চট্টগ্রাম বারে নানা বির্তকের পরও ‘অটোপাস’ প্রার্থীদের বিজয় ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একের পর এক বির্তকের ঝড় বইছে। ভাগাভাগির নির্বাচন পরিচালনায় কমিশনের অস্বচ্ছতার অভিযোগ এনে এডহক কমিটির এক সদস্যের পদত্যাগ, চূড়ান্ত বৈধ প্রার্থী তালিকা ও ফলাফল গেজেটে কমিশনের সদস্যদের স্বাক্ষরদানে বিরত থাকাসহ নানা নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে। এরপরও আজ রবিবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যায় অটোপাস বিএনপি-জামায়াতপন্থীর সেই ২১ প্র্রার্থীকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

আগামী ১৬ এপ্রিল বিজয়ী প্রার্থীদেরকে সনদ প্রদানের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব চুড়ান্ত করবে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকালে নিয়মানুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা শেষে নির্বাচনের একতরফা অংশগ্রহণকারী বিএনপি-জামায়াতের ২১ আইনজীবীকে বৈধ ঘোষণা করে কমিশন। এ ২১ জন ছাড়া আর যেহেতু বৈধ প্রার্থী নেই তাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় অঘোষিত বিজয়ীদেরকে গতকাল ১২ এপ্রিল বিজয়ী ঘোষণা করার কথা ছিল কমিশনের। তবে সে ঘোষণা করা হয়েছে ১৩ এপ্রিল।

বিজয়ী যারা—
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ১৩২ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম ২১ পদেই ভোট ছাড়াই জয়ী ঘোষণা। এদের মধ্যে ১৪ পদে বিএনপি এবং জামায়াতপন্থী হিসেবে পরিচিতরা পেয়েছেন ৭টি পদ।

যে ১৪ পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা পদ নিলেন— সভাপতি আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কাজী মো. সিরু, অর্থ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, পাঠাগার সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফী বিনতে মোতালেব, ক্রীড়া সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন এবং সদস্য আহসান উল্লাহ, আসমা খানম, বিবি ফাতেমা, মেজবাহ উল আলম, রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী, রাহিলা গুলশান ও সাজ্জাদ কামরুল হোসেন।

যে ৭ পদে জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত প্রার্থীরা পদ নিলেন— সহসভাপতি আলমগীর মোহাম্মদ ইউনুস, সহসাধারণ সম্পাদক ফজলুল বারী, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুল জব্বার এবং সদস্য শাহেদ হোসেন, হেলাল উদ্দিন, রোবায়তুল করিম ও মোহাম্মদ মোরশেদ।

এডহক কমিটির সদস্য পদত্যাগ—
নির্বাচন কমিশনের অস্বচ্ছতা ও ব্যর্থতার কারণে নিজেকে দায়মুক্ত করার কারণ দেখিয়ে আজ ১৩ এপ্রিল বার কাউন্সিলের এডহক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগ করেছেন।
তিনি অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক বরাবর লেখা চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হওয়ায় ব্যক্তিগত মর্মপীড়ায় ভুগে বিবেকের তাড়নায় তিনি এডহক কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

প্রার্থী তালিকা ও ফলাফল গেজেটে স্বাক্ষর নেই অনেকের—
কমিশন ঘোষিত বৈধ প্রার্থীর তালিকায় কমিশনের পাঁচ সদস্যের মধ্যে মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা তারিক আহমেদ ও অপর এক নির্বাচনী কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট সেলিম উদ্দিন শাহীনের স্বাক্ষর রয়েছে মাত্র। অপর তিন কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট কবির হোসাইন, অ্যাডভোকেট মাসুদুল আলম, অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেনের স্বাক্ষর নেই।

আবার আজ ১৩ এপ্রিল বিনা ভোটে বিজয়ী সেই ২১ সদস্যের প্যানেলকে নির্বাচিত ঘোষণার গেজেটে চারজনের স্বাক্ষর থাকলেও অ্যাডভোকেট কবির হোসাইনের স্বাক্ষর নেই।

এ ব্যাপারে বার কাউন্সিল নির্বাচনের মুখ্য নির্বাচন কর্মকর্তা আ্যডভোকেট তারিক আহমেদ চাটগাঁ নিউজকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট কবির হোসাইন তার মেয়েকে চিকিৎসা করানোর জন্য বর্তমানে ভেলুড় সিএমসি হাসপাতালে রয়েছেন। ঈদের আগে তিনি ভারতে গেছেন। তাই তার স্বাক্ষর নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে তিনি ফোনে সম্মতি প্রদান করেছেন। তার সাথে আজকেও আমার কথা হয়েছে।

তবে কমিশনের পাঁচ কর্মকর্তার মধ্যে বৈধ ও নির্বাচিত ঘোষণার দুটি পত্রে কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর বিহীনতার মধ্যেও তা কতটুকু যৌক্তিক বা বিধিসম্মত- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বার কাউন্সিল গঠনতন্ত্রের ৬ষ্ঠ অনুচ্ছেদের ৪০ (৩) ধারা অনুযায়ী এদেরকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে মুখ্য নির্বাচন কর্মকর্তার স্বাক্ষরটিই মুখ্য। আগামী ১৬ এপ্রিল বিজয়ীদেরকে সনদ বিতরণের মধ্য দিয়ে আমাদের দায়িত্ব শেষ করব।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কমিশনের পাঁচ কর্মকর্তার মধ্যে মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট তারিক আহমেদ, অ্যাডভোকেট মাসুদুল আলম ও সেলিম উদ্দিন শাহীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম (বিএনপি) সমর্থিত। আর অ্যাডভোকেট কবির হোসাইন ও অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসাইন লয়ার্স কাউন্সিল (জামায়াত) সমর্থিত। এদের মধ্যে বৈধ প্রার্থী ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর ছিল তারিক আহমেদ ও সেলিম উদ্দিন শাহীনের। আর নির্বাচিত ঘোষণাপত্রটিতে কবির হোসাইন ছাড়া অন্যদের স্বাক্ষর ছিল।

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ২১টি পদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ১৪ পদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম (বিএনপি) আইনজীবীরা প্রার্থী হন। আর একটি সহ-সভাপতি পদ ও দুটি সম্পাদকীয় পদসহ মোট সাতটি পদে প্রার্থী হয়েছেন বাংলাদেশ লয়ার্স কাউন্সিল (জামায়াত) পন্থী আইনজীবীরা।

উল্লেখ্য, গত ১০ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের তারিখ ঘোষণার পরও ভোটের মাত্র ৬ দিন আগে ৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের ৫ সদস্য পদত্যাগ করায় চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হয়নি।

এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি সমিতির নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সমিতির সাধারণ সভায় ৫ সদস্যের একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। পরদিন ১৭ ফেব্রুয়ারি অ্যাডহক কমিটিকে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির বিধান অনুসারে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা থাকায় গত ১৮ মার্চ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। তফশিল অনুযায়ী, ১০ ফেব্রুয়ারি সমিতির লাইব্রেরি থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার শেষ দিন ছিল। আর ১১ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন প্রত্যাহার ও বৈধ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ, ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন প্রত্যাহার ও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ

সাম্প্রতিক সব খবর পেতে ভিজিট করুন…