চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের খাওয়ার পানিতে ‘কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার’ পাওয়া গেছে। প্রকৃতিতে বা মাটিতে এ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি খুব স্বাভাবিক হলেও পানিতে এ রকম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি বড় বিপর্যয় ঘটাতে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
কারা সূত্র জানায়, কারাগারে পানির পাম্পের ১১টি। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রসের একটি টিমের সহায়তায় ১০টি সাবমার্সিবল পাম্পের পানির নমুনা পরীক্ষা করা হয় ঢাকার একটি ল্যাবে। একটি ছাড়া বাকি নয়টির প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদনে পাঁচটি সাবমার্সিবল পাম্পের পানিতে মিলেছে জীবাণু। এর মধ্যে তিনটির পানিতে মিলেছে ‘কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া’।
বর্তমানে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দির সংখ্যা ছয় হাজার। তারা এই পানি পানের পাশাপাশি ব্যবহার করছেন প্রতিদিন। পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর বন্দিদের জন্য একজন স্যানিটেশন ইন্সপেক্টর নিয়োগ দিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন। ওই কর্মকর্তা পানিসহ বন্দিদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলে এসব ক্ষতিকারক দিকগুলো নিয়ে তদারকি করবেন বলে জানা গেছে।
কারা কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, কারাগারের পয়োনিষ্কাশন (স্যুয়ারেজ) এবং পানির সংযোগ একাকার হয়ে এ ব্যাকটেরিয়া পানিতে মিশেছে। এ পানির ব্যবহার হচ্ছে বন্দিদের রান্না, গোসল, পয়োনিষ্কাশনসহ সব কাজে। এমনকি পানও করছেন বন্দিরা। বিষয়টি জানার পরও পানি সংকটের অজুহাতে পান ও ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
কারাবন্দিদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয় উল্লেখ করে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি রয়েছে এমন পানি দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে জন্ডিস, হেপাটাইটিস-এ, ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ওই পাঁচটি পাম্পের পানি পান ও ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা কারা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। পাশাপাশি পাম্পগুলো সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকেও চিঠি দিয়েছি। ওয়াসার পানির লাইন ও টয়লেটের স্যুয়ারেজ লাইন কোথাও ছিদ্র হয়ে গেছে। যার কারণে ওয়াসার লাইনে সরাসরি যুক্ত হয়ে যাওয়ায় খাওয়া ও ব্যবহারের পানিতে মল মিশে একাকার হয়ে গেছে। এ কারণে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি মিলেছে।’
তবে মানবাধিকার সংগঠকদের দাবি, বন্দিদের বিশুদ্ধ পানি পাওয়ার অধিকার আছে। এক্ষেত্রে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। এ পানি পানে যারা অসুস্থ হয়েছেন এবং হবেন তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার সৈয়দ শাহ শরীফ বলেন, ‘কারাগারে বন্দিদের জন্য ১১টি পানির পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে ১০টির পানির নমুনা পরীক্ষা করেছে ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রস। পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। তবে প্রতিবেদনে, এসব পানি খাওয়া যাবে না এ ধরনের কোনও তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। আর্সেনিকসহ কিছু ছোটখাটো সমস্যার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সব সময় কারাগার ভিজিট করেন। আমরা তাদের কাছে এসব প্রতিবেদন দিয়েছি। ব্যাকটেরিয়া দূর করার উপায় খোঁজা হচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, সমাধান করবেন। তখন সমস্যা থাকবে না। বছরের পর বছর এ পানি বন্দিরা পানসহ ব্যবহার করছেন। এখনও ব্যবহার অব্যাহত আছে।’
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আন্তর্জাতিক একটি সংস্থা কারাগারের ১০টি পাম্পের পানি পরীক্ষা করেছে। তার মধ্যে নয়টি পাম্পের প্রতিবেদন দিয়েছে সংস্থাটি। কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ওই প্রতিবেদনে নয়টি পাম্পের মধ্যে পাঁচটির পানিতে সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটিতে মিলেছে ‘কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া’। বাকি দুটিতে মিলেছে হার্ডনেস বৃদ্ধির বিষয়টি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব পাম্পের পানিতে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি মিলেছে সেগুলোর পানি দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে জন্ডিস, হেপাটাইটিস-এ, ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ওই পাঁচটি পাম্পের পানি পান ও ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা কারা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। পাশাপাশি পাম্পগুলো সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরকেও চিঠি দিয়েছি। ওয়াসার পানির লাইন ও টয়লেটের স্যুয়ারেজ লাইন কোথাও ছিদ্র হয়ে গেছে। যার কারণে ওয়াসার লাইনে সরাসরি যুক্ত হয়ে যাওয়ায় খাওয়া ও ব্যবহারের পানিতে মল মিশে একাকার হয়ে গেছে। এ কারণে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি মিলেছে।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্যের পরিচালক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘কারাগারের কয়েকটি পাম্পের পানিতে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি জানার পর পানি দূষণের কারণ ও উৎপত্তিস্থল উদঘাটনের কাজ শুরু করা হয়েছে। এ পানি পানে জন্ডিসসহ নানা ধরনের পানিবাহিত রোগ হতে পারে। যেহেতু কারাগারের ভেতরের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জন এবং স্যানিটেশনের বিষয় জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর তদারকের দায়িত্বে রয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর বিষয়টি জানার পর বিষয়টি দ্রুত সমাধান করার জন্য তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কারাগারে একজন স্যানিটেশন ইন্সপেক্টর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বন্দিদের খাবার পানিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখবেন।’
চাটগাঁ নিউজ/এসএ

 
															
 
								



