নিজস্ব প্রতিবেদক: অবৈধ অর্থ লেনদেনের অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) গোলাম কিবরিয়াকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে চবি প্রশাসন।
আজ মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে অস্থায়ী নিয়োগের নামে ঘুষ লেনদেনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, নিরাপত্তা দপ্তর প্রধান গোলাম কিবরিয়া একজন ব্যক্তির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ব্যাংকে প্রবেশ করে নগদ অর্থ উত্তোলন করেন। তিনি এক লাখ টাকা গ্রহণ করার পাশাপাশি বাকি অর্থ নিয়ে দর কষাকষি করেন গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে।
জানা গেছে, ‘জেরিন গ্রুপ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের এমডি ফরিদের সঙ্গে আগের চুক্তি অনুযায়ী নিরাপত্তা দপ্তরে অস্থায়ীভাবে নিয়োগের কথা বলে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা নেন চবির নিরাপত্তা প্রধান গোলাম কিবরিয়া।
পরে বিষয়টি ভাইরাল হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সই করা এক অফিস আদেশে গোলাম কিবরিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
যেখানে বলা হয়েছে— চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) গোলাম কিবরিয়াকে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনে সম্পৃক্ততার অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। তিনি সাময়িকভাবে বরখাস্ত থাকাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী জীবিকা ভাতাদি পাবেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে— গোলাম কিবরিয়া ৫ আগস্ট পরবর্তী নিজেকে জামায়াত নেতা দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাব বিস্তার করা শুরু করে। নিয়োগ বাণিজ্য, অবৈধ কাঠ পাচার, ক্যাম্পাসজুড়ে সুদের ব্যবসার সাথে তার রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। তার কাছে থেকে ধার নেয়া টাকার সুদের হার যেন মনে করিয়ে দেয় গরীবদের রক্তচোষা দাদন ব্যবসায়ী মহাজনদের কথা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মচারীর অভিযোগ— ১০ হাজার টাকা এক সপ্তাহের জন্য নিলে বিনিময়ে সুদ দিতে হয় এক হাজার। ১ লাখ টাকায় সপ্তাহ শেষে সুদ দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। ২০ হাজারের উপরে ঋণ নিতে গেলে অনুমোদন লাগে ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম কিবরিয়ার। ঋণ গ্রহণের সময় নির্দিষ্ট অংকের চেক নিয়ে থাকেন ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌস, যে কিনা কিবরিয়ার সুদি কারবারের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত। সুদের এই ব্যবসা গোটা ক্যাম্পাসজুড়ে ‘ওপেন সিক্রেট’। মাঝে মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা দপ্তরে সুদ আদায় নিয়ে দ্বন্দ্ব হলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে বসতো বৈঠক। সুদ আদায়ে নিরাপত্তা প্রধান হিসেবে অসহায় কর্মচারীদের উপর ভয়ভীতি দেখিয়ে চাপ তৈরি করার অভিযোগও রয়েছে ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে।
চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এসেছে। তার একটি ভিডিও ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ