নিজস্ব প্রতিবেদক : একে তো রোজার মাস, সাথে তাপদাহে অতিষ্ঠ নগরবাসী। এই সময়ে বাজারে তরমুজের চাহিদা প্রচুর। ভাজাপোড়ার পরিবর্তে অনেকেরই ইফতারে পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে তরমুজ। এই সুযোগকে পুঁজি করে পাইকারি ও খুচরা সব জায়গাতেই তরমুজের দাম আকাশচুম্বী, যা নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সাধ্যের বাইরে। এতে ক্ষুব্ধ ক্রেতা সাধারণ।
তরমুজের এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি নিয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা একে অপরকে দুষছেন। ক্রেতাদের আক্ষেপ শোনার যেন কেউ নেই।
সোমবার (১৮ মার্চ) নগরীর লাভলেইন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার একপাশে ভ্যানগাড়ির দীর্ঘ সারি। এসব ভ্রাম্যমান ভ্যানে তরে তরে তরমুজ সাজিয়ে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। তরমুজে হাত দিলেই বলে ৪০০-৬০০ টাকা। দাম শুনে বেশিরভাগ ক্রেতা আঁতকে ওঠছেন। ভ্যান থেকে ভ্যানে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করেই খালি হাতে ফেরত যাচ্ছেন অনেকে। দুয়েকজন কিনলেও চেহারা দেখে মনে হলো বাধ্য হয়ে কিনছেন। অবৈধ সিন্ডিকেট ভাঙতে তরমুজসহ সব ধরণের ফল বয়কটের ডাক ভোক্তাদের।
ক্ষুব্ধ ভোক্তারা জানান, রমজান মাস আসলে অন্যান্য দেশে নিত্যপণ্যসহ সব ধরণের জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেয়, নানা রকম ডিসকাউন্ট অফার দেয়। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো চিত্র। অসাধু ব্যবসায়ীরা রমজান এলেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় কোমড় বেঁধে নেমেন!
কথা হয় পঞ্চাশোর্ধ এক ক্রেতার সাথে। তিনি বলেন, ‘তরমুজের এত দাম জীবনে দেখিনি। আগে আমরা তরমুজ কিনতাম ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, এখন একটি তরমুজের দাম ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা। কিভাবে তরমুজ খাবো? এই তরমুজ গরীবদের জন্য নয়!’
নগরীর হেমসেন লাইন থেকে তরমুজ কিনতে এসেছিলেন এক সিএনজি অটোরিকশা চালক। তার কাছে মাঝারি আকারের একটি তরমুজের দাম হাঁকানো হয়েছে ৪০০ টাকা। কিন্তু এত দাম দিয়ে তরমুজ কেনার সামর্থ্য তার নেই। দাম শুনেই তিনি চলে যান।
মোটরসাইকেলে করে তরমুজ কিনতে আসেন এক তরুণ। তরমুজের দাম নিয়ে তিনিও অসন্তোষ। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি চাঁটগা নিউজকে বলেন, ‘রমজান মাস সওয়াব কামানোর মাস। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের গলা কেটে নিচ্ছে। ওরা বছরের ১১ মাস চুরি করে আর রমজানের একমাস ডাকাতি করে।’
এখনো তরমুজের পুরোপুরি মৌসুম না হলেও লাল রং ও মিষ্টির গ্যারান্টি দিয়ে বিক্রি করছে বিক্রেতারা। আকারভেদে এসব তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
তরমুজ কিনতে আসা একজন বেসরকারি চাকরিজীবী চাঁটগা নিউজকে বলেন, ‘তরমুজ নিতে আসছিলাম কিন্তু দাম শুনে বেহুঁশ হওয়ার অবস্থা। সাধ আছে, সাধ্য নেই। একটি তরমুজের দাম হাঁকচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, কিভাবে খাবে মানুষ?’
জানতে চাইলে আরেকজন ভোক্তা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘আমি তরমুজ বয়কট করছি, আপনারাও বয়কট করুন। বয়কট করলে তারা কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হবে, যেহেতু এটি পঁচনশীল ফল, কিছুদিন না কিনলে দাম এমনিতেই কমে যাবে।’
তরমুজের দাম এত বাড়তি কেন জানতে চাইলে এক বিক্রেতা চাঁটগা নিউজকে জানান, ‘হঠাৎ গরম বেড়ে গেছে, তারওপর রমজান। তাছাড়া এখনো সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়। পরিবহন খরচও বেড়েছে। এ সবকিছুর প্রভাব পড়েছে তরমুজের ওপর। ’
এদিকে তরমুজসহ সব ধরণের নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার তদারকি অভিযান অব্যাহত রেখেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও অভিযান চলছেই। তাতেও কাজ হচ্ছে না। ম্যাজিস্ট্রেট দেখলেই দাম ক্ষণিকের জন্য স্বাভাবিক থাকলেও পরে আরও চড়া হয়ে যায় যে কোনো নিত্যপণ্যের দাম।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ