নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে বকশিশ না পেয়ে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শনিবার (১৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ওয়ার্ডবয়ের এমন কান্ডে শিশু মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে বলে জানান নবজাতকের বাবা বেলাল উদ্দিন। তিনি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার শিলখালি ইউনিয়নের জারুল বুনিয়া এলাকার বাসিন্দা।
এ ঘটনায় চাকরিচ্যুত করা হয়েছে অভিযুক্ত ওয়ার্ডবয়কে। ঘটনা তদন্তে তাৎক্ষণিক গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি।
জানা যায়, চকরিয়ার জমজম হাসপাতালে সাত দিন আগেই এই নবজাতকটির জন্ম। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার পরিবার। হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ৩০ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ছিল এই নবজাতক। তবে চমেক’ই যেন কাল হলো এই নবজাতকের, বাবার দূরাবস্থায় বখশিশের টাকা দিতে না পারায় অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ওয়ার্ডবয়।এতেই মৃত্যু ঘটে শিশুটির।
নবজাতকের বাবা বেলাল উদ্দিন বলেন, সকাল ১০টা বাজেও আমার বাচ্চা স্বাভাবিক আচরণ করছিল। অক্সিজেনের পানি শেষ হয়ে গেলে ওয়ার্ডবয়কে নতুন পানি দিতে বলি, কিন্তু বকশিশ না দেওয়ায় ওয়ার্ডবয় অক্সিজেনের পানি সরবরাহ বন্ধ রাখেন। এর পরপরই পরিচ্ছন্নতার অজুহাতে আমাদেরকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন। আমরা দেড় ঘণ্টা পর ফিরে এসে দেখি আমার সন্তান আর বেঁচে নেই।
অভিযোগ আছে দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালের নার্স ও ওয়ার্ডবয়দের টাকা বা বখশিশ না দিলে পাওয়া যায়না কাঙ্খিত সেবা। প্রয়োজনীয় সেবা পেতে টাকা দিতে এক প্রকার বাধ্য করেন তারা।
এ নিয়ে গত ১৩ মার্চ ‘চমেক হাসপাতালে পদে পদে হয়রানি, বকশিশ ছাড়া মিলছে না সেবা’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ‘চাটগাঁ নিউজ’। যেখানে উঠে আসে নার্স, ওয়ার্ডবয় ও আয়াদের কাছে কিভাবে জিম্মি চিকিৎসাপ্রার্থীরা।
নবজাতকের বাবা বেলাল উদ্দিন আরও বলেন— আমি গরিব মানুষ, দিনমজুরি করে চলি। প্রতিবার অক্সিজেন লাগানোর জন্য ২০০ টাকা করে চাওয়া হয়। আজ আমার টাকা ছিল না বলে বখশিশ দিতে না পারায় আমার সন্তানের জীবন চলে গেল। সামান্য টাকার জন্য মানুষ কিভাবে এত পাষাণ হতে পারে!
এ ঘটনায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন ‘চাটগাঁ নিউজ’কে বলেন, আমি ঘটনা জানার সাথে সাথেই অভিযুক্ত ওয়ার্ডবয়কে চাকরিচ্যুতির আদেশ দিয়েছি। এছাড়াও বিভাগীয় প্রধানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টের পর অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই ওয়ার্ডবয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/জেএইচ