চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার ও প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
আজ সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পলিত হয়।
শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ভিসিবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। তারা বলতে থাকেন—‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত ঝরে, প্রশাসন নীরব কেন’, ‘আমার ভাই আইসিইউতে, প্রশাসন নিয়োগ বোর্ডে’।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও ইসলামী ছাত্র মজলিস সমাবেশ করে পাঁচ দফা দাবি তোলে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট থেকে ছাত্রদল ঝটিকা মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এলে শহীদ মিনারে থাকা শিক্ষার্থীরাও সেখানে যোগ দেন।
পাঁচ সংগঠনের দাবিগুলো হলো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উপাচার্য ও প্রক্টরিয়াল বডিকে পদত্যাগ করতে হবে, স্থানীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দ্রুত মামলা করে ঘটনার বিচার নিশ্চিত করতে হবে, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নারীবান্ধব বিশেষায়িত সেল গঠন করতে হবে, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন করতে হবে, প্রয়োজনে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গেট ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা বলেন, উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর হলেও শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়নি। আবাসন থাকলে আজকের এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না।
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জশদ জাকির বলেন, প্রশাসন নিরাপত্তার দায় নিজেরা না নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এই কারণে উপাচার্যের এ পদে থাকার বৈধতা থাকে না। ঘটনার রাতে সময়মতো ব্যবস্থা নিলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক মুনতাসির মাহমুদ বলেন, প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন, এর মধ্যে অন্তত ১০ জন গুরুতর। সবচেয়ে বড় ব্যাপার প্রশাসন এই সময়ে নির্বিকার ছিল। এই নির্বিকার প্রশাসন আমরা চাই না এবং এই দায় যদি তারা নিতে না পারে, তাহলে তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া অভিযোগ করেন, শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে প্রশাসন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। নিরাপত্তা নিশ্চিতেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। উপাচার্যকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এত শিক্ষার্থী আহত হলেও প্রশাসনের মধ্যে অনুশোচনা নেই। এটা লজ্জাজনক। আমরা তাদের পদত্যাগ চাই।
উল্লেখ্য, গত শনিবার রাত সোয়া ১২টায় জোবরা গ্রামে ভাড়া বাসার দারোয়ান এক ছাত্রীকে মারধর করেছেন, এমন খবরে সংঘর্ষের সূত্রপাত। সেদিন রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। পরদিন রোববার দুপুরে আবার সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের কুপিয়ে, ইট ও লোহার রডের আঘাতে আহত করা হয়। আহত হন অন্তত ২০০ জন। এ ছাড়া গ্রামবাসী আহত হন ১০ থেকে ১৫ জন।
এ ঘটনার পর দুই দিন ধরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। ক্যাম্পাসে মোতায়েন রয়েছে সেনাবাহিনী। সংঘর্ষের পর উপজেলা প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা কাল মঙ্গলবার রাত ১২টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ