চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেড় কোটি টাকার পণ্যভর্তি কনটেইনার উধাও!
নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক: চতুর্দিকে কাঁটাতার সজ্জিত সুউচ্চ দেয়াল, পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী, কঠিন সিকিউরিটি সিস্টেম থাকার পরেও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গায়েব হয়ে গেছে প্রায় দেড় কোটি টাকার পণ্যভর্তি দুটি কনটেইনার। ফলে বন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন, কেউবা বলছে বাহিরের নয়, বন্দরের অভ্যন্তরীণ চোরেরা ঘটিয়েছে এ কাজ ।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নিলামের পর সব শুল্ককর পরিশোধ করে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারির সময় জানতে পারেন কনটেইনার দুটি উধাও। সংরক্ষিত এলাকা থেকে এভাবে কনটেইনার উধাও হওয়ার ঘটনায় হতবাক সংশ্লিষ্টরা। তারা টাকা ফেরত পেতে বন্দর ও কাস্টমসে চিঠি চালাচালি করলেও নেই কোনো অগ্রগতি।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম থেকে ৮৫ লাখ টাকায় প্রায় ২৭ টন ফেব্রিক্স কিনেন শাহ আমানত ট্রেডিংয়ের মালিক সেলিম রেজা। নিলামের আগে ইয়ার্ডে কনটেইনারে পণ্যও পরিদর্শন করেন তিনি। এরপর পণ্য ডেলিভারি নিতে মূল্য, শুল্ককর ও বন্দরের চার্জসহ এক কোটি সাত লাখ টাকাও পরিশোধ করেন। অথচ ২৬ ফেব্রুয়ারি ট্রাক নিয়ে বন্দরের সংশ্লিষ্ট ইয়ার্ডে গেলে দিনভর খোঁজাখুঁজি শেষে জানানো হয় কনটেইনারটি নেই। ছয়মাস চলে গেলেও সেই কনটেইনারের হদিস মেলেনি।

সবশেষ কাস্টমসের নিলাম শাখার চিঠির জবাবে বন্দরের টার্মিনাল অফিসার জানান, আপাতত কনটেইনারটি পাওয়া যাচ্ছে না। টাকা ফেরত পেতে বন্দর ও কাস্টমসে ধরনা দিলেও সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি বন্দর কর্তৃপক্ষ।

ভুক্তভোগী বিডার মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা কাস্টমসের কমিশনার বরাবর ৩টি চিঠি দিয়েছি। আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের আর্থিক ক্ষতি ১ কোটি টাকার উপরে। আটকে আছে ৭ মাস ধরে। বারবার চিঠি দেয়ার পরেও আমার টাকা ফেরত পাইনি।’

সম্প্রতি আরো একটি কনটেইনারে থাকা ৪২ লাখ টাকার কাপড়ের নিলাম হয়। নিলামে বিক্রি হবার পর সেই কনটেইনারেরও খোঁজ পাওয়া যায়নি। সবমিলিয়ে দুই কনটেইনার পণ্যের মধ্যে একটি ছয় মাস ও অপরটির খোঁজ মিলছে না প্রায় এক মাস ধরে। এক্ষেত্রে কনটেইনার না থাকলে যাবতীয় চার্জ নিয়ে বন্দর ডেলিভারি অর্ডার কেন দিলো এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিডাররা।

ভুক্তভোগী বিডার মো. ইয়াকুব বলেন, ‘বাহিরে পণ্য থাকলে চুরি হবে কিন্তু বন্দরে এইরকম সুরক্ষিত দেয়ালের ভিতর কিভাবে চুরি হয়। আর্মি, নৌবাহিনী, বন্দরের নিজস্ব সিকিউরিটি থাকার পরেও এ পণ্য কিভাবে বাহিরে যায়? আমার মনে হচ্ছে বাহিরের কেউ নয়, বন্দরের ভিতরে ওঁৎপেতে থাকা চোরেরা কনটেইনার গায়েব করে দিচ্ছে।’

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিলাম শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান— পণ্যের রক্ষক যেহেতু চট্টগ্রাম বন্দর, হারানোর দায়ও তাদের। বন্দর থেকে কনটেইনার নিখোঁজের চূড়ান্ত চিঠি পেলে অর্থ ফেরতের উদ্যোগ নেয়া হবে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার মো. সাকিব হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন অভিযোগ এসেছে দুইটা। প্রথমে আমরা বন্দরে চিঠি দিয়ে জানতে চাই মালামাল পাওয়া যাচ্ছে কি-না। বন্দর যদি কনফার্ম করে যে পণ্য বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব না তখন আমরা রিফান্ডের প্রসেসে চলে যাবো।’

শুধু পণ্য নিখোঁজ নয়, নিলামে বিক্রি করা পণ্য কম পাওয়া এবং ডেলিভারির সময় হয়রানি ও অর্থ দাবির অভিযোগও করেছেন অন্যান্য বিডাররা।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক চাটগাঁ নিউজকে বলেন, তাদের অভিযোগ সত্য। আমরা কনটেইনার ২টি এখনও খুঁজছি। কনটেইনারগুলো বন্দরের বাইরে যাওয়ার সুয়োগ নেই, হয়তো ইয়ার্ডের অন্য কোনো জায়গায় স্থানান্তর হওয়ায় খুঁজে পেতে সমস্যা হচ্ছে।

নিলামের টাকা ফেরতের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ দেখবে। তবে আগামীকাল (বুধবার) অফিস চলাকালীন আমি খোঁজখবর নিবো।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ/এসএ

Scroll to Top