নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাণিকূলের মধ্যে সবচেয়ে নিরীহ প্রাণি গরু। যাকে আদর করে অবলা প্রাণি ডাকা হয়। সেই অবলা প্রাণিকে এবার হাতিয়ার বানানো হয়েছে ক্ষতিপূরণের।
ঘটনাটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার, যেখানে আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) ভোরে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হন ৫ শিক্ষার্থী। ভাঙচুর হয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর দোকান। তার জেরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী এলাকা ফতেপুরের চিহ্নিত চাঁদাবাজ যুবলীগ নেতা ছোট হানিফের গোয়াল ঘর থেকে ১টি ষাঁড়, ৫টি দুধেল গাই ও ২টি বাছুর নিয়ে যায় শিক্ষার্থীরা।
এতেই শোরগোল পড়ে যায় পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে। দুধেল গাই আনার খবরে ক্যাম্পাসের বেশ কিছু শিক্ষার্থী ঘটি-বাটি ও প্লাষ্টিকের বোতল নিয়ে হাজির চবির জিরো পয়েন্টে। সেখানে ‘স্মরণ চত্বরে’ বেঁধে রাখা দুধেল গাই থেকে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু করেন দুধ দোহনের। কেউ এক পোয়া, কেউবা আধা লিটার আবার কেউ কেউ এক ফোটা দুধ দোহন করতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। দুধ দোহনের ভিডিওটিও রীতিমতো ভাইরাল। বিষয়টি হাস্যরস সৃষ্টি করলেও ঠুনকো ছুঁতোয় চবি শিক্ষার্থীদের মারধর করা স্থানীয় বাসিন্দাদের কঠিন বার্তা দিয়ে রেখেছেন।
মুজাহিদ রাকিব নমের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি প্রায় এক পোয়ার কাছাকাছি দোহন করতে পেরেছি। তবে আমরা এটা নিয়ে আনন্দ করলেও স্পষ্টত এটা আমাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তারা আমার ভাইয়ের ওপর হামলা করেছে এর শোধ আমরা নিয়ে ছাড়ব।
অন্তর সফিউল্লাহ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এই ঘটনা অপ্রত্যাশিত। আমরা অবলা প্রাণির ওপর শোধ নিতে ইচ্ছুক না। তবে যারা ভোরবেলা ঘুমন্ত ছাত্রদের ওপর হামলা করেছে আমরা তার বিচার চাই। অবিলম্বে ছোট হানিফকে গ্রেপ্তার করতে হবে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন সংলগ্ন কয়েকটি দোকানের নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় যুবলীগ নেতা হানিফের কাছে ছিল। দোকানগুলো রেলওয়ের জায়গায় অবস্থিত। এই জায়গায় দোকান পরিচালনা করতে হলে হানিফকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হতো।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মোহাম্মদ হানিফ এলাকা ছাড়লেও নিয়ন্ত্রণ ছাড়েননি। সরকার পতনের পর তার নিয়ন্ত্রিত একটি জায়গায় খাবারের দোকান তৈরি করার উদ্যোগ নেন চট্টগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী শেখ মাহদি হাসানসহ চবির আরো কয়েকজন ছাত্র। গত দুই মাস ধরে দোকানের মেরামত ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করছিলেন তিনি। কিছুদিন পরেই ‘আপ্যায়ন’ নামের এই খাবার হোটেলটি চালু হওয়ার কথা ছিল।
তবে হানিফের অনুসারীরা এতে বাধা দেন। দোকান পরিচালনা করতে হলে চাঁদা দিতে হবে বলে দাবি করেন। এ নিয়ে গত শুক্রবারও দোকানটিতে হামলার ঘটনা ঘটে। এসব নিয়ে বিবাদের মধ্যে আজ ভোর রাতে এই দোকানটিতে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় কয়েকটি ফটকা ও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলি ছোড়ার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে জিরো পয়েন্টে জড়ো হন। পরে সেখানে সকাল ৭টার দিকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে হানিফকে না পেয়ে তার খামারের গরু নিয়ে আসেন শিক্ষার্থীরা। দোকান ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলে তবেই তারা গরুগুলো ফেরত দেবেন বলে জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, আমরা সকালেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গরুগুলো হেফাজতে নিয়েছিলাম। সন্ধ্যায় এক বৈঠকে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী মিলে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করেছি। এই কমিটি আগামীতে এ ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কাজ করবে। রাত ৯টার দিকে স্থানীয়দের কাছে গরুগুলোকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে, যুবলীগ নেতা ছোট হানিফকে গ্রেপ্তারে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া আছে বলেও জানান প্রক্টর।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ/এসএ