‘চট্টগ্রাম বারের নির্বাচন’— মনোনয়ন ফরম ভাগাভাগি করলেন বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা!

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আইনজীবীদের কাউকেই মনোনয়ন ফরম নিতে দেননি বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা। প্যানেলের ২১টি পদের ফরম তারা নিজেরাই ভাগাভাগি করে নিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সভাপতি পদের জন্য মনোনয়ন ফরম নিতে গিয়ে রীতিমত তাদের হামলার শিকার হয়েছেন অ্যাডভোকেট শাহাদৎ হোসেন নামে এক আইনজীবী। তিনি জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুর ২টায় চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি কার্যালয় ভবনের অস্থায়ী নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিতরণ করা হয়। এসময় বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি সমর্থিত বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের আইনজীবীরা সম্মিলিতভাবে সেখানে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। তারা আওয়ামী লীগ, এলডিপিপন্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে কমিশন কার্যালয়ে ঢুকতে বাধা ও নানামুখী হুমকি প্রদান করেন।

এসময় জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট শাহাদৎ হোসেন সভাপতি পদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার জন্য কমিশন কার্যালয়ে প্রবেশ করলে তিনিও বাধার মুখে পড়েন। একপর্যায়ে তিনি কমিশনের কাছে ফরম চাইলে কমিশনও তাকে ফরম দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে তিনি সংশ্লিষ্টদের কাছে এর কারণ জানতে চাইলে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা তাকে নাজেহাল করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা অ্যাডভোকেট শাহাদৎ হোসেনকে শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট শাহাদৎ হোসেন চাটগাঁ নিউজকে বলেন, আমি মুখ্য নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে যাই। কিন্তু তিনি আমাকে ফরম দিতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানান। তখন আমি তাঁকে বলি যে, আমিও তো ফ্যাসিস্টবিরোধী। আন্দোলনের পক্ষের মানুষ। আমাকে ফরম দেবেন না কেন? জয়-পরাজয় যাই হোক, আমি অংশগ্রহণ করতে চাই। তখন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আমার ওপর হামলা চালায়। তারা আমাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে রুম থেকেই বের করে দেন।

তিনি বলেন, মনোনয়ন ফরম নিতে গিয়ে আইনজীবীর ওপর বর্বরোচিত হামলা চট্টগ্রাম আদালতের শত বছরের ইতিহাসে এই প্রথম। শুধু চট্টগ্রাম আদালত নয়, বাংলাদেশের কোন আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের ইতিহাসে এমন ঘটনার নজির নেই। নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম নিতে গিয়ে হামলার শিকার হওয়া একমাত্র আইনজীবী আমি।

তিনি আরও বলেন, আমি এ ঘটনায় জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান এডহক কমিটির কাছে অভিযোগ করি। এডহক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল আলম বিষয়টি আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মকবুল কাদের চৌধুরীকে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। তখন আহবায়কও বিষয়টি সমাধানে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিছুক্ষণ পর আহ্বায়ক মুখ্য নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তারিক আহমেদকে ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এসময় কমিটির আরেক সদস্য মুখ্য নির্বাচন কর্মকর্তাকে ফোন করলে তিনি এ ঘটনার কোন রকম ব্যবস্থা গ্রহণে বরাবরের মতই অপারগতা প্রকাশ করেন।

এদিকে, ফরম নিতে বাধার মুখে ফিরে আসা অ্যাডভোকেট এএইচএম জিয়া উদ্দিন বলেন, আমরা বাধার মুখে ফরম নিতে পারিনি। আমাদের রশিদ-জাবেদ- মাহতাব পরিষদের কেউ মনোনয়ন ফরম নিতে পারেননি। আমরা জেলা আইনজীবী সমিতির কাছে অভিযোগ দিয়েছি। উনারা ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বাচন কমিশনের মুখ্য নির্বাচন কর্মকর্তা তারিক আহমেদ বলেন, অ্যাডভোকেট শাহাদৎ হোসেনের অভিযোগ পুরোপুরি অসত্য, ভিত্তিহীন। তার ওপর হামলার কোন ঘটনাই ঘটেনি। ওরা সবাই উনার সাথে কোলাকুলি করে রুম থেকে বেরিয়ে গেছেন। আমরা উনাকে ফরম দেব বলেছি। উনাকে ফরম না দেয়ার তো কোন কারণ নেই। এখানে আমাদের তো লাভ স্বার্থ নেই।

জানা গেছে, জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী পরিষদের পদ সংখ্যা মোট ২১টি। সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ সাধারণ সম্পাদক, অর্থ সম্পাদক, পাঠাগার সম্পাদক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক, ক্রীড়া সম্পাদক, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক এবং ১১টি সদস্য পদ।

তবে অভিযোগ উঠেছে, এই ২১টি পদের বিপরীতে ফরম বিক্রি করা হয়েছে শুধু ২১টি। আর এই ২১টি ফরম ভাগাভাগি করে কিনেছেন বিএনপিপন্থী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ও জামায়াতপন্থী ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ, এলডিপি বা স্বতন্ত্র সাধারণ আইনজীবীদেরকে কোন ফরমই নিতে দেয়নি তারা।

আওয়ামীপন্থী, এলডিপি বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহে বাধা দেয়া প্রসঙ্গে মুখ্য নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, যারা আসছেন সবাইকে আমরা ফরম দিয়েছি। যারা আসেননি তাদের বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। কারা বাধা দিয়েছেন সে বিষয়ে আমার বলার কিছু নেই।

মনোনয়ন ফরম বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা এসেছেন সবাই ফরম পেয়েছেন। কয়টি ফরম বিক্রি হয়েছে এখনো আমরা গুনে দেখিনি। আগামীকাল গোনার পর জানা যাবে কয়টি ফরম বিক্রি হয়েছে।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ

আরও খবর পড়ুন – চাটগা নিউজ হোমপেজ

Scroll to Top