নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রকৌশলী জয়সেন বড়ুয়া ফুটপাত থেকে ফুলের টব বাসায় নিয়ে যাওয়ার সময় জনতার হাতে ধরা খেয়েছেন। চসিকের একজন সাবেক প্রকৌশলীর এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে চসিক কার্যালয়সহ নগর জুড়ে চলছে সমালোচনা।
আজ সোমবার (৩০ জুন) জয়সেন বড়ুয়া নামের ওই সাবেক প্রকৌশলী কাজীর দেউড়ি আউটার স্টেডিয়াম এলাকাস্থ ফুটপাত থেকে কিছু ফুলের টব রিকশায় করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় স্থানীয় জনতা তার এহেন কর্মকাণ্ডে বাধা দিলে জয়সেন বড়ুয়া নিজেকে চসিকের প্রকৌশলী বলে পরিচয় দেন।
এসময় মো. কামরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি তাকে বলেন, আপনি চসিকের কর্মকর্তা যদি হয়ে থাকেন। তাহলে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব পরিবহন ব্যবহার করে ফুলের টবগুলো নিয়ে যান। আপনি ব্যক্তিগতভাবে রিকশায় করে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? তখন জয়সেন বড়ুয়া বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত বলে স্বীকার করেন।
অবসরের বিষয়টি জানতে পেরে উপস্থিত জনতা তাকে আরও চেপে ধরেন। পরে চসিকের একজন সাবেক প্রকৌশলীর এমন হীন কর্মকাণ্ডের ঘটনা মেয়র কার্যালয় পর্যন্ত পৌঁছে যায় বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে চসিকের উপপ্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা বলেন, বিষয়টি মেয়র মহোদয়ের কানেও পৌঁছেছে। তার মতো একজন সম্মানিত ব্যক্তির পক্ষে এমন কাজ করা শোভনীয় নয়। এধরণের কর্মকাণ্ডে আমরা নিজেরাও লজ্জাবোধ করছি।
তিনি আরও বলেন, সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হিসেবে ফুটপাতে এসব ফুলের টবগুলো স্থাপন করা হয়েছে। টবের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের ফুলের গাছ লাগানো থাকে। চসিকের মালিরা এসব পরিচর্যা করেন। এখন তিনি (জয়সেন বড়ুয়া) কিভাবে কেন ফুলের টব নিয়ে যাচ্ছেন বিষয়টি আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। মানুষ যখন বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করছে, চসিকের স্টাফকে নিয়ে নানা কথা বলছে। তখন আমরা মর্মাহত হই।
চসিক সূত্রে জানা যায়, কর্মজীবনেও প্রকৌশলী জয়সেন বড়ুয়া নানা অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তার পদোন্নতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা সময় সমালোচনা শুরু হয়েছিল।
চসিক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে জয়সেন বড়ুয়া ট্রান্সপোর্ট সহকারী পদে যোগদান করেন। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সুপারভাইজার পদমর্যাদার জয়সেন বড়ুয়া ও মির্জা ফখরুল কাদের নামে দুই সহকারী প্রকৌশলীকে (যান্ত্রিক) পদে প্রতিস্থাপিত করে একটি অফিস আদেশ জারি করে চসিকের তৎকালীন সচিব। এ অফিস আদেশ অনুযায়ী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদ বাদ দিয়ে সরাসরি সহকারী প্রকৌশলী করা হয় তাদেরকে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্মবিধির আলোকে জয়সেন বড়ুয়ার এই পদোন্নতিতে নিয়মনীতি ও বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করা হয়নি বলে সেসময় ব্যাপক অভিযোগ উঠেছিল। ২০১৯ সালের ৩০ মে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পান এই দুই কর্মকর্তা। এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠিও পাঠায়।
দুদকের চিঠির প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগ চসিকের প্রধান নির্বাহীকে বিষয়টি তদন্ত করে মতামত পাঠানোর নির্দেশনা দেয়। তবে সেসময় নানামুখী তদবিরের মাধ্যমে জয়সেন বড়ুয়া ও মির্জা ফখরুল কাদের নিজেদের ইতিবাচক তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করিয়ে নেয়। বর্তমানে জয়সেন বড়ুয়া চসিকের চাকরি থেকে অবসরে।
এ ব্যাপারে জয়সেন বড়ুয়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ