সিপ্লাস ডেস্ক: নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী-ফৌজদারহাট সড়কের টোল নির্ধারণ করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। যা সংশোধিত ডিপিপির (ডিটেইল প্রজেক্ট প্ল্যান) মাধ্যমে প্রস্তাব আকারে সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। টোল আদায় শুরু হলে এটিই হবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রথম টোলযুক্ত সড়ক। যানবাহন বিবেচনায় ন্যূনতম ১০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২০০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে এই সড়কে। টোল আদায়ের জন্য ফৌজদারহাটের মুখে একটি টোল প্লাজা নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বায়েজিদ বোস্তামী-ফৌজদারহাট সড়কের টোল আদায় এবং রক্ষণাবেক্ষণের সিডিএ’র টেন্ডারের আহ্বানের বিপরীতে গত ১৯ এপ্রিল সাত প্রতিষ্ঠান টেন্ডার শিডিউল ক্রয় করে। গতকাল দুপুরে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলীর রুমে টেন্ডার ওপেনিং হয়েছে। যেখানে টোল আদায়ের দায়িত্ব নিতে তিনটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে (দরপত্র) অংশগ্রহণ করেছে। ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ পাহাড় ঘেঁষা এই সড়ক অনেকের কাছে বায়েজিদ লুপ রোড নামে পরিচিত।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বায়েজিদ বোস্তামী-ফৌজদারহাট সড়ক প্রকল্প ব্যয় ৩২০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি করে সংশোধিত ডিপিপি (ডিটেইল প্রজেক্ট প্ল্যান) অনুযায়ী ৩৫৩ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করে সিডিএ। প্রকল্পে ৩৩ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির এমন আবেদনের পর জিওবির পরিবর্তে সিডিএ’র নিজস্ব তহবিল থেকে এই টাকা খরচের নির্দেশ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মতে প্রকল্প বাস্তবায়নে সিডিএ’র নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৩ কোটি টাকা দিতে হবে। সিডিএ’র এই টাকা তুলতেই টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা যায়। ফলে অন্য সড়কের ন্যায় প্রকল্পের কাজ শেষে সড়কটি সিটি কর্পোরেশনকে বুঝিয়ে না দিয়ে সিডিএ’র তত্ত্বাবধানে রাখা হবে। টিকাদারের মাধ্যমে টোল আদায় এবং সড়কের রক্ষণাবেক্ষণের কাজও করা হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে এই টাকা আদায় হলে পরবর্তীতে তা সিটি কর্পোরেশনকে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আসাদ বিন আনোয়ার বলেন, ব্যয় বৃদ্ধির অতিরিক্ত ৩৩ কোটি টাকা সিডিএ’র নিজস্ব ফান্ড থেকে ব্যবহার করতে বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সিডিএ চেয়েছিল এই টাকা জিওবি থেকে নিতে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তির ফলে টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয় সিডিএ।
তিনি আরো বলেন, সাতটি প্রতিষ্ঠান শিডিউল নিলেও তারমধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- এমজিসি জেবি লিমিটেড, শামীম এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারস লিমিটেড এন্ড স্ক্যাপ বাংলাদেশ লিমিটেড জেবি। তবে এই কাজ কে পাচ্ছে তা চলতি মাসের মধ্যে নির্ধারণ করবে টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি।
যানবাহনের টোলের হার : মোটরসাইকেল (দুই চাকা) ১০ টাকা, সিএনজি চালিক ট্যাক্সি এবং অটো ( তিন চাকা) ১৫ টাকা। কার, জিপ ও মাইক্রোবাসের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা। পিকআপ ও মিনি বাসের টোল ৮০ টাকা। বাস ১০০ টাকা, ট্রাক (চার চাকা) ১২০ টাকা, ট্রাক (৬ চাকা) ১৫০ টাকা এবং ট্রেইলার ও কাভার্ড ভ্যানের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০ টাকা।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে সড়কে টোল আদায় এবং সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানকে ৫ বছরের জন্য দায়িত্ব দেয়া হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে সিডিএ’র নিজস্ব তহবিল থেকে যে ৩৩ কোটি টাকা দিতে হচ্ছে তা উঠে গেলে পরবর্তীতে তা সিটি কর্পোরেশনে হস্তান্তর করা হবে।
সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, যেহেতু সিডিএ’র নিজস্ব ফান্ড দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তাই টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে সিডিএ যে টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা খুবই সামান্য।
উল্লেখ্য, নগরীর যানজট সমস্যার সমাধানকল্পে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বাস্তাবায়নাধীন বায়েজিদ বোস্তামী থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত চট্টগ্রামের প্রথম বাইপাস সড়ক। এই সড়কে নির্মাণ করা হচ্ছে ১২টি কালভার্ট ও ছয়টি ব্রিজ। ৩২০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫২ কোটি টাকার ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেন বিশিষ্ট এই প্রকল্পের একাধিকবার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকেল্পর মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।