ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই: ষাটোর্ধ্ব সাফিয়া খাতুনের জীবন চলে খেয়া নৌকার বৈঠা বেয়ে। রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের সীতাঘাট এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে খেয়া নৌকা চালান তিনি। বয়সের ভারে শরীরে ক্লান্তি এলেও জীবিকার তাগিদে চালাতে হয় নৌকা। দৈনিক যা আয় হয় তাতেই কোন রকমে তার সংসার চলে।
কোনদিন ১০০ টাকা, কোনদিন ২০০ টাকা। আবার কোনদিন এক টাকাও ইনকাম হয় না। বলতে গেলে অভাবকে নিত্য সঙ্গী করে যিনি এই বয়সে সংসারের বোঝা বয়ে যাচ্ছেন।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) সকালে ঘাটে কথা হয় সাফিয়া খাতুনের সাথে। তিনি জানান, শিলছড়ি সীতাঘাট এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম তার স্বামী। তিনিও নৌকার মাঝি ছিলেন। ৩ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর সাফিয়া নিজের হাতে তুলে নেন বৈঠা। তার চার মেয়ে এক ছেলে। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেও বিয়ে করে বউ নিয়ে আলাদা থাকে। তিনি ছোট মেয়েকে নিয়ে এই বুড়া বয়সে সংসারের বোঝা বয়ে যাচ্ছেন।
কথা বলতে বলতে সাফিয়া খাতুনের চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়েও পড়ল গাল বেয়ে। একটু নিরব থেকে আবার বলতে শুরু করলেন, কিস্তি নিয়ে নৌকা করেছি। সারাদিন যা আয় হয় তার থেকে কিস্তির টাকা দিয়ে কোনো কোনো সময় এক টাকাও থাকে না। তখন না খেয়ে থাকতে হয়। সরকারের কাছ থেকে সামান্য বিধবা ভাতা পাই। টানাটানিতে চলছে জীবন।
তিনি বলেন, ঘাটে সবসময় যাত্রী থাকে না। সীতাঘাট মা সীতা মন্দিরে ধর্মীয় উৎসব থাকলে চার-পাঁচশ টাকা আয় হয়। এমনিতে ১০০-২০০ টাকার বেশি হয় না। আবার মাসে গড়ে ৬-৭ দিন এক টাকাও আয় হয় না। তখন না খেয়ে থাকতে হয়।
সীতাঘাট রাম সীতা মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ জ্যোর্তিময়ানন্দ মহারাজ বলেন, আমি প্রায়ই সাফিয়া খাতুনের নৌকায় করে নদী পার হই। যতটুকু পারি তাকে সহায়তা করার চেষ্টা করি। এই বয়সে অনেক কষ্ট করছে মহিলাটি।
৫ নং ওয়াগ্গা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সরোয়ার বলেন, বিধবা এই মহিলা বৃদ্ধ বয়সে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। শুনেছি ছেলেও খোঁজখবর রাখে না। এক মেয়েকে নিয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। আমি তাকে ভিজিডি কার্ডের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ভবিষ্যতে পরিষদের পক্ষ হতে আরও সহায়তা করার চেষ্টা করবো।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ