পড়া হয়েছে: ১৮
নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের সাবেক জেলা সমবায় কর্মকর্তা ও বর্তমান নোয়াখালী জেলা সমবায় অফিসার মুরাদ আহম্মদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজুর নির্দেশ দিয়েছে সমবায় অধিদপ্তর। সমবায় অধিপ্তরের নিবন্ধক ও পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম গত ৯ মার্চ এই আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সমবায় অধিদপ্তর উপ নিবন্ধক ও যুগ্মনিবন্ধক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মুরাদ আহম্মদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের দু’দফা তদন্ত করে কর্মকর্তারা। তদন্তে মুরাদ আহম্মদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, সরকারি কাজে গাফিলতি ও আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়া, চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির কোটি কোটি টাকার সম্পদ বেআইনিভাবে হস্তান্তর, আর্থিক সুবিধা আদায়ের প্রমাণ পাওয়া যায়।
জানা যায়, মুরাদ আহম্মদ চট্টগ্রামে ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর পাঁচলাইশ থানা সমবায় অফিসার হিসাবে যোগ দেন। এরপর থেকে দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে একই ভবনের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে তাকে ঘিরে একটি চক্র গড়ে উঠে। ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর জেলা সমবায় অফিসার চট্টগ্রাম হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এর আগে তিনি চট্টগ্রামের উপসহকারী নিবন্ধক হিসেবে জেলা সমবায় অফিসার কক্ষের পাশের রুমে কর্মরত ছিলেন।
মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের ৮ জুলাই ২০১৫ তারিখের পরিপত্র অনুযায়ী একই পদে তিন বছরের অধিককাল কর্মরতদের অন্যত্র বদলির বিধান রয়েছে। তবে এই কর্মকর্তার ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটেছে। তিনি নানা তদবির তোড়জোড়ের মাধ্যমে একই ভবনের বিভিন্ন কক্ষে বিভিন্ন পদে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন।
জেলা সমবায় কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি. কার্যকর থাকা অবস্থায় সমিতির পশ্চিম ষোলশহর মৌজায় শেরশাহ সাংবাদিক হাউজিং প্রকল্পে সমিতির কতিপয় সদস্য এবং প্লট ক্রেতা ২৫ জন ব্যক্তির সমন্বয়ে শেরশাহ সাংবাদিক হাউজিং এলাকা প্লট মালিক কল্যাণ সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে আরেকটি সংগঠনকে নিবন্ধন দিয়ে দেন। এতে সমিতির জমি-জমা নিয়ে দুটি পক্ষ সৃষ্টি হলে বিরোধ শুরু হয়। পরষ্পর যোগসাজশের মাধ্যমে বৈধ সমিতির অফিসসহ বিভিন্ন সম্পত্তি তাদের হাতে তুলে দেয়ার অভিযোগ উঠে।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি. এর অফিসসহ সমিতির সম্পত্তি বহিরাগতদের হাতে তুলে দেয়ার বিষয়ে ২০২২ সালের ১৫ মে, সমিতির সাবেক সম্পাদক হাসান ফেরদৌসের পক্ষ থেকে জেলা সমবায় কর্মকর্তা, মুরাদ আহম্মদ বরাবরে লিখিত অভিযোগ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে জেলা সমবায় কার্যালয় ২০২২ সালের ২৬ জুন উপসহকারী নিবন্ধক মিন্টু বড়ুয়ার নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে রহস্যজনক কারণে তদন্ত কার্যক্রম থেমে যায় এবং বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয়।
পরবর্তীতে জানা গেছে, জেলা সমবায় কার্যালয়ের কর্মকর্তা মিন্টু বড়ুয়াকে তদন্তে দায়িত্ব দিয়ে চিঠি ইস্যু করা হলেও সে চিঠি তাকে দেয়া হয়নি।
মিন্টু বড়ুয়া (স্মারক নং ৮৪৭, ৩০/০৬/২০২৪ জেলা সমবায় কার্যালয়, পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি) এক পত্রে জেলা সমবায় কার্যালয়, চট্টগ্রামকে জানান, তিনি এবং যাদের কমিটির সদস্য করা হয়েছে তারা অবগত নন এবং তদন্ত কমিটি গঠন সংক্রান্ত পত্র পাননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলি আরো জানায়, সমবায় সমিতি আইনে অর্ন্তবর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ ১২০ দিন। মুরাদ আহম্মদ চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি. সহ বিভিন্ন সমবায় সমিতির নির্বাচন আয়োজনে নানা জটিলতা তৈরি করে তাঁর অনুগতদের দিয়ে অর্ন্তবর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করেন। এসব কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সমবায় সমিতি আইন লংঘনের সুনিদিষ্ট তথ্য তদন্তে পাওয়া যায়।
এ কর্মকর্তার দুর্নীতির বিষয়ে বলতে গিয়ে চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি. এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস বলেন, মুরাদ আহম্মেদের দুর্নীতি অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। তার দুর্নীতির তদন্ত করার জন্য যাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, সেসব কর্মকর্তাকে তদন্ত দায়িত্ব অর্পণের বিষয়টি জানানোও হয়নি। মুরাদ আহম্মেদ নানা কৌশলে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে ধামাচাপা দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক কো অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লি. এর অফিসসহ সমিতির সম্পত্তি আরেকটা সমিতি নিবন্ধন প্রদানের মাধ্যমে অসদস্যদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এজন্য তার কাছে অভিযোগও দিয়েছিলাম। কিন্তু সে সমস্যার কোন সদুত্তর পাইনি। তার কারণে বঞ্চিত হয়েছেন প্রায় ৪০০ জন সাংবাদিক। এ কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, আমরা এটাই চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানান, সমবায় অধিদপ্তরের আইন শাখার উপনিবন্ধক কামরুজ্জামান মুরাদ আহম্মদের বিভিন্ন অনিয়ম দুনীর্তি তদন্ত করে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। তদন্ত প্রতিবেদনে মুরাদ আহম্মদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়।
বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সমবায় অধিদপ্তর ২০২৩ সালে দেয়া সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সমবায় অধিদপ্তর। এর অংশ হিসাবে মুরাদ আহম্মদকে চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করে নোয়াখলীতে পাঠানো হয়। গত ৯ মার্চ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের নির্দেশ দেয়া হয়।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী জেলা সমবায় অধিদপ্তর কার্যালয়ে কর্মরত মুরাদ আহম্মদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি চট্টগ্রামে চাকরিরত ছিলাম। আমি একজন সরকারি কর্মকর্তা। বিভাগীয় মামলার সুপারিশের চিঠিটি আমার কাছে এসেছে। আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অনিয়মের কোনো কথা কি চিঠিতে আছে? এগুলো অফিসিয়াল কনফিডেন্সিয়াল বিষয়। একজন সংবাদকর্মীর সাথে এসব নিয়ে কি কথা বলা যায়?
চাটগা নিউজ/ইউডি/এসএ