সিপ্লাস ডেস্ক: সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনীতির মাঠ এখন উত্তপ্ত। সেই আঁচ লেগেছে পণ্যের দামেও। বাজারে কম-বেশি সব পণ্যের দামই এখন চড়া। বিশেষ করে ভোগ্যপণ্য নিয়ে অস্বস্তি কাটছে না।
দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ। এ বাজারে গত সপ্তাহের শুরুতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে আবারও কমেছে। পাইকারিতে সেঞ্চুরি পার করলেও দুদিনের ব্যবধানে তা কমে বৃহস্পতিবার। ৮০-৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ। তবে একমাস আগেও পেঁয়াজের দাম ছিল হাফ সেঞ্চুরির কোটায়। আর এ সবই ভারতীয় পেঁয়াজ। মৌসুম শেষ এবং দাম বেশি হওয়ায় দেশি পেঁয়াজ চট্টগ্রামের বাজারে তেমন একটা আসে না। যে কারণে বাজারে রাজত্ব করছে ভারতীয় পেঁয়াজ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে এখন পেঁয়াজের মৌসুম শেষ। নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বুনছেন কৃষকরা। অন্যদিকে, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে টনপ্রতি আটশ ডলার দর নির্ধারণ করে দিলে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, ঢাকা মহানগরীর খুচরা বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১২৫-১৩৫ টাকা এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজ ১১০-১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মাত্র এক মাস আগেও দেশি পেঁয়াজ ছিল ৮০-৯০ টাকা এবং এক বছর আগে একই সময়ে দাম ছিল ৫৫-৬০ টাকা। অন্যদিকে, এক মাস আগে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতিকেজি ৬৫-৭৫ টাকা এবং এ সময়ে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম ছিল ৫০-৬০ টাকা।
একইভাবে চট্টগ্রামের মুদি দোকান, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর কিংবা কাঁচাবাজারগুলোতে একই দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, খুচরা বাজারের চেয়ে পাইকারিতে ১০-৩০ টাকা পর্যন্ত দামের ফারাক থাকে।
মধ্যম চাক্তাইয়ের পেঁয়াজ-রসুনের আড়ৎদার ব্যবসায়ী বশর অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী আবুল বশর গণমাধ্যমকে বলেন, চট্টগ্রামে এখন দেশি পেঁয়াজ নেই। ঢাকাতে থাকলেও দাম বেশি। চট্টগ্রামে ৯৫ শতাংশের বেশিই ভারতীয় পেঁয়াজ। বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০-৯০ টাকায়। যা দুদিন আগেও মান ভেদে ১০০-১০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এরমধ্যে নাসিক জাতের পেঁয়াজের দাম ভারতীয় সাউথ পেঁয়াজের চেয়ে কেজিতে ৫ টাকা কম। দরে বেশি হলেও সাউথ পেঁয়াজের মান ভালো।
তিনি বলেন, ভারত সরকার হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানিতে টনপ্রতি আটশ ডলার দর নির্ধারণ করে দিয়েছে। এতে আমদানি করতেই প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা পড়ছে। দর বেঁধে দেওয়ার খবরে খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ে হঠাৎ করে বুধবার দাম বেড়ে ১০০-১০৫ টাকায় উঠে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার আবার কমে গেছে। এক মাস আগেও এসব পেঁয়াজ ৫০-৬০ টাকার মধ্যে ছিল বলে জানান তিনি।
ভারতে নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করলেও আমাদের দেশে আরও দুই মাসের মতো দেরি হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, আমাদের কৃষকরা মাত্র পেঁয়াজ বুনছেন।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স এ এইচ ট্রেডার্সের ম্যানেজার ইয়াসির আরাফাত গণমাধ্যমকে বলেন, বাজারে যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। দামের ওঠানামার কারণে বাজারে বেচাকেনা কম। তাছাড়া ভারতে দর বেঁধে দেওয়ায় বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে।
খাতুনগঞ্জ থেকে পেঁয়াজ রসুন আদা সংগ্রহ করেন কাজীর দেউরি এলাকার মুদি দোকানি দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ৮-১০ দিন আগেও ৬৫-৭০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। মঙ্গল-বুধবার এসে একই পেঁয়াজ ১১০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে আবার কমেছে। এখন খুচরা প্রতিকেজি ১০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খাতুনগঞ্জের লামার বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস গণমাধ্যমকে বলেন, পেঁয়াজ রপ্তানিতে টনপ্রতি আটশ টাকা দর বেঁধে দিয়েছে ভারত। যার প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশে। তবে সপ্তাহের মাঝামাঝিতে প্রতিকেজিতে ২০-৩০ টাকা বাড়লেও শেষের দিকে আবার কমে গেছে। বৃহস্পতিবার পাইকারিতে ৮০-৮৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া গত সপ্তাহে অবরোধ ছিল। সে কারণে খাতুনগঞ্জে ক্রেতা কম।