চট্টগ্রামের ১৬ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে যারা! 

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্তকরণের কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ লক্ষ্যে গুলশান দলীয় কার্যালয়ে আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভাইভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে চট্টগ্রামের ১৬টি আসন থেকে ৪৫ জনকে ডাকা হয়েছে বলেও দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

দলীয় সূত্রে আরো জানা গেছে আগামীকাল সোমবার বা মঙ্গলবারের মধ্যে চূড়ান্ত প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করা হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের প্রার্থী যাচাই-বাছাই করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্বয়ং নিজে। প্রার্থীদের যোগ্যতা, জনসম্পৃক্ততা এবং দলের প্রতি নিষ্ঠা বিবেচনায় তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলায় মোট ১৬টি আসনে প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে শুরু হয়েছে জোর গুঞ্জন। প্রতি আসনে একাধিক প্রার্থী থাকায় চলছে কূটনৈতিক তৎপরতা ও লবিং। নগর ও উত্তর জেলা বিএনপির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও স্পষ্ট। কেন্দ্র এবার অভ্যন্তরীণ কোন্দল পরিহার করে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত করার ওপর জোর দিচ্ছে।

একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জানান, প্রতিটি আসনে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকার কারণে প্রার্থী বাছাই করতে বিএনপিকে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। তাই প্রতিটি আসনের সব মনোনয়ন প্রত্যাশীকেই ডাকা হয়েছে।

তবে এর আগে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা আসনভিত্তিক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে পৃথকভাবে কথা বলেছেন। গত আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে এসব বৈঠক হয়েছে। মূলত বিশৃঙ্খলা এড়াতে এই উদ্যোগ।

চট্টগ্রামের ১৬ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী যারা

চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই): উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, প্রবাসী পারভেজ সাজ্জাদ।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি): উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার আলমগীর, গবেষণা সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, উপজেলা আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মো. আজিম উল্লাহ বাহার, ছালাহ উদ্দিন আহমেদ ও বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়জী।

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ): সাবেক এমপি মোস্তফা কামাল পাশা ও কেন্দ্রীয় সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড): সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরী এফসিএ।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী-বায়েজিদ): কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ব্যারিস্টার সাকিলা ফারজানা ও চাকসুর সাবেক ভিপি এস এম ফজলুল হক।

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান): সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা  গোলাম আকবর খোন্দকার।

চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া): কেন্দ্রীয় সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী।

চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও–বোয়ালখালী): মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ।

চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী–বাকলিয়া): নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও চসিকের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর ও কেন্দ্রীয় সদস্য শামসুল আলম।

চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং–পাহাড়তলী–হালিশহর–খুলশী): সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মরহুম আবদুল্লাহ আল নোমান পুত্র সাঈদ আল নোমান।

চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর–পতেঙ্গা–ইপিজেড–সদরঘাট): স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও  ইসরাফিল খসরু চৌধুরী।

চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া): দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম।

চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা–কর্ণফুলী): সাবেক এমপি সরওয়ার জামাল নিজাম ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান।

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ–সাতকানিয়া আংশিক): এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ও ছেলে ওমর ফারুক।

চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া–লোহাগাড়া): অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন, নাজমুল মোস্তফা আমিন ও মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান।

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী): সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা।

চট্টগ্রাম-১ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী নুরুল আমিন চেয়ারম্যান বলেন, ‘বহিষ্কারাদেশ ইতোমধ্যে তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে মনোনয়ন নিয়ে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি। চূড়ান্ত নির্দেশ না আসা পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।’

চট্টগ্রাম-২ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী সরোয়ার আলমগীর বলেন, ‘দল আমাকে মনোনয়ন দিলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের জয় হবে। দলের স্বার্থে অনেক ত্যাগ করেছি, এখন সেই ত্যাগের মূল্যায়নের সময় এসেছে।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ‘কোনো আসনে এখনও চূড়ান্ত প্রার্থী নির্ধারণ হয়নি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন তারেক রহমান।’

চট্টগ্রামে বিএনপি’র একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর সাথে আলাপকালে তারা জানান, খুব টেনশন হচ্ছে। দল মনোনয়ন কাকে দেয় তা বলা মুশকিল। নিজে না পেলে দল যাকে দেয় তার সাথে কাজ করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। ৫ আগস্টের পর শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে যে পরিমাণ নেতা বহিষ্কার হয়েছে, অতীতে সেরকম আর হয়নি। দল এবার শৃঙ্খলার উপর খুব বেশি জোর দিয়েছে। তাই দলীয় সিদ্ধান্ত না মানলে বহিষ্কার হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে তারা প্রত্যেক্যেই আশাবাদী। তাদের আশা দল তাদের ত্যাগের মূল্যায়ন করবে।

গত ১৭ বছর দলের আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি গুরুত্ব দেবে। অসংখ্য মামলার আসামি হয়ে জেল খাটা, পরিবারের উপর নির্যাতন, আয়ের পথ রুটি-রোজগারের পথ বন্ধ করে দেয়া সবকিছুর মূল্যায়ন হবে। এবার ভাগ্যের পরীক্ষা হবে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ/এসএ

Scroll to Top