নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। এ দাবি শুধু এখন বোয়ালখালীবাসির নয়, পরিণত হয়েছে চট্টগ্রামের গণদাবিতে। এই আসনের দুই সংসদ সদস্য কালুরঘাট সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত মনোকষ্ট নিয়ে চিরবিদায়ও নিয়েছেন তারা। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবদুচ ছালামও একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছেন। কিন্তু তিনিও সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ রেলমন্ত্রী বলেছেন, নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণে ৪ থেকে ৫ বছর সময় লাগবে।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরের দিকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের রেস্ট হাউসে রেলওয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেন, ‘পুরাতন কালুরঘাট সেতু মেরামত করা হচ্ছে। মার্চের মাঝামাঝিতে এ সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হবে। তবে নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণে ৪ থেকে ৫ বছর সময় লাগবে।’
রেল এক সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘রেললাইন উপড়ে ফেলা হচ্ছে। ট্রেনে আগুন দেওয়া হচ্ছে। এরপরেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলকে ঢেলে সাজাচ্ছেন। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলা রেল যোগাযোগের আওতায় নিয়ে আসার কাজ করছেন। গ্রামীণ কৃষকদের উৎপাদিত ফসল যাতে ট্রেনযোগে শহর পর্যন্ত চলে আসে, প্রান্তিক কৃষক যেন যথাযথ মূল্যে ফলফলাদি ও সবজি বিক্রি করতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করছি৷’
রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেন, ‘অনেক স্থানে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেগুলো স্বাভাবিক করার পরিকল্পনা রয়েছে। কক্সবাজার রুটে আগামী দুই মাসের মধ্যে একটি কমিউটার ট্রেন চালু করা হবে। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা সেটা হলো লোকো মাস্টার সমস্যা। লোকো মাস্টার নিয়োগ হলে আমরা খুব শিগগিরই এ রুটে আরও কিছু ট্রেন চালু করবো।’
তিনি বলেন, আমি নতুন হলেও চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। রেল নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে পরিকল্পনা সেটি আমি বাস্তবায়ন করবো। সকলের সহযোগিতায় রেল ব্যবস্থাকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে চাই। ইতোমধ্যে রেলকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে পাঁচ হাজারের উপরে লোকবল নিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। অনেকগুলো ইঞ্জিন ও কোচ আমদানি করা হচ্ছে। কিছু আমদানি হয়েছে। এসব ইঞ্জিন রেল বহরে যুক্ত হলে রেলে ইঞ্জিন সংকটে দূর হবে বলে জানান মন্ত্রী।
এদিকে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বোয়ালখালীবাসিকে প্রতিশ্রুতি দেন তার সময়ে কালুরঘাট নির্মাণ হবে। নির্বাচনী প্রচারকালে বক্তব্যে তিনি বলেন, একপাশে শহর, আরেকপাশে গ্রাম আর মাঝখানে কর্ণফুলী নদী। সন্ধ্যা নামলেই বোয়ালখালীর মানুষ অন্ধকারে, আর নদীর ও পারে আলোর ঝলকানি। আমি নদীর দুপাড়েই আলো জ্বালাতে চাই। আমি কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করে দুপাড়ের মধ্যেকার দূরত্ব কমাতে চাই।
তাঁর কথায় আবারও আশায় বুধ বাঁধে বোয়ালখালীবাসী। কিন্তু রেলমন্ত্রীর কথায় এবারও আশা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এর আগে এই এলাকার আরও দুই সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদল এবং মোসলেম উদ্দিন আহমেদও স্বপ্ন দেখেছিলেন নতুন কালুরঘাট সেতু। তাঁরা এলাকার জনগণকেও কালুরঘাট সেতু নিয়ে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই তাঁরা এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ