চিংড়িঘের বানাতে প্যারাবন উজাড়

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: কক্সবাজারের চকরিয়ার সমুদ্র উপকূলের রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্যারাবন উজাড় করে চিংড়িঘের তৈরির জন্য পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে একটি প্রভাবশালী দখলবাজ চক্র। এরই অংশ হিসেবে চকরিয়া-মহেশখালী সড়কের বদরখালীস্থ মাতামুহুরী নদীর মোহনায় সৃজিত প্রায় পাঁচ হাজার চারাগাছ কাটা হয়েছে। এমনকি পূর্বাংশে দাঁড়িয়ে থাকা প্যারাবনে পানির প্রবাহ বন্ধ করতে নদীর তীরে বাঁধ নির্মাণও করা হয়।

আজ শনিবার ভোর থেকে দুই শতাধিক শ্রমিক দিয়ে শুরু করা পরিবেশবিধ্বংসী এই অপতৎরতার খবর পেয়ে ছুটে যান চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ জামান।

পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতির খবরে প্যারাবন উজাড় ও মাটির বাঁধ দেওয়ার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা পালিয়ে যান।

অভিযোগ উঠেছে, বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির সদস্য ছনুয়াপাড়ার জাফর উল্লাহ ও বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আহমদ উল্লাহর নেতৃত্বে চিংড়িঘের তৈরির জন্য প্যারাবন উজাড় ও নদীতীরে মাটির বাঁধ দেওয়ার কাজে জড়িত একটি চক্র।

অভিযুক্ত দুজন দাবি করেছেন, তাঁরা বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূরে হোছাইন আরিফ এবং বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির নেতাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই নদীতীরে মাটির বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন। তবে কোনো গাছ তাঁরা কাটেননি।

সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে চকরিয়া ও পেকুয়ায় প্রাণ হারায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এবং লাখ লাখ গবাদি পশু। ওই সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী বিরানভূমিতে পরিণত হওয়া চকরিয়া উপকূলের সবুজ বেষ্টনী তৈরিতে কাজ করে জাপানভিত্তিক পরিবেশবাদী এনজিও সংস্থা ওআইএসসিএ (ওয়াইস্কা ইন্টারন্যাশনাল)। এই সংস্থার পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী প্রতিবছরই জাপানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী এসে বিলুপ্তপ্রায় চকরিয়া সুন্দরবনের জেগে ওঠা চরে প্যারাবন সৃজন করেন। একইভাবে বেসরকারি সংস্থা উবিনীগ উদ্যোগ নেয় সমুদ্র উপকূলের বদরখালী ইউনিয়নকে রক্ষায় প্যারাবন সৃজনের।

উবিনীগ কক্সবাজারের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক খান জয়নাল আবেদীন জানান, ১৯৯৬ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে বদরখালীর সমুদ্র উপকূলের ছনুয়াপাড়া থেকে লম্বাখালী পর্যন্ত প্রায় ৩০০ একর তথা তিন কিলোমিটারজুড়ে কেওড়া ও বাইন প্রজাতির কয়েক লাখ চারা রোপণ করা হয়। বর্তমানে এসব প্যারাবনের বেশির ভাগ উজাড় করে চিংড়িঘের তৈরি করা হয়েছে। অবশিষ্ট যেসব গাছ দাঁড়িয়ে আছে সেগুলোও সাবাড় করে চিংড়িঘের তৈরির জন্য প্রভাবশালীদের কুদৃষ্টি পড়েছে। এই অপতৎপরতার অংশ হিসেবে শনিবার ভোরে দুই শতাধিক শ্রমিক দিয়ে কেটে সাবাড় করা হয় প্যারাবনের প্রায় পাঁচ হাজার চারা গাছ। এর পর নদীতীরে শুরু করা হয় মাটির বাঁধ।

যাতে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল প্যারাবন পানির প্রবাহ না পেয়ে মরে যায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বদরখালী সমিতির নিয়ন্ত্রণাধীন লম্বাঘোনায় চিংড়ি প্রকল্প বরাদ্দ পাওয়া সমিতির সদস্যরা তাঁদের চিংড়িঘেরের পরিধি বাড়ানোর জন্যই সমুদ্র মোহনায় নদীতীরের প্যারাবন উজাড় শুরু করেছেন। অতীতেও একই কায়দায় বদরখালীর মুহুরীরজোড়া স্লুইস গেট থেকে ফিশারীঘাট লম্বাঘোনা পর্যন্ত প্যারাবনের ওপর এই নিধনযজ্ঞ চালায় দুর্বৃত্তরা। কিন্তু সে সময় কারো বিরুদ্ধে কোনো দপ্তরই আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি।

এদিকে অনুমতি প্রদান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরে হোছাইন আরিফ

জানতে চাইলে বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির সভাপতি মো. দেলোয়ার হোছাইন বলেন, ‘সকাল থেকে আমি কিছুই জানতাম না। গণমাধ্যমকর্মীরা আমাকে ফোন করার পর খবর নিয়ে দেখি, কিছু একটা ঘটেছে। তবে সমিতির যেসব সদস্য এই পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সমিতির বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ জামান বলেন, ‘চিংড়িঘের তৈরির জন্য সমুদ্র উপকূলের প্যারাবন উজাড় করা হচ্ছে—এমন খবর পাওয়া মাত্রই সেখানে ছুটে যাই। তবে এর আগেই অকুঃস্থল থেকে লোকজন লাপাত্তা হয়ে যায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্যারাবনবেষ্টিত এলাকায় চিংড়িঘের তৈরির জন্য মাতামুহুরী নদীর তীরে দেওয়া মাটির বাঁধ অপসারণ করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চাটগাঁ নিউজ/এমআর

Scroll to Top