালেঞ্জিং পর্বে রাখা হয় মাত্র আটজন বলী। যারা বিগত সময়ে চ্যাম্পিয়ন, প্রথম দ্বিতীয় বা তৃতীয় রানার্স আপ হয়েছেন শুধু তাদের জন্য এ পর্বের জায়গা নির্দিষ্ট। আর এতে করে প্রতিবছরই চ্যাম্পিয়ন, রানার্স আপের ট্রফি যাচ্ছে সেই চ্যালেঞ্জিং পর্বে স্থান পাওয়া বলীদেরই হাতে।
তবে এমন নিয়মের সংস্কার চান বলীখেলা নিয়ে বিগত সময়ে কাজ করেছেন এমন ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা। বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হয় বকসির হাট ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনের সাথে।
তিনি জানান, ২০০৬-২০০৭ সাল থেকে আমি জব্বারের বলীখেলায় কাজ করেছি। কাউন্সিলর থাকাকালীন কমিটিতেও দায়িত্ব পালন করেছি। এখন ইচ্ছা বা টান থাকলেও শারীরিক কারণে আর হয়ে উঠছে না। বলীখেলাকে ঘিরে এতবড় আয়োজন, এত বড় মেলা। অথচ খেলাটি হয় মাত্র কয়েক ঘন্টা। তারপর সবাই মেলা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বলীখেলা হতে হবে পয়েন্ট সিস্টেমে। ম্যান টু ম্যান খেলা চলবে। তারপর পয়েন্ট তালিকার ভিত্তিতে কোয়ালিফাই করবে বলীরা। এভাবে কোয়ার্টার, সেমি বা ফাইনালে যাবে তারা। এখন আয়োজকদের পছন্দমত অর্থাৎ বিগত সময়ে ট্রফি পাওয়া বলীদেরকে নিয়ে আটজনের গ্রুপ করা হয়। এই আটজনকে নিয়ে মূলত বলীখেলা। আর বাকি সবাইকে এক কাতারে রেখে নামেমাত্র ম্যাচ আয়োজন করা হয়। এরা অংশগ্রহণকারী অথচ তাদেরকে তড়িঘড়ি করে যাচ্ছেতাই ভাবে হারিয়ে জিতিয়ে দায়িত্ব শেষ করে আয়োজকরা।
তিনি বলেন, অথচ আমরা দেখেছি এদের মধ্যে অনেক প্রতিভাবান দক্ষ বলী আছেন। যারা শুধুমাত্র সিদ্ধান্তের কাছে হেরে যাচ্ছেন। এত কষ্ট করে বলীর মঞ্চে এসে একটা টি শার্ট নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। পয়েন্ট সিস্টেম বা ম্যান টু ম্যান খেলা হলে এমনটি হতো না। এখানে যোগ্যরা জয়ী হতেন। জয়ের মধ্য দিয়ে প্রকৃত চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপ বেরিয়ে আসতেন।
জামাল উদ্দিন আরও বলেন, এরজন্য প্রয়োজনে সকাল বেলা থেকে খেলা শুরু করতে হবে। বলীখেলার পদ্ধতিতে সংস্কার আনা জরুরি। খেলার পদ্ধতিতে খেলা হতে হবে। তা না হলে বলীরা এতকষ্ট করে আসবেন কেন? আয়োজকদেরকে এ নিয়ে ভাবতেই হবে।
এ ব্যাপারে জব্বারের বলীখেলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক হাফিজুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সদস্য সচিব আবদুল জব্বারের নাতি শওকত আনোয়ার বাদলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে।
তবে বলী খেলা পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল বালির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জব্বারের বলীখেলা আমাদের প্রাণের খেলা। আমি দীর্ঘদিন ধরে এটার সাথে জড়িত আছি। বলী খেলায় দুইটি ভাগে বলীদেরকে ভাগ করে খেলানো হয়। এখানে অনেকেই শখ করে বলী খেলতে আসেন। তাদেরকে নরমাল পর্বে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এদের মধ্যে পেশাদার বলী তেমন থাকেন না। যারা পেশাদার তাদের মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে আটজনকে নিয়ে চ্যালেঞ্জিং পর্ব শুরু হয়। এদের থেকে চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপ ও অন্যান্য বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এবারও এ নিয়মে হবে আশা করছি।
বলীখেলার প্রাইজমানি
২০১৭ সালের আগ পর্যন্ত বলী খেলায় চ্যাম্পিয়নকে ট্রফি-ক্রেস্টসহ ২০ হাজার টাকা এবং রানার্সআপ বলীকে দেওয়া হতো ১৫ হাজার টাকা ও ক্রেস্ট। ২০২২ সালে চ্যাম্পিয়নকে ২৫ হাজার টাকা ও ট্রফি; রানার্সআপকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে চ্যাম্পিয়নকে ক্রেস্ট ও নগদ ৩০ হাজার টাকা এবং রানার্সআপকে ক্রেস্ট ও নগদ ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়। এছাড়া দ্বিতীয় পুরস্কার ২০ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার ১০ হাজার ও চতুর্থ স্থান অর্জনকারীদেরকে ৫ হাজার টাকা নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। অন্যান্য বিজয়ীদেরকে পুরস্কৃত করা হয় নগদ দুই হাজার টাকা।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ