সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও প্রতিনিধি: কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহি খুটাখালী কিশলয় আর্দশ শিক্ষা নিকেতনের একমাত্র ফুটবল খেলার মাঠ (লম্বাতলী) স্থানীয় প্রভাবশালী ভুমিদস্যুরা গিলে খাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় দরগাহপাড়া কিশোর ইসলামী সিরাত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুবিন বাদী হয়ে গত ২৩ আগষ্ট চকরিয়া থানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট নালিশী অভিযোগ দায়ের করেছেন। এতে ৪জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড দরগাহপাড়া গ্রামের মোঃ আলম (৪০), মৌলভী ছালেহ আহমদ (৪৫), শাহিদা বেগম (৩৫) ও নুরুল আবছার (৪০)।
অভিযোগে জানা গেছে, দীর্ঘ ১ যুগ ধরে ঐতিহ্যবাহী এই খেলার মাঠটি দিনদিন দখল করে নিলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্টানের তেমন কোনো জোরালো ভূমিকা দেখা যায়না। সংশ্লিষ্টদের দূর্বল অবস্থানের কারণে এমনতর অবস্থা বলে মনে করছেন ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮০ সালে কিশলয় স্কুল প্রতিষ্টার পর থেকে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব চৌধুরী মুহাম্মদ তৈয়বের অক্লান্ত পরিশ্রমে স্কুলের নামে শিক্ষার্থীদের ফুটবল খেলার জন্য ইউনিয়নের পাহাড়ি জনপদ লম্বাতলী এলাকায় ১২০ শতক জমি ফুটবল খেলার মাঠ হিসাবে উপযোগী করা হয়।
সে সময় থেকে প্রতিদিন বিকেলে স্কুলের ছাত্ররা ফুটবল খেলায় মেতে উঠে। বাদ যায়নি এলাকার ক্রীড়া প্রেমিকরাও। এখনো জমে উঠে ছোট বড় ফুটবল খেলার আসর।
তবে বিগত ক’বছর হতে স্থানীয় ভুমিদস্যুদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে খেলার মাঠের উপর। বিশেষ করে বিগত ২০০০ সাল থেকে খেলার মাঠের আশপাশে গড়ে উঠে ছোট বড় স্থাপনা। স্থানীয় ভুমিদস্যুরা মোটা অংকের বিনিময়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি ও ভুমিহীনদের কাছে দখল বিক্রি করে বসিয়ে দেয় জনবসতি।
এমনকি এলাকার প্রভাবশালীরা স্কুল কতৃপক্ষের সাথে নয়ছয় করে মাঠের পশ্চিম অংশ সম্পূর্ণ দখল করে তৈরী করে বসত ঘর। যা এখনও বিদ্যমান।
বর্তমানে মাঠের চারপাশে প্রায় ২ ডজনাধিক ছোট বড় বসতঘর রয়েছে। যাদের দখলে রয়েছে মাঠের একটি অংশ।
সরজমিন গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে ও থানায় লিখিত অভিযোগে মিলেছে তাদের নাম ও পরিচয়। তবে দখলদার কাউকে না পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, দখলদাররা বিভিন্ন সময়ে বনবিভাগের সাথে সমন্বয় করে দখলে নেয় একমাত্র ফুটবল খেলার মাঠটি। যদিওবা এই মাঠটি সরকারী বনভুমির জায়গা। কিন্তু এই মাঠটি যুগ যুগ ধরে পুরো ইউনিয়নের কিশলয় স্কুলের খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
প্রত্যেক বছর আয়োজন করা হয় ফুটবল, ক্রিকেট সহ নানান খেলাধুলার আসর। দর্শকদের আনন্দ চিৎকারে ভরে উঠে পুরো এলাকা। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দল এসে আসরকে মাতিয়ে রাখে। এছাড়া প্রতিদিন বিকেলে স্থানীয় যুব ও ছাত্র সমাজ মাঠে খেলাধুলায় সময় কাটান।
স্থানীয় ক্রীড়ামোদিরা মনে করেন যুব ও ছাত্র সমাজকে বিভিন্ন অপরাধ মুলক কর্মকান্ড থেকে দুরে রাখতে নৈতিক শিক্ষা ও খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু দখলদারদের জন্য ছাত্র ও যুব সমাজ তাদের প্রিয় মাঠে খেলাধুলা করতে না পেরে মানসিক ভাবে অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন দরগাহপাড়া কিশোর ইসলামী সিরাত কমিটির সাধারন সম্পাদক মোঃ মুবিন।
তিনি আরো বলেন, বলতে গেলে মাঠের চারপাশ দখলদারদের থাবায় ছোট হয়ে আসছে। কয়েক বছরের মধ্যে থাকবে না হয়ত মাঠের চিহ্ন।
এ যেন দেখার কেউ নেই। এই সংকটের শেষ কখন হবে কেউ জানেনা। কবে নাগাদ উদ্ধার করা হবে কিশলয় স্কুলের খেলার মাঠ এমনতর প্রশ্ন করেন তিনি।
তিনি অভিযোগ তুলেন, যুব সমাজ তাদের প্রিয় খেলার মাঠ হতে দখলদারদের উচ্ছেদ করতে প্রশাসনের কাছে আবেদন করলেও তা যেন কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। এমনকি স্কুল কতৃপক্ষও নেয়নি কোনো ধরণের পদক্ষেপ।
তবে স্থানীয় যুব সমাজের আশংঙ্কা খেলার মাঠটি এভাবে দখল হয়ে গেলে এক সময় যুব ও ছাত্র সমাজ এই মাঠে খেলাধুলার সুযোগ হারাবে।
সেই সুযোগে হয়ত এক ধরণের প্রভাবশালী ভুমিদস্যু মাঠ তাদের বলে দাবী করবে। তখন হয়ত হারিয়ে যাবে কিশলয় পাহাড়িকা স্টেডিয়াম। যেখানে মিশে আছে অনেকের স্মৃতি, সুখ, দুঃখ, বেদনা।
এখন শুধু অপেক্ষা কি ভাগ্য নির্ভর করছে খেলার মাঠের।জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জপি দেওয়ান বলেন, খোঁজখবর নিয়ে দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।