নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ মো. নুরুল ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সময়ে প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের পক্ষ থেকে আমাদেরকে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। কিন্তু বিচারক স্বল্পতা, আদালতগুলোতে কর্মচারী-কর্মকর্তা স্বল্পতা, মামলা জটসহ শত সমস্যার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে বিচার কাজ চালাতে হচ্ছে। কিন্তু আইনজীবী সহকর্মীদেরকে তো আমরা এসব বিষয় বলি না। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে আমরা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সাথে আইনজীবী সহকর্মীদেরকে অবশ্যই একাত্ম হতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে চলতি ২০২৫ সালে আমরা চট্টগ্রাম আদালতে রেকর্ড সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি করতে পারব ইনশাল্লাহ।
আজ বুধবার (৭ মে) বিকালে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন এবং চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে “আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ভূমিকা ও প্রতিবন্ধকতা” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
আলোচনা সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৭ম আদালতের বিচারক এবং বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনের সহসভাপতি ফেরদৌস আরা।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুস সাত্তারের সভ্পাতিত্বে ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরী সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর দায়রা জজ মো. হাসানুল ইসলাম, চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান এ.এস.এম. বদরুল আনোয়ার, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এস.এম. নছরুল কদির, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নওয়াজসহ চট্টগ্রামের বিচারক ও সিনিয়র আইনজীবীবৃন্দ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, মামলার সংখ্যার অনুপাতে বিচারকের পদ সৃজন করে মামলার জট কমিয়ে আনা একমাত্র সমাধান। অথচ বিচারকের পদ বৃদ্ধি বা বিচারকের পদ সৃজনের ক্ষমতা বিচার বিভাগের নেই। এ ক্ষমতা নির্বাহী বিভাগের হাতে ন্যস্ত। আবার আদালতের অবকাঠামোগত উনয়ন ও স্থাপন গ্রহণের ক্ষমতাও নির্বাহী বিভাগের হাতে ন্যস্ত।
বক্তারা বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে অনেক আদালত নিরপেক্ষতা দেখাতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। শাসক শ্রেণি এই ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলাসমূহ বিচারের ক্ষেত্রে অযাচিত প্রভাব বিস্তার করেছে। একইভাবে আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও বিচার বিভাগকে অযাচিত হস্তক্ষেপের মুখোমুখি হতে হয়।
বক্তারা বলেন, বিচার বিভাগের সক্ষমতাকে পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করতে বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু আইন মস্ত্রণালয়ের জন্য যে বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয় মোট বাজেটের ০.৩ থেকে ০.৮ শতাংশ যা মৎস্য ও পশু সম্পদ মস্ত্রণালয়ের মোট বরাদ্দের চেয়েও কম।
বক্তারা আরও বলেন, রাষ্ট্রের কোনো আইন বা সিদ্ধান্ত সংবিধান বিরোধী কিনা সে বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের ক্ষমতা শুধুমাত্র সুপ্রীম কোর্টের রয়েছে। তবে এই প্রতিষ্ঠানটি কখনো স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হতে পারেনি। বরং বিগত দশকে নানা সময়ে উচ্চ আদালতের ভূমিকা নিয়ে জনমনে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। সরকার সুপ্রীম কোর্টকে ব্যবহার করে নিজের রাজনৈতিক ফায়দা গ্রহণ করেছে। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন সুনির্দিষ্ট আইন বা নীতিমালা না থাকার সুযোগে সরকারের রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পাওয়াই সম্ভবত এ রূপ অবক্ষয়ের প্রধান কারণ।
বক্তারা বলেন, বিচারকদের পদ সৃজন, বাজেট প্রাক্কালন, বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাজেট বরাদ্দকরণসহ প্রাসঙ্গিক সকল ক্ষমতা সম্পন্ন একটি পৃথক “বিচার বিজাগীয় সচিবালয়” গঠনের কোনো বিকল্প নেই। ইতিমধ্যে সুপ্রীম কোর্ট বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ ২০২৫ প্রণীত হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা উক্ত অধ্যাদেশের বিধি বিধানের আলোকে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ প্রদান করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ন্যায় বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তাব প্রস্তুতক্রমে আইন মস্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছেন। আমাদের প্রত্যাশা সেটি দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন হবে। জুলাই গণঅভ্যুথানের পর রাষ্টের নানা বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান সংস্কারের জন্য সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। আমরা প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে এমন একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ দেখতে চাই যা রাষ্টের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুসংহত করবে এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করবে।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ