চব্বিশ আর একাত্তর এক নয়— মেয়র শাহাদাত 

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন— আজ অনেকে চব্বিশকে একাত্তরের সঙ্গে তুলনা শুরু করেছেন। চব্বিশ আর একাত্তর এক নয়। ১৯৭১ সালে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি, একটা নতুন দেশের সূচনা হয়েছে।

আর চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি সরকার পরিবর্তন হয়েছে, যে সরকার ছিল ফ্যাসিস্ট এবং জনবিরোধী। কাজেই দুটোর মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য আছে।

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) গণহত্যা দিবস উপলক্ষে নগরীর পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে শহিদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে মেয়র শাহাদাত এসব কথা বলেন।

চসিক মেয়র বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোনো সহজ অর্জন ছিল না। ১৯৭১ সালে একটি নতুন দেশের জন্ম হয়েছিল মুক্তিকামী জনগণের আত্মত্যাগের বিনিময়ে। আর ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল একটি স্বৈরাচারী সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন। এই দুটি ঘটনার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, যা কখনোই বিতর্কিত হওয়ার সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, একাত্তরের মাধ্যমে দেশ পেয়েছি, চব্বিশের মাধ্যমে নতুন সরকার পেয়েছি, যে সরকারটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ছাত্র-জনতার রক্তস্রোতের মাধ্যমে। আমার বক্তব্য হল, একাত্তরকে বিতর্কিত করা যাবে না, চব্বিশকেও অবহেলা করা যাবেনা, দুটিকে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে দেশের উন্নয়নে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১০ নভেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী চট্টগ্রামের পাহাড়তলি অঞ্চলে এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। পাঞ্জাবি লেইন, বিহারী লেইন, ওয়ারলেস কলোনিসহ বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়েছিল।

পঁচিশে মার্চ কালরাত্রির নৃশংস হত্যাযজ্ঞ থেকে শুরু করে ১০ নভেম্বর পাহাড়তলি গণহত্যা—সবই প্রমাণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মমতা।

তিনি বলেন, ২৫ মার্চ বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে ভয়াবহ দিন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যা শুধু বাংলাদেশেরই নয়, বিশ্বমানবতার ইতিহাসেও একটি কালো অধ্যায়। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে সারাদেশে গণহত্যা চালায়। বিশেষ করে ঢাকায় তারা নির্বিচারে নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করে। জুলফিকার আলী ভুট্টো ও ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযান ছিল এক নির্মম হত্যাযজ্ঞ।

তবে চট্টগ্রাম ছিল ব্যতিক্রম। সারাদেশে পাকিস্তানি বাহিনী নির্বিচারে হামলা চালালেও চট্টগ্রামে তারা সফলভাবে অভিযান পরিচালনা করতে পারেনি। এর মূল কারণ ছিল চট্টগ্রাম থেকে গড়ে ওঠা প্রতিরোধ। চট্টগ্রামে অবস্থানরত স্বাধীনতার স্বপক্ষের সেনারা পূর্ব থেকেই সশস্ত্র প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। পাকিস্তানি বাহিনী চট্টগ্রামে সহজে আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, যেখানে মুক্তিযোদ্ধারা পরিকল্পিত প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ড. কিসিঞ্জার চাকমা, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম, শিক্ষা কর্মকর্তা মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তার, উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা।

চাটগা নিউজ/ইউডি/জেএইচ

Scroll to Top