নিজস্ব প্রতিবেদক : গ্যাসের জন্য হাহাকার চলছে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে। দিনভর কোনো বাসাবাড়িতে জ্বলেনি চুলা। ফলে নির্ভর করতে হয়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁর ওপর। সেখানেও গুনতে হয়েছে বাড়তি টাকা। অনেকেই মাটির চুলা ব্যবহার করে করছেন রান্না। কবে এই সংকটের সমাধান হবে নিশ্চিত করতে পারছে না কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল)।
জানা গেছে, কক্সবাজারের মহেশখালীতে বঙ্গোপসাগরে ভাসমান এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনালে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে গ্যাস নেই সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনসহ কয়েক হাজার বাণিজ্যিক এবং ছয় লাখেরও বেশি আবাসিক গ্রাহকের সংযোগে। বন্ধ হয়ে গেছে কাফকো, সিইউএফএল, শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ গ্যাসনির্ভর সব শিল্প কারখানা।
এদিকে, সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে সিএনজি চালিত গণপরিবহন। এতে সকাল থেকে দুর্ভোগে পড়ে অফিসগামী নারী-পুরুষ।
খাবার হোটেলে দীর্ঘ লাইন
সকালে ঘুম থেকে উঠে খাবার তৈরি করতে যান চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া এলাকার গৃহবধূ দিলশাদ খাতুন। কিন্তু চুলা জ্বালাতে গিয়ে দেখেন লাইনে গ্যাস নেই। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর জানতে পারেন চট্টগ্রামে কোথাও গ্যাস নেই। তাই তড়িঘড়ি করে বাসা থেকে বের হয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আনতে যান দিলশাদ। কিন্তু এলাকার কয়েকটি খাবার হোটেল ঘুরে এসেও খাবার পান নি। কারণ গ্যাস সংকটের কারণে হোটেলগুলোতেও রান্না হয় নি। পরে কলা, মুড়ি, বিস্কুট দিয়ে সকালের নাস্তা সারে পুরো পরিবার।
নগরীর শুলকবহর এলাকার তৃপ্তি হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার সিরাজুল কবির বলেন, ভোর থেকে খাবারের খোঁজে আসছে মানুষ। কিন্তু গ্যাস না থাকায় রান্না সম্ভব হয় নি। পরে গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে রান্না করছি। তবে যেটুকু রান্না হয়েছে তা অল্প লোকজনকে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। অনেকে খাবার কিনতে এসে ফেরত গেছে।
এদিকে, জামালখান, মুরাদপুর, কাজীর দেউড়ি, আন্দরকিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্টে খাবার কিনতে মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।
গাড়ি সংকটে হেঁটে গন্তব্যে ছুটছে মানুষ
গ্যাস সংকট প্রকট হওয়ায় চট্টগ্রাম নগরীতে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ডিজেলচালিত পরিবহনগুলো চললেও তা যাত্রীর তুলনায় খুবই কম। গণপরিবহন না পেয়ে সকাল থেকে রিকশা কিংবা পায়ে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটছেন নারী-পুরুষ।
নিউ মার্কেট এলাকায় সিএনজি অটোরিকশার জন্য অপেক্ষমান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সৌরভ ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘গাড়ি খুঁজতে খুঁজতে পায়ে হেটে সদরঘাট থেকে নিউ মার্কেট মোড়ে (এক কিলোমিটার) চলে এসেছি। যেতে হবে মুরাদপুর। স্বাভাবিক সময়ে সদরঘাট পোস্ট অফিস থেকে মুরাদপুর যেতে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ভাড়া নেয়, কিন্তু আজ চাইছে ২৫০ টাকা। রিকশা ভাড়াও তিনগুন বেশি চাইছে।
এদিকে ডিজেলচালিত পরিবহন চলাচল করলেও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকায় লেগুনা (টেম্পু) ড্রাইভারের সাথে ভাড়া নিয়ে কথা-কাটাকাটি চলছিল এক যাত্রীর। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে যাত্রীর অভিযোগ, ‘চকবাজার থেকে আন্দরকিল্লা লেগুনার ভাড়া ১০ টাকা। কিন্তু এখন ২০ টাকা নিচ্ছে এই চালক।’
গ্যাস সংকটের বিষয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) বিপণণ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক (দক্ষিণ) প্রকৌশলী অনুপম দত্ত বলেন, কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনালের মধ্যে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনালটি গত ১ নভেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে। এটি গতকাল (বৃহস্পতিবার) চালু হওয়ার কথা ছিল। তবে চালু করা যায়নি। এ ছাড়া গতি (প্রেসার) না থাকার কারণে সামিট এলএনজি টার্মিনালটিও গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না। এ কারণে চট্টগ্রামে পুরোপুরি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তবে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই এ সংকটের সমাধান হবে।
এদিকে শুক্রবার দুপুরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এলএনজি রূপান্তরের টার্মিনালে কারিগরি ত্রুটির কারণে চট্টগ্রাম এলাকায় গ্যাস সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে জানিয়ে গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ