নিজস্ব প্রতিবেদক : আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ক্ষমতায় বসার আগেই ক্ষমতার স্বাদ পেতে দলটির নেতাকর্মীরা যেন একেবারে এক পায়ে খাঁড়া। অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস না পেরুতেই বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়িয়ে পড়ছে সংঘর্ষ হামলা, খুনোখুনির মত ঘটনায়। আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির মোক্ষম সময়ে সৃষ্ট সংঘর্ষ, হত্যাকাণ্ডসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে রীতিমত ‘বিব্রত’ বিএনপির হাইকমান্ড।
১১ অক্টোবর রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর বায়েজিদ থানার শান্তিনগর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সবুজ ও কৃষক দলের নেতা শাহ আলমের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে মোহাম্মদ ইমন নামে এক যুবক গুরুত্বর আহত হয়ে পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
২০ সেপ্টেম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত একটি টার্ফের দখল নিতে নগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ হোসেন দিপ্তী ও কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মো. আমিনের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে জোবায়ের উদ্দিন বাবু নামের যুবদলের এক কর্মী নিহত হয়।
২১ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রামের সেগুনবাগিচা বাগানবাড়ি এলাকায় রেলের জায়গা দখল নিয়ে স্থানীয় বিএনপির সমর্থক এরশাদের সাথে ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নয়ন, খুলশী থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাসান ও রেলওয়ে শ্রমিক দলের নেতা আরিফের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন।
২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা থেকে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী ছাত্রদল নেতা জয়নাল আবেদিন ও সাজ্জাদ হোসেনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে অপহৃত দুই নেতাকে মুমুর্ষূ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বকালীন দুই মাসে চট্টগ্রামে ঘটে যাওয়া চারটি ঘটনার মধ্যে শুধু একটি ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হলেও বাকি ঘটনায় আনুষ্ঠানিক কোন ব্যবস্থা নেওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন চাটগাঁ নিউজকে বলেন, বায়েজিদের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে নগর বিএনপির নির্দেশে স্ব স্ব অঙ্গ সহযোগী সংগঠন ব্যবস্থা নিয়েছে। বিএনপির পাঁচলাইশ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মো. সবুজ ও তার ভাই নগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এবং কৃষক দল নগর শাখার যুগ্ম আহবায়ক শাহ আলমকে বহিস্কার করা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত দেয়া আছে। তাছাড়া আইনিভাবেও ঘটনায় জড়িতদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অভিযুক্তদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।
তবে তিনি এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি জানান, সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা পালিয়ে গেছেন। তবে সেই দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা বিএনপিতে অনুপ্রবেশ করে এসব কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে। তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতেই হবে। তা নাহলে এরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠবে।
চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/এসএ