নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান মাস সংযম আর আত্মশুদ্ধির মাস। প্রত্যেক রোজাদার শেষ রাতে পবিত্র মনে সেহেরি খেয়ে রোজা পালন করেন। সারাদিনের রোজা শেষে ইফতার মুখে দিয়ে রোজাদাররা রোজা ভাঙেন। রমজান মাসে সেহেরি এবং ইফতার রোজাদারদের জন্য অপরিহার্য।
তবে চট্টগ্রামবাসী বা চাঁটগাঁইয়াদের অনেকেই এখনো সেহেরিকে বলে থাকেন ‘পোঁয়াইত্তে’, আর ইফতারিকে বলে থাকেন ‘ইসতারি’। চাটগাঁয় জন্ম নেয়া এমন কেউ নেই যারা শৈশবে এই শব্দ দুটির সাথে পরিচিত হননি।
‘পোঁয়াইত্তে’ আর ‘ইসতারি’ শব্দ দুটির এমন পরিবর্তিত উচ্চারণ নিয়ে ঘরে-বাইরে, গলির মোড়ের আড্ডায় এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও রসালাপ চলমান । ভিন্ন জেলাবাসীদের মাঝে শব্দ দুটির এমন উচ্চারণ নিয়ে ভিন্ন অভিব্যক্তি প্রকাশ পেলেও চাটগাঁইয়ারা এখনো সেহেরিকে ‘পোঁয়াইত্তে’ আর ইফতারিকে ‘ইসতারি’ বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তারা মনে করেন- শব্দ দুটির সাথে যেমন মিশে আছে পবিত্রতা, তেমনি মিশে রয়েছে নিগূঢ় এক লৌকিক টান।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি’র চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিসে কর্মরত সংবাদকর্মী আহসান রিটন গত ৩ মার্চ তার ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেন- ‘শৈশবে আমরা সেহরিকে পোঁয়াইত্তে বলতাম। কে কে আছো দলে।’
তার এ পোস্টে নোয়াখালী জেলা পুলিশে (পিবিআই) কর্মরত ইন্সপেক্টর চট্টগ্রামের বাসিন্দা হুমায়ন কবীর কমেন্ট করেন- ‘এখনো পোঁয়াইত্তে বলি।’
সাংবাদিক ইফতেখার মারুফ কমেন্ট করেন- ‘বেগগুনে হইত, এহনো হয়’।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের কর্মকর্তা জাহির মামুন লেখেন- চট্টগ্রামে গ্রামাঞ্চলে এখনো আছে শব্দটা।
আরমান ফিডস এন্ড ফিশারিজ লিমিটেড’র সিনিয়র সেলস এন্ড মার্কেটিং অফিসার জামাল উদ্দিন কমেন্ট করেন- ‘অনে কি হন?। আঁরা এহনো পোঁয়াইত্তে হইদি এনা।’
গত ২ মার্চ আরেকটি পোস্টে আহসান রিটন ‘ইফতারি’ নিয়ে উল্লেখ করেন- ‘শৈশবে আমরা ইফতারি’কে ‘ইসতারি’ বলতাম। কে কে আছো দলে?
তার এই পোস্টে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি চট্টগ্রাম ব্যুরো’র সংবাদকর্মী আলমগীর সবুজ কমেন্ট করেন- ‘আমরা এখনো বলি ইসতারি।’
বিডি নিউজ চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান মিন্টু চৌধুরী কমেন্ট করেন, ‘আমরা রোজা না রাখলেও প্রতিদিন বিকালে ইসতারি কিনতে যেতাম।’
কবি ও সংস্কৃতি কর্মী উৎফল বড়ুয়া কমেন্ট করেন- ‘ইবা ত চাটগাঁইয়া ভাষাত বেয়াগ্গুনেই এহন-অ হয়’। সংবাদকর্মী কামরুজ্জামান রনি লিখেন- ‘আঁরা এহন ইসতারি গজ্জি’। সংবাদকর্মী শামসুল বাবু কমেন্ট করেন- ‘আমার মায়ের ভাষা’। দীপ্ত টিভি’র চট্টগ্রাম ব্যুরো লাতেফা রুনা কমেন্ট করেন- ‘আঁরাও কইতাম’।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা, প্রবাদ-প্রবচন ও বিভিন্ন লৌকিক বিষয় নিয়ে কাজ করা সংবাদকর্মী সিপ্লাসটিভি ও চাটগাঁ নিউজের প্রধান সম্পাদক আলমগীর অপু বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রমিত বাংলা শব্দ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় এসে আমূল পরিবর্তিত হয়ে গেছে। রমজান মাস কেন্দ্রিক শব্দ ইফতারি চাটগাঁইয়া ভাষায় এসে হয়ে গেছে ‘ইসতারি’। আবার সেহরী শব্দের চাটগাঁইয়া সংস্করণ হল ‘পোঁয়াইত্তে’। আমরা ছোটবেলায় ইফতারিকে বলতাম ইসতারি। সেহরিকে বলতাম ‘পোঁয়াইত্তে’। গ্রাম-গঞ্জে এখনো অনেকেই এরকম উচ্চারণ করেন। এটিই চাটগাঁইয়া ভাষার বিশেষত্ব।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/জেএইচ/এসএ