চাকরির প্রলোভনে ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেন চসিক কর্মচারী

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন বিভাগে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দিয়ে একটি চক্র সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অভিযোগ উঠেছে, এই চক্রে সংস্থাটিরই অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত রয়েছেন। ‘চসিকের স্টাফ’ এ ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে তারা দীর্ঘদিন এ অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অনেক চাকরি প্রত্যাশী সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

চাটগাঁ নিউজের অনুসন্ধানে চাকরিদাতা চক্রে জড়িত চসিক সংস্থাপন শাখার বিল কর্মচারী কাঞ্চন চৌধুরী নামের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রতারণার তথ্য উঠে এসেছে। চসিকে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দিয়ে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা সম্প্রতি একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন চসিকে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগের প্রেক্ষিতে কাঞ্চন চৌধুরীর অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণা তদন্তে চসিকের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগী উভয় পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে। তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে ভুক্তভোগীদেরকে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেয়া হয়। ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত উভয় পক্ষ পারস্পরিক সমঝোতা করে বিষয়টি সুরাহা করবেন বলে তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছে।

আরও জানা গেছে, কাঞ্চনের প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে চসিকে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে চসিক স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা মহাজনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির অপর সদস্যরা হলেন চসিক শিক্ষা কর্মকর্তা রাশেদা আক্তার ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ।

অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি অনুসন্ধান শেষে ১৩ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত কাঞ্চন ও ভুক্তভোগীদেরকে নিয়ে সালিশে বসেছিলেন।

এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান চসিক স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা মহাজন চাটগাঁ নিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার উভয়পক্ষকে নিয়ে সালিশি বৈঠকে বসেছিলাম। বৈঠকে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত পক্ষের বক্তব্য নেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে ভুক্তভোগীদেরকে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে হয় মামলা দায়ের, নয়ত দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার ভিত্তিতে টাকা আদায়ের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীরা মামলা না করে কাঞ্চন চৌধুরীর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে সুরাহার চেষ্টা করবেন বলেছেন।

ভুক্তভোগীদের বক্তব্য

ভুক্তভোগী কামাল অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলেকে সিটি কর্পোরেশনে চাকরি দিতে পারবে-এমন প্রলোভন দেয়ায় কাঞ্চনকে আমি দেড় লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত ছেলের চাকরি হয়নি। পরবর্তীতে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য চাপ দিলে তিনি আজ দেবেন কাল দেবেন বলে আমাকে ঘুরাতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি কর্মস্থলেই আসা বন্ধ করে দেন। এ নিয়ে আমরা কর্পোরেশনে অভিযোগ দিয়েছি। গতকাল উভয়পক্ষকে নিয়ে সালিশ হয়েছে। আমরা মামলা করলে তার চাকরি চলে যাবে। আবার টাকা উসুলের সম্ভাবনাও কম। তিনি কথা দিয়েছেন আগামী তিনমাস পর আমাকে কিছু কিছু করে টাকা পরিশোধ করবেন।

আরেক ভুক্তভোগী উত্তম ভৌমিকের অভিযোগ, কর্পোরেশনে চাকরির সুবাদে কাঞ্চন বাবুর সাথে আমাদের দীর্ঘদিনের পরিচয়। তিনি কর্পোরেশনের এমএলএসএস, মালি, কম্পিউটার অপারেটরসহ বিভিন্ন পদে চাকরি দেবেন বলে আমার কাছ থেকে পাঁচজনের বাবদ মোট ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন। আমার জানামতে সোহেল, লিটন, বিষ্ণু ও জহরলালের কাছ থেকেও টাকা নিয়েছেন তিনি। ছয়মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি কোন সদুত্তর আমাদেরকে দিতে পারেননি। শুনেছি জহরলালকে একলাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন। একটি ব্ল্যাংকচেক দিয়েছেন। লিটনের কাছ থেকে নাকি তিনি ১৫ লাখ টাকা নিয়েছেন।

ভুক্তভোগী সোহেল জানান, দুইজনের চাকরির জন্য আমি কাঞ্চন বাবুকে আড়াই লাখ টাকা দিয়েছি। তিন মাসের মধ্যে চাকরি হবে বলে কথা দিলেও দেড় বছর পর্যন্ত কোন চাকরি পাইনি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত কাঞ্চনের সাথে কথা বলা হলে চাটগাঁ নিউজকে তিনি বলেন, আমি রাসু বিশ্বাস নামের এক প্রতারকের প্রলোভনে পড়ে এমন কাজ করেছি। আমি স্বীকার করছি। রাসু বিশ্বাসের বাবা মেমন হাসপাতালে চাকরি করেন। তিনি আমাকে বলে ছিলেন, তুমি রাসুর কথায় বিশ্বাস করিওনা। সে আমার ছেলে হলেও একটা চিটিং। আমি কমিশনের লোভে পড়ে রাসুর বাবার কথা না শুনে লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। তবে রাসুর ব্যাপারে হাবিলাসদ্বীপের চেয়ারম্যান শফিক সাহেবের কাছে বিচার দিয়েছি। তিনি রাসুর কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করেছেন এবং চেয়ারম্যান মহোদয় রাসুর কাছ থেকে যেভাবে পারেন টাকা আদায় করে দেবেন বলে আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমি সোহেল, জহরলাল, উত্তম বাবুকে কিছু টাকা পরিশোধ করেছি। উনারা আর ৬০ হাজার টাকা পাবেন। আগামী তিনমাস পর আমি আস্তে আস্তে তা পরিশোধ করব বলে কথা দিয়েছি।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ

Scroll to Top