নিজস্ব প্রতিবেদক: ইফতার ও ইফতার পরবর্তী এক প্লেট সেমাই মুখে আলাদা স্বাদ এনে দেয়। রমজানে ও ঈদে হরেক রকম সেমাইয়ের কদর ঘরে ঘরে। তবে চাটগাঁবাসীর কাছে খুবই জনপ্রিয় বিশেষ একধরনের সেমাই। যা ‘ফকির কবিরের চাক সেমাই’ নামে সবার কাছে পরিচিত। ১৯৩৬ থেকে দীর্ঘ ৮৯ বছর ধরে নগরের চকবাজারের এই সেমাই ধরে রেখেছে সুনাম। শুধু তাই নয়, ভেজালের এই যুগে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ছাড়াই সেমাই তৈরি করে আসছে মেসার্স ফকির কবির।
ফকির কবির বেকারির অবস্থান
বহদ্দারহাট-চকবাজার রোডে কাপাসগোলা স্কুলের পাশে অবস্থিত ফকির কবির বেকারি। প্রায় দুইশ বছর ধরে নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এ চাক সেমাই। প্রতি বছর রমজান এলেই এ সেমাইয়ের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বছরের অন্যান্য সময় ফকির কবির বেকারিতে চাক সেমাই বিক্রি করা হলেও রমজানে নগরীর বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হয় এই চাক সেমাই।
সেমাই তৈরি হয় যেভাবে
আধুনিক যুগে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অত্যাধুনিক মেশিনে বাংলা সেমাই, লাচ্ছা সেমাই, বোম্বাইয়া সেমাইসহ নানা জাতের সেমাই তৈরি করছে। তবে ফকির কবির বেকারির চাক সেমাই এখনো পুরাতন নিয়মে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়ে থাকে। প্রথমে বড় কড়াইয়ে কাঠের তৈরি কাঠি দিয়ে গরম পানির সাথে ময়দার মিশ্রণে খামি বা কাই তৈরি করা হয়। তারপর সেই কাই বা খামিকে ধান মাড়াই মেশিনের মত দেখতে একটা মেশিনের ফানেলে ঢালা হয়।
এবার কাই ঢালা হলে মেশিনে আড়াআড়িভাবে বাঁধা লম্বা একটা কাঠ বা বাঁশ ধরে দুজন লোক ঘোরাতে থাকেন খামির উপর চাপ পড়ার জন্য। ফানেলের কাইয়ের উপর চাপ পড়লে সেই কাই একটি ডাইসের ভিতর দিয়ে নিচে সেমাই হয়ে পড়তে থাকে। পড়ন্ত সেমাইগুলোকে একেকটি ডালায় চাক আকৃতিতে সংগ্রহ করা হয়। তারপর এই সেমাই ভর্তি ডালাগুলো রোদে শুকিয়ে তন্দুরিতে দিয়ে আগুনের আঁচ লাগানো হয়। আগুনের আঁচে সেমাইগুলো লালচে রং ধারণ করে। তারপর এ সেমাই বিক্রির জন্য ডালা থেকে টুকরিতে নিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়। চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে বিভিন্ন দেশে রয়েছে এর কদর।
নামকরণের ইতিহাস
ফকির কবীর বেকারির প্রতিষ্ঠাতা কবীর আহম্মেদ একজন সুফী ঘরানার মানুষ ছিলেন। তিনি মাইজভান্ডার শরীফের অনুরাগী এবং একজন আধাত্মিক সাধক ছিলেন। তাই মাইজভান্ডার শরীফের মুরিদ, ভক্ত অনুরাগীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে কবীর আহম্মেদ ‘ফইর কবীর’ নামে পরিচিতি পান।
প্রতিষ্ঠানের বর্তমান স্বত্বাধিকারী আবু আহম্মেদ জানান, আমার বাবা প্রয়াত কবির আহম্মেদ সুফী ঘরানার মানুষ ছিলেন। ১৯৩৬ সালে তিনি ভাড়া দোকানে প্রথম এই ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে দোকানের জায়গাটি কিনে নেন তিনি। তার আমলেই এই সেমাইয়ের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এখন অনেক কোম্পানি সেমাই তৈরি করেন। তবে আল্লাহর রহমতে আমাদের সেমাইয়ের সুনাম আলাদা। আমরা আমাদের গুণমান অক্ষুন্ন রেখে এ সেমাই বানাই।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ