চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : চালের ‘অস্বাভাবিক’ মূল্যবৃদ্ধিতে উদ্বেগ জানিয়ে ‘ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও’ স্লোগান তুলে চট্টগ্রামে মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকরা। এ সময় গরিব মানুষের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালুসহ পাঁচ দফা দাবি তোলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে নগরীর জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ প্রতিবাদী মানববন্ধন হয়। বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি), কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), যুব ক্যাব ও আইএসডিই-বাংলাদেশের উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
মানববন্ধনে ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘চালের কোনো সংকট নেই। পর্যাপ্ত মজুদ আছে। এটা হলো সিন্ডিকেটের কারসাজি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বলে এসেছি। কিন্তু সিন্ডিকেট ভাঙতে পারিনি। তখন সরকারের আন্তরিকতা ছিল না, সরকার সিন্ডিকেট ভাঙেনি। এখন পর্যাপ্ত চালের মজুদ আছে। আমদানিও প্রচুর আছে। তারপরেও চালের দাম তারা কিন্তু প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে যাচ্ছে।’
প্রশাসনের গাফেলতির অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘চালের বাজার কোনো সময় তদারকির মধ্যে থাকে না। যখনই এরকম দাম বাড়ে খুচরা কয়েকটা দোকানে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর বা জেলা প্রশাসন গিয়ে একটু করে জরিমানা করে, তারপরে শেষ। যারা আসলে মূল হোতা পাইকার, আড়তদার, মজুতদার, মিলার ও করপোরেট গ্রুপ, তাদের ব্যাপারে কোনোসময় খোঁজ খবর নেওয়া হয় না। এ কারণে তারা প্রতিনিয়ত দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে।’
নাজের বলেন, ‘যেহেতু এটি অন্তর্বর্তী সরকার, তাদের কাছে মানুষের প্রধান দাবি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ভাতের যোগান নিশ্চিত করা। তাই অধিক গুরুত্বসহকারে বিষয়টা বিবেচনা করে চালের মূল্যের সংকটের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’
বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্কের (খানি) সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ বলেন, ‘আয় ও ক্রয়ক্ষমতার ভারসাম্য না থাকায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ তাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা থেকে পুষ্টিকর উপাদান যেমন মাছ, মাংস, ডাল বা সবজি বাদ দিয়ে শুধু ভাত-নির্ভর খাবার খাচ্ছেন, যা দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টিহীনতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতা মানুষের মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের স্বাস্থ্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
মানববন্ধনে উত্থাপিত পাঁচ দফা দাবির মধ্যে আছে- কৃষকের কাছ থেকে সরকারের সরাসরি চাল কেনার আওতা বাড়ানো, দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তায় টিসিবি এবং ওএমএস কর্মসূচির আওতা বাড়ানো, ক্ষুদ্র কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়া এবং চালের বাজারে নিয়মিত মনিটরিং করে সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণে আনা।
যুব ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, নারীনেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব জিয়া হাবিব আহসান, বাংলাদেশ ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেলস এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, চট্টগ্রাম মহানগর শাখা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সহ-সভাপতি ফারহানা আখতার, বিএনপি নেতা ফরিদা খানম, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, আইনজীবী জিয়া হাবিব আহসান।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ