চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: ১৯৭১’র রণাঙ্গনের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ সরদার। পাকিস্তানিরা যাকে পরাজিত করতে পারেনি, সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা অবশেষে পরাজিত হলেন ঘাতক ব্যাধি ক্যান্সারের কাছে। জীবনের ৭৫ বছর বয়সে এসে আক্রান্ত হন দুরারোগ্য মুখের ক্যান্সারে। রোগ যন্ত্রণা সইতে না পেরে চিরকূট লিখে অবশেষে আত্মহণনের পথ বেছে নেন আবু সাঈদ সরদার।
ক্যান্সারের যন্ত্রণা সইতে না পেরে তিনি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার নিজ বাসা থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।
ডবলমুরিং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী রফিক আহম্মদ জানান, আবু সাঈদ সরদার ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে বাসার দরজা ভেঙে উনার লাশ উদ্ধার করেছেন। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ঘটনাস্থলে আমরা একটি সুইসাইড নোট পেয়েছি। নোটের তথ্যানুযায়ী, তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। আবু সাঈদ সরদারের লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ সরদারের দুই সংসারে দুই ছেলে এক কন্যা। প্রথম সংসারে এক ছেলে, তার নাম মোহাম্মদ ইমতিয়াজ সায়েদ সরদার ইমন। দ্বিতীয় সংসারে এক ছেলে, তার নাম সাইমন সরদার ও এক কন্যা সন্তান তার নাম পায়েল। প্রথমা স্ত্রী মৃত্যু বরণ করলে তিনি দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আবু সাঈদ সরদারের অনেক গবেষণাধর্মী লেখা রয়েছে। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের বন্দর-পতেঙ্গা আসনে বিএনপির প্রার্থী, দলটির বর্তমান স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নির্বাচন মনিটরিং সেলের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০০৫ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের পক্ষে একই দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়র নির্বাচনেও আবু সাঈদ সরদার নির্বাচন মনিটরিং সেলের দায়িত্বে ছিলেন। বিএনপি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন মনিটর হিসেবে কাজ করলেও আ জ ম নাছির উদ্দীন তার কর্মদক্ষতাকে সম্মান জানিয়ে নিজের নির্বাচন হিসেবে নিয়োগ দেন। মেয়র নির্বাচন পরবর্তী সময়েও আ জ ম নাছির উদ্দীন তাকে যথাযোগ্য সম্মানী প্রদান করে রেখে দিয়েছিলেন।
প্রয়াত আবু সাঈদ সরদারের সন্তান ইমতিয়াজ সায়েদ ইমনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার বাবা ক্যান্সারের যন্ত্রণা সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। বাবা খুব পান খেতেন। সুগন্ধি জর্দা, সুপারি আর চুন মিশিয়ে মুখ ভরে পান খেতেন বাবা। পান রাখার জন্য বাবার ছিল বাহারি পানের কোটা। বেশি পান খাওয়ার ফলেই বাবার মুখে ক্যান্সার হয়েছে।
তিনি আরো জানান,আমাদের উদ্দেশ্যে তিনি একটি চিরকূট লিখে রেখে গেছেন। আগামীকাল বাদ জোহর বাবার জানাযা শেষে আগ্রাবাদ সিডিএ জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন অনুষ্ঠিত হবে।
রাত ১১ টা প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আবু সাঈদ সরদারের মরদেহ চমেক হাসপাতালে ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি