জগলুল হুদা (রাঙ্গুনিয়া): চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও তিন পার্বত্য অঞ্চলের মানুষদের পুরো পথ অনায়াসে আসা-যাওয়া করা গেলেও থমকে যেতে হয় চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাটে এসে। কারণ এখানে কর্ণফুলী নদীর উপর ফেরীযোগে পারাপার করতে হয়। আর এতে দূর্ভোগের শেষ নেই অত্র এলাকার যাতায়াতকারী বাসিন্দাদের।
জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে এই ফেরি সার্ভিস চালু হয়। এই দীর্ঘ বছরে অনেক এমপি-মন্ত্রী সেতু নির্মাণ প্রকল্প একনেকে পাস হওয়ার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি ৩৫ বছরেও। তবে এবার সত্যি সত্যিই শুরু হয়ে গেল চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কাজ। কিন্তু কাজ শুরু হলেও বাস্তবায়ন কবে নাগাদ সে আশ্বাস দিতে পারছেন না প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
এই সেতুটির দাবি রাঙ্গুনিয়া-কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদী তীরের দু’পাড়ের লোকজনের দীর্ঘ সময়ের। ১৯৮৯ সালে কর্ণফুলী নদী পারাপারের জন্য ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। বর্তমানে রাঙামাটি সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের অধীনে ফেরিটি পরিচালিত হচ্ছে। ১৯৯৩ সালে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী অলি আহমদ লিচুবাগান ফেরীঘাটে সেতু নির্মাণ করার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে লিচুবাগান ফেরীঘাটে সেতু নির্মিত না হয়ে গোডাউন দিয়ে কর্ণফুলী নদীর উপর সেতু নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে লিচুবাগান ফেরীঘাটে সেতু নির্মাণ করার জন্য আর কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সেতু নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন ও নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। নকশা প্রণয়নসহ সম্ভাব্যতার প্রতিবেদন সওজ’র সেতু বিভাগে দেয়ার পর তা পরিকল্পনা কমিশন হয়ে তারপর একনেকে উঠবে। এর যেকোন ধাপে এই প্রকল্প বাতিল করা হলে সেক্ষেত্রে সেতুর স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। তাই এখনও অনিশ্চিত বলা যেতে পারে চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট সেতুর কাজ। তবে সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়নের কাজ যেহেতু শুরু হয়েছে আর আশার বেলুনে বাতাস ফুলিয়ে চন্দ্রঘোনাবাসীদের বোকা বানানো যাবেনা বলে মন্তব্য করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, রাঙামাটি হয়ে বান্দরবানে যাতায়াতের জন্য একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী নদীর এই ফেরি। কাপ্তাই অংশেও চন্দ্রঘোনার যানবাহন পারাপারের মাধ্যম সওজ—এর ফেরি। কিন্তু নদীতে বালুচর উঠা, পাহাড়ি ঢলসহ নানা কারণে প্রায়ই আটকে যায় ফেরিটা। এসময় চরম বেকায়দায় আটকে থাকতে দেখা যায় শত শত যানবাহনকে। এর বাইরেও এই সেতু স্বাভাবিক নিয়মে পার হতে গেলেও প্রায় এক ঘন্টা সময় ব্যয় হয়। তাই সেতুটি হওয়া খুবই প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়সহ তিন পার্বত্য এলাকার চালক, যাত্রীসহ সকলে।
সম্প্রতি এশিয়ান ইনফু স্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্প পরামর্শদাতা এসিই কনসালটেন্ট লিঃ এর আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু নির্মাণে বিস্তারিত সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন ও নকশা প্রণয়ন প্রকল্পের আর্থ সামাজিক ও পরিবেশ সম্পর্কিত ‘মতবিনিময় সভা’ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সেতু নির্মাণ করলে যাদের জমি এবং ঘরসহ ক্ষতির মুখে পড়বে তারাসহ স্থানীয়রা মত প্রকাশ করেন এবং সকলেই ক্ষতিপূরণ সাপেক্ষে সেতু নির্মাণের ব্যাপারে জোর সুপারিশ করেন। এমনকি এই প্রকল্প না হোক এমন কথা কেউই বলেনি এবং এটি হলে সবার লাভ হবে বলে মত প্রকাশ করেন। সভায় বক্তব্য দেন প্রকল্পের সোশ্যাল এন্ড রিসেটেইলমেন্ট বিশেষজ্ঞ মো. ওয়ালিদ আক্তার এবং রাহাত খান মজলিশ।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মো. ওয়ালিদ আক্তার জানান, ফেরিঘাট সেতু নির্মাণের জন্য নকশা প্রণয়ন ও সম্ভাব্য ক্ষতিসহ অন্যান্য আর্থ—সামাজিক বিষয় যাচাই করার কাজ করছেন তারা। ৪৭০—৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু হতে পারে। এজন্য তারা নকশা প্রণয়নসহ প্রাথমিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তারা সওজ’র সেতু বিভাগে দেবেন এবং সেখান থেকে পরিকল্পনা কমিশন হয়ে একনেকে উঠে চূড়ান্ত অনুমোদন পাবে। এরপর টেন্ডার প্রক্রিয়ার সাহায্যে মূল সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান। তবে বিষয়টি সময়সাপেক্ষ।
সওজ রাঙ্গামাটি বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী কীর্তি নিশান চাকমা জানান, সেতু নির্মাণের বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সম্ভাব্য যাচাই, ক্ষতি নিরূপণ ও নকশা প্রণয়নের জন্য একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন আমাদের সেতু বিভাগের মাধ্যমে প্রকল্প প্রণয়নের জন্য একনেকে যাবে, এসব দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়। তবে ব্রীজ নির্মাণের প্রাথমিক ধাপ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সয়েল টেস্ট হয়ে গেছে। প্রক্রিয়া দীর্ঘ হলেও এই স্থান দিয়ে একটি সেতু নির্মাণ হবে।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ