চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকা পৌরকর আদায় করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। মেয়র শাহাদাত হোসেন দায়িত্ব নেওয়ার পর বারবার তাগাদা দিয়ে চসিকের ইতিহাসে এই প্রথম বন্দরের কাছ থেকে এ পরিমাণে পৌরকর আদায় করতে সক্ষম হয়েছে সংস্থাটি।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মুনিরুজ্জামান মেয়র শাহাদাত হোসেনের কাছে ১০০ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করেন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সিটি করপোরেশনকে ১০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আমরা এখনো যৌথ পুনর্মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন পাইনি। তারা যদি ১০০ কোটি টাকার কম পরিশোধযোগ্য পৌরকর নির্ধারণ করে, তাহলে বাকি টাকা আগামী অর্থবছরে সমন্বয় করা হবে। কমিটির কাজ চলছে। তারা শিগগিরই এ বিষয়ে তাদের মতামত দেবে।’
চসিকের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ ১০০ কোটি টাকা পরিশোধ করায় চসিকের বিদ্যমান আর্থিক সংকট কিছুটা লাঘব হবে।
সূত্রমতে, ২০১৭ সালে চসিকের পঞ্চবার্ষিকী পুনর্মূল্যায়ন অনুযায়ী বন্দরের কাছে ১৬০ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা পৌরকর প্রস্তাব করা হয়। তবে ওই কর পুনর্মূল্যায়ন কার্যক্রম সেসময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় স্থগিত করে দিলে এ বিষয়ে আর এগোতে পারেনি চসিক। ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর মন্ত্রণালয় আবার তাদের সিদ্ধান্ত আংশিক প্রত্যাহার করে নেয়। এতে ২০১৭ সালের পঞ্চবার্ষিকী পুনর্মূল্যায়ন অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পৌরকর আদায়ের পথ খুলে যায়।
২০২১ সালে রেজাউল করিম চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বন্দরকে ১৬০ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা পৌরকর পরিশোধের জন্য চিঠি দেওয়া হয়। এ নিয়ে দেনদরবারের পর মেয়র রেজাউলের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫০ কোটি টাকা পৌরকর নির্ধারণ হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ ১০ শতাংশ সারচার্জ মওকুফের সুবিধা গ্রহণ করে ৪০ কোটি টাকা পরিশোধ করে। এরপর ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ২০১৭ সালের পঞ্চবার্ষিকী পুনর্মূল্যায়ন অনুযায়ী পৌরকর আদায়ের বিষয়টির আর সুরাহা হয়নি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। আত্মগোপনে চলে যান চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। অন্তর্বর্তী সরকার ১৯ আগস্ট তাকে অপসারণ করে। এর মধ্যে ১ অক্টোবর নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে দায়ের থাকা এক মামলার রায়ে বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা হয়। ৫ নভেম্বর তিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
শাহাদাত হোসেন মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার পর ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে ফের ১৬০ কোটি টাকা হারে বন্দরের কাছ থেকে পৌরকর আদায়ে উদ্যোগী হন। একইসঙ্গে আগের মেয়রের পথ অনুসরণ করে বন্দরের কাছ থেকে তাদের আয়ের এক শতাংশও মাশুল হিসেবে দাবি করেন। বন্দরের পণ্য নিয়ে চলা ভারি যানবাহনগুলোর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের জন্য এ মাশুল দাবি করা হয়।
সূত্রমতে, প্রথম দফায় নভেম্বরেই চসিক বন্দরের কাছ থেকে এক শতাংশ মাশুল দাবি করে চিঠি দেন। কিন্তু আইনে না থাকার কথা বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ এতে সাড়া দেয়নি। এরপর গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর ১৬০ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা পৌরকর দাবি করে বন্দর চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
এক মাস পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে সাড়া না পেয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেন। এতে নির্ধারিত পৌরকর পরিশোধে বন্দরকে নির্দেশনা দিতে অনুরোধ করা হয়। মন্ত্রণালয় থেকে ‘ইতিবাচক সাড়া’ পেয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বন্দর কর্তৃপক্ষকে আবারও চিঠি দিয়ে ১৬০ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়।
এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সিটি করপোরেশনের দাবির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে অভ্যন্তরীণ চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। বন্দর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য (অর্থ) মোহাম্মদ শহীদুল আলমকে কমিটির প্রধান করা হয়। এছাড়া চসিকের সঙ্গে যৌথ একটি পুনর্মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়।
এর মধ্যেই সম্প্রতি চসিককে ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশনা দিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় নৌপরিহন মন্ত্রণালয়। গত ৬ এপ্রিল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নজরুল ইসলাম আজাদের সই করা চিঠিতে জয়েন্ট সার্ভে কমিটির রিপোর্টের সুপারিশের ভিত্তিতে কম-বেশি সমন্বয়ের শর্তে আপাতত ১০০ কোটি টাকা চসিককে দেওয়ার জন্য বন্দরকে বলা হয়।
১০০ কোটি টাকা পৌরকর আদায়ের পর চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে এই প্রথম এত বিপুল পরিমাণে পৌরকর বন্দর পরিশোধ করল। এই পৌরকর আদায়ে আগের মেয়ররা অনেক চেষ্টা করলেও পারেননি। আমরা সেটা আদায় করেছি। এই পৌরকর আমাদের কাজের গতি বাড়াবে। নগরীর সামগ্রিক উন্নয়ন ও সেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আর্থিক সক্ষমতার ঘাটতি আছে। পৌরকর নিয়মিত পেলে সেই ঘাটতি মেটানো সহজ হয়।’
চাটগাঁ নিউজ/এসএ