চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: রাজনৈতিক অস্থিরতায় রেললাইন কেটে ফেলা, নাট-বল্টু ও ফিশপ্লেট খুলে ফেলা, ট্রেনে আগুন, ককটেল নিক্ষেপ, রেলপথে প্রতিবন্ধকতা তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটছে। হামলা বা নাশকতার ঝুঁকিতে থাকা চট্টগ্রাম বিভাগে রেলপথের ১৬৮টি স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব স্পটে এক হাজার ১৫৭ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। এসব সদস্য ২৪ ঘণ্টা পাহারায় থাকবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সহকারী চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রেলওয়ে ট্র্যাকগুলো ওয়েম্যান, আরএনবি ও আনসার সদস্যদের মাধ্যমে দিনে এবং রাতে সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে প্রতি এক ঘণ্টায় সর্বনিম্ন একবার করে পেট্রোলিং করা হয়। এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য প্রতিটি কন্ট্রোল অফিসে কর্তব্যরত ওয়েম্যান, আরএনবি ও আনসার স্টাফদের মোবাইল নম্বর সংরক্ষণ করতে হবে।
এ ছাড়া বিশেষ করে রাত ১১টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত রেলওয়ে ট্র্যাকগুলো নিবিড়ভাবে পাহারার ব্যবস্থার বিষয়ে মনিটরিং করতে হবে। প্রয়োজনবোধে রেলওয়ে পুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও এসএসএই/ওয়েগণের অধীন স্টাফদের সমন্বয়ে অ্যাডভান্স পাইলটিংয়েরে ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে মোটর ট্রলি ও লোকাল ট্রেনের ইঞ্জিনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। স্টেশন মাস্টার, পরিদর্শকরা ও এসএসএই/ওয়েগণ নিজ নিজ এলাকায় থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে নিয়মিত কন্ট্রোল অফিসকে অবহিত করবেন।
প্রত্যেক ডিইএন, এইএন এবং এসএসএই/ওয়েগন তাদের অধীন ওয়েম্যানদের এলাকা উল্লেখ করে তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর ডিভিশনাল কন্ট্রোলে সরবরাহ করবে। ডিভিশনাল কন্ট্রোলের মোবাইল নম্বরগুলোও স্টাফদের সরবরাহ করতে হবে। একইসঙ্গে কন্ট্রোলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষার বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম-দোহাজারী পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার রেলপথে অবৈধ ক্রসিংয়ের সংখ্যা ৪৭। এসব এলাকা দিয়ে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি রয়েছে।
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-ঢাকা সরাসরি রেল যোগাযোগ শুরু হতে না হতেই রেল বিটের নাট-বল্টু খুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-ঢাকা এবং আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন হয়ে চট্টগ্রাম-সিলেট, সিলেট-চট্টগ্রাম, আখাউড়া হয়ে চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রেলপথে চলাচলকারী বিভিন্ন আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল ট্রেন চলাচলও ঝুঁকিতে রয়েছে।
রেল কর্মকর্তারা জানান, নাশকতা প্রতিরোধে রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্যরা কাজ করছেন। এর বাইরে যে ওয়েম্যানরা রেলপথ পরিদর্শনের দায়িত্বে আছেন, নাশকতা প্রতিরোধে তারাও তৎপর রয়েছেন। পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনাও রয়েছে। তবে রেলের এ বিশাল নেটওয়ার্ককে সম্পূর্ণভাবে নিরাপত্তা দেওয়া কঠিন। কেউ যাত্রীবেশে ট্রেনে উঠে নাশকতা করলে সেটা প্রতিরোধ করা কঠিন। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে যারাই এ ধরনের কাজ করছে, তাদের প্রতিরোধে যাত্রীসহ সাধারণ মানুষের সহযোগিতা দরকার। এজন্য প্রচার-প্রচারণা চলছে। ট্রেন, রেলপথ ও রেলের অবকাঠামো রক্ষায় নিয়োজিত কি-ম্যান ও মেট, আরএনবি ও রেলওয়ে পুলিশে প্রয়োজনীয় জনবল নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান বলেন, সাম্প্রতিক দুর্ঘটনা স্বাভাবিক ট্রেন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। রাতের ট্রেনগুলো চলাচলে গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ রেলপথগুলোতে কয়েক ঘণ্টা পর পর ট্রলি চালিয়ে দেখা হচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ ও আনসার সদস্যের মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।