চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করার দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেছে চবির বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
আজ রোববার (১৭ আগস্ট) বেলা আড়াইটার দিকে ভবনটির সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় তারা। এ সময় ভবনে অবস্থান করা উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারসহ প্রশাসনিক ভবনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সন্ধ্যা ৬টায় প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলানো ছিল। এতে করে ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে যায়নি কোনো স্টাফ বাস।
এর আগে বেলা দেড়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। এর এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ কিছু শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবনে তালা দেন। কর্মসূচিতে শতভাগ আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে না পারলে বিকল্প হিসেবে আবাসন ভাতা নিশ্চিতেরও দাবি তোলেন তারা।
এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ‘আবাসন ভাতা দে, নইলে গদি ছাইড়া দে’, ‘আবাসন আমার অধিকার, রুখে দেওয়ার সাধ্য কার’, ‘হয় আবাসন দেন, না হয় আবাসন ভাতা দেন’, ‘হলের নামে বৈষম্য, মানি না মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
রবিউল হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয় শহর থেকে অনেক দূরে। যার কারণে অনেক শিক্ষার্থীকে শাটল ট্রেনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে আসতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়া কিংবা অন্য কোনো সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে পারেন না। তাই আমাদের অনেক দিনের দাবি শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করা। সেটা নিশ্চিত করার আগ পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে।
স্পোর্টস সায়েন্সের শিক্ষার্থী মো. মাহফুজ বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বড় আয়তন, কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত হল নেই। প্রশাসন চাইলে সরকারের বাজেট এনে বহুতল হল নির্মাণ করতে পারে। কিন্তু প্রশাসনের সেই সদিচ্ছা নেই। দেশের চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাজেট ও আবাসনের দিক থেকে সবার নিচে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
ভূগোল বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী আসমানি বিনতে তাজবী বলেন, সুপারিশসহ কয়েকবার হলে আবেদন করেছি, অনেকেই করেছে, কিন্তু কোনো ফল আসেনি। আসন বরাদ্দে ব্যাপক দুর্নীতি আছে। আমার পরিচিত অনেকে একা পুরো রুমে থাকে, আবার রাজনৈতিক প্রভাবেও সিট পাচ্ছে অনেকে। স্বচ্ছতার কথা থাকলেও এক বছর পরও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দাবি দিয়েছে, কিন্তু আমরা পূরণ করিনি, এমনটা কখনও হয়নি। তারা প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছে আমাদের কোনো আলটিমেটাম না দিয়েই। আমি এখন প্রশাসনিক ভবনেই উপস্থিত কিন্তু ওরা আমাদের কাছে লিখিত কোনো দাবি নিয়ে না এসে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছে। এভাবে তালা দেওয়া যথার্থ মনে হয়নি।’
শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবি
১. শতভাগ আবাসন নিশ্চিতকরণ। শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করতে হবে। আজকেই সিন্ডিকেট সভা করে আধুনিক এবং বহুতল হল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়ে রূপরেখা প্রকাশ করতে হবে।
২. আবাসন ভাতা নিশ্চিতকরণ। শতভাগ আবাসন না হওয়া পর্যন্ত অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত আবাসন ভাতা প্রদান করা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৩. অবৈধভাবে হলে অবস্থানকারী ছাত্র-ছাত্রীর তালিকা শনাক্তকরণ। সকল হলে অবৈধভাবে অবস্থানকারী ছাত্র-ছাত্রীর তালিকা শনাক্ত করে অনতিবিলম্বে তাদের হলের সিট বাতিল করে তাদের হল প্রস্থান করতে বাধ্য করতে হবে।
৪. হলের আবেদনে ১০০ টাকা নেওয়ার প্রহসন বন্ধ করা। হলের আবেদনে এ যাবৎকালে যতবার ১০০ টাকা করে নিয়ে হলের রেজাল্ট নিয়ে প্রহসন হয়েছে, সেসকল বার যেসব শিক্ষার্থীকে সিট দেওয়া হয়নি তাদের ১০০ টাকা অনতিবিলম্বে ফেরত দিতে হবে।
৫. মেয়েদের হলে ডাবলিং প্রথা নিয়ে হওয়া সকল প্রহসনের নিরসন করতে হবে। মেয়েদের হলে ডাবলিং প্রথা বন্ধ করে ডেকার বেড প্রথা চালু করতে হবে।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ