চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : ইসলামী ব্যাংকের ‘বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন’ পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন ব্যাংকটির হাজারো কর্মকর্তা। আগামীকাল শনিবার এ পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে পরীক্ষার জন্য মনোনীত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজারো কর্মকর্তা।
সমাবেশ থেকে তারা প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীককে স্মারকলিপি দেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে আশ্বাস দেন।
উল্লেখ্য, দেশের বেসরকারি আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক আওয়ামী লীগ সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি নিয়ন্ত্রণে নেয় এস আলম গ্রুপ, যেটি আগে রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্টদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এস আলম গ্রুপ ধীরে ধীরে ব্যাংকটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পদত্যাগে বাধ্য করে ও তাদের নিজস্ব লোক হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়। পাশাপাশি চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকার বাসিন্দারা ব্যাপক সংখ্যক নিয়োগ পান। এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম পটিয়ায় হওয়ায় ওই এলাকার লোকজনকে নিয়োগে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক আগের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে ইসলামী ব্যাংককে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে।
নতুন পর্ষদ আসার পর সম্প্রতি প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কর্মকর্তার বিশেষ সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে সিনিয়র অফিসার, অফিসার, অফিসার (ক্যাশ), জুনিয়র অফিসার (ক্যাশ), অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (ক্যাশ) পদের কর্মকর্তারা আছেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে নোটিশ জারি করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা ড. এম কামাল উদ্দিন জাসিমের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরীক্ষা শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে।
পরীক্ষার জন্য মনোনীতদের অভিযোগ, ব্যাংকে ওই পদগুলোতে প্রায় ৮০০০ হাজারের মতো কর্মকর্তা থাকলেও কেবল ২০১৭ সালের পরে নিয়োগপ্রাপ্তদের পরীক্ষা জন্য সার্কুলার দেওয়া হয়েছে। এই পরীক্ষার আড়ালে ব্যাংকটিতে কর্মরত চট্টগ্রামের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তাকে ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনার অভিযোগ ওঠেছে।
এ অবস্থায় পরীক্ষা বর্জনের ডাক শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাংকটির শাখাগুলোতে কর্মরত চট্টগ্রামের বাসিন্দারা। এসময় পরীক্ষা বন্ধের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের হাতে ছিল ‘শ্রম দিলাম, ঘাম দিলাম, আবার কেনো দেবে টান’, ‘পরীক্ষা দেব তখনই, সবাই বসবে যখনই’, ‘কর্মস্থলে সুখ মানে শুধু বেতন না, বরং সম্মান, ভারসাম্য ও স্বীকৃতি’, ‘একবার দিলাম পরীক্ষা, দুইবার দিতে রাজি না’, ‘সিএইচআরও জানেন নাকি, স্বৈরাচারের দোসর আপনি’, ‘হাইকোর্ট অবমাননা কেন, জবাব চাই, দিতে হবে’-সহ নানা লেখা ব্যানার-ফেস্টুন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন ব্যাংকটির কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইস্কান্দার সুজন, এস এম এমদাদ হোসাইন, মোহাম্মদ ইকবাল, দিলরুবা আক্তার, শারমিন আক্তার ও নাসরিন জান্নাত প্রমুখ।
এসময় পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বক্তারা বলেন, ‘আমরা সরকারি সকল নিয়ম মেনে ব্যাংকে যোগদান করেছি। যোগদানের পর ব্যাংকের পদোন্নতিসহ নানা পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। সেজন্য চাকরি থেকে ছাঁটাই করার এই প্রহসন ও বৈষম্যমূলক পরীক্ষা আমরা দেব না। সারা বাংলাদেশের ইসলামি ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা এই পরীক্ষায় অংশ নেবে না।’
সরকারকে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান বক্তারা। তারা বলেন, ‘চট্টগ্রামের ইতিহাস আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস। সরকার যদি আমাদের দাবির বিষয়ে তড়িৎ পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আমাদেরও কঠিন আন্দোলনের পথে হাঁটতে হবে। চট্টগ্রাম দেশের ব্যবসার চালিকাশক্তি। সারা বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি অচল করে দিতে আমাদের দুই মিনিটও সময় লাগবে না।’
চাটগাঁ নিউজ/এসএ