খাল-নালা খননের সুফল পাচ্ছে চাটগাঁবাসী, তুমুল বৃষ্টিতেও ডুবেনি অনেক সড়ক

উজ্জ্বল দত্ত: বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টিতে বিগত বছরগুলোতে চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর-বহদ্দারহাট, ষোলশহর, জামালখান, রহমতগঞ্জ, চকবাজারসহ নগরীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো। জলাবদ্ধতার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়তো নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থা ও স্বাভাবিক জনজীবন। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। সম্প্রতি মুষলধারে বৃষ্টি হলেও সড়কে আর পানি উঠছে না।

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতাধীন অধিকাংশ খালের সংস্কার কাজ ও খনন কাজ সম্পন্ন হওয়ায় খালগুলো প্রাণ ফিরে পেয়েছে। খালগুলোতে ফিরে এসেছে স্বাভাবিক জলপ্রবাহ ক্ষমতা। পানি উপচে আর সড়ক প্লাবিত হচ্ছে না। টানা বৃষ্টিতে জলজট সৃষ্টি হলেও তা অল্প সময়ের মধ্যেই নেমে যাচ্ছে।

দেখা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টার পর থেকে রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীতে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে এমন মুষলধারে বৃষ্টিতেও জলাক্রান্ত সড়কখ্যাত নগরীর ষোলশহর, মুরাদপুর, বহদ্দারহাটসহ সংশ্লিষ্ট সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়নি।

জলাবদ্ধতা না হওয়ার কারণ

(১) চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সূত্রে জানা গেছে, “চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনর্খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন” প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম নগরের ৫৭টি খালের মধ্যে ৩৬টি খালে পুনর্খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন চলমান। এর মধ্যে কর্ণফুলী নদীর সাথে সংযুক্ত ১৬টি খাল এবং খালে সংযুক্ত আরো ২০টি খালের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। খালের ফ্রি-ওয়াটার বোর্ড নিশ্চিত করার জন্য ৪৮টি পিসি গার্ডার ব্রিজ ও ৬টি কালভার্ট নির্মাণ কাজও প্রায় শেষ। তাছাড়া মরিয়ম বিবি, কলাবাগিচা, টেকপাড়া ও ফিরিঙ্গীবাজার খালের ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াও চলছে। সিডিএ’র তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের প্রায় ৭৬ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়ে গেছে।

(২) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতাধীন খালগুলোতে খনন ও সংস্কার কাজের জন্য খালের মাঝখানে দেয়া অধিকাংশ মাটির বাঁধ অপসারণ করে ফেলা হয়েছে। খালের মাঝখানে দেয়া এসব মাটির বাঁধের কারণে জোয়ারের পানিতে সয়লাব হয়ে যেতো সংশ্লিষ্ট সড়ক।

চকবাজার, দেওয়ান বাজার, জামালখান, স্টেডিয়াম এলাকা, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া ‘চাক্তাই খাল’। লালখান বাজার, ষোলশহর, মেহেদীবাগ, নাসিরাবাদ, পাঁচলাইশ, শুলকবহর, বহাদ্দারহাট এবং বাকলিয়া এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ‘হিজরা খাল’, ‘মির্জা খাল’। ফ’স লেক, বায়োজিদ বোস্তামী, অক্সিজেন, চান্দগাঁও, কালুরঘাট, খাজা রোড সংলগ্ন বাকলিয়া এলাকার সাথে সম্পৃক্ত ‘শীতল ঝর্ণা খাল’। এদিকে মনসুরাবাদ থেকে আনন্দপাড়া পর্যন্ত ও আমবাগান থেকে আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত ‘পাকিজা খাল’। এসব খালগুলোতে চলমান কাজের জন্য তৈরি করা অধিকাংশ মাটির বাঁধ এখন অপসারণ করা হয়েছে।

এ নিয়ে চকবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. নুরুল কবির বলেন, কিছুদিন আগেও সামান্য বৃষ্টিতে চকবাজার কাঁচাবাজার, কাপাসগোলা, বাদুরতলা সড়কে হাঁটু পানি জমে গেছে। সেই পানি নামতে কয়েক ঘণ্টা সময় পেরিয়ে গেছে। তবে কালকে মুষলধারে বৃষ্টি হলেও রাস্তায় বলতে গেলে তেমন পানি নেই। বৃষ্টি চলাকালীন যা পানি শুধু তা-ই। আবার এ পানি ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই নেমে গেছে। এখানে সিডিএ খনন চালিয়েছে আর সিটি কর্পোরেশন খালের বর্জ্য পরিস্কারের কাজ করেছে। তাই বৃষ্টির পানি আর আটকে থাকেনি।

বহদ্দারহাট মোহাম্মদপুর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা এমরান ভুঁইয়া বলেন, রাস্তার পাশের খালে দীর্ঘদিন ধরে সিডিএ দেয়াল নির্মাণের কাজ করছে। এজন্য মাটির বাঁধ দেয়া হয়েছিল। খালের জায়গা উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযানও চালানো হয়েছে। তবে এখন মাটির বাঁধগুলো অপসারণ করা হয়েছে। গতকাল তুমুল বৃষ্টিতেও রাস্তায় পানি উঠেনি। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সুফল নগরবাসী পেতে শুরু করেছে বলা যায়।

এ ব্যাপারে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, বর্ষায় যাতে খালের পানি প্রবাহ আটকে গিয়ে রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য অধিকাংশ খালের মাঝখানে দেয়া মাটির বাঁধগুলো অপসারণ করা হয়েছে। এবার আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে জলাবদ্ধতা প্রতিরোধের কাজ করছি। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

এ নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা বলেন, খালের বর্জ্য অপসারণে আমরা দিনরাত কাজ করছি। বর্ষায় যাতে খালের পানি প্রবাহ স্বাভাবিক থাকে সেজন্য পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলছে। নগরীর ৪১ ওয়ার্ড জুড়ে খাল-নালার ময়লা, আবর্জনা পরিচ্ছন্নতায় পুরোদমে কাজ চলছে। মেয়র মহোদয়ের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে অনুমোদিত প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে পূর্ণাঙ্গ ফিজিবিলিটি স্টাডি করে সেনাবাহিনী। এতে প্রকল্পটির নকশা পরিবর্তন করা হয়। নকশা পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ব্যয়ও বেড়ে যায়। ২০২৩ সালে সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ৩ হাজার ১০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ে প্রকল্পটির। ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারিত হয় ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১৭ হতে জুন ২০২৬।

এদিকে, নগরীর ৪১ ওয়ার্ড জুড়ে খাল-নালার ময়লা, আবর্জনা পরিচ্ছন্নতায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কাজ করছে। এর জন্য ৫ কোটি টাকা ব্যয় বাজেটের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top