খাল খনন বিএনপির রাজনীতির অন্যতম খুঁটি : আমীর খসরু

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : খাল খননকে বিএনপির রাজনীতির অন্যতম পিলার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

শুক্রবার (২ মে) উত্তর কাট্টলী কর্নেলহাট বাজারের বামপাশে নাজির খাল ও কালীর ছড়া খাল স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে নগর বিএনপির অর্থায়নে খনন ও পরিষ্কার কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।

১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে বিএনপির স্থানীয় ৭০০ নেতা-কর্মী এক মাস খাল খননের কাজ করবেন। দলটির নিজস্ব অর্থায়নে এ কাজে খরচ হবে এক কোটি টাকার বেশি।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, খাল খননের মাধ্যমে একটি শহরের পানির যে প্রবাহ তা নিশ্চিত করা হয়। খালের আশপাশে বিশ্বের সব শহরে বড় অর্থনীতি গড়ে ওঠে। খালের দুই পাড়ে স্থানীয় মানুষের বিনোদনের জায়গা হতে পারে। দুই পাড়ে ওয়াকওয়ে হতে পারে, পুরুষ মহিলা সবাই যাতে হাঁটতে পারে। খালগুলো যখন সেই পর্যায়ে নিতে পারবো। খালের একটি অর্থনীতি আছে। খালের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে কৃষির কাজগুলো অনেক সহজ হয়ে যাবে। পানির প্রাপ্যতা সহজ হয়ে যাবে। কিন্তু পানি পরিষ্কার রাখতে হবে। পানি পরিষ্কার থাকলে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। সুতরাং খালের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি আছে। খাল একটি শহরকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট মোকাবেলায় সহায়তা করে। আমি আশাবাদী, মেয়র শাহাদাত দায়িত্বে আছে সে উদ্যোগগুলো নিতে পারবে, তার দক্ষতা, সাহস ও সততা আছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অহেতুক ১৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এর কোনো প্রতিফলন খালগুলোতে দেখছেন, না পানি নিষ্কাশনে দেখছেন? চট্টগ্রামে একটু বৃষ্টি হলে এখনো ডুবে যাচ্ছে। সুতরাং আগে কী হয়েছে সেটি বলার দরকার হয় না।

চসিক মেয়রের প্রশংসা করে আমীর খসরু বলেন, চট্টগ্রামবাসীর সৌভাগ্য অনেক দিন পরে একজন দক্ষ, সুযোগ্য, শিক্ষিত, সৎ মেয়র আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বহু বছর এটা দেখিনি কিন্তু। বিগত দিনের কারও নাম বলতে চাই না। তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, সে একজন রাস্তায় আন্দোলন করে উঠে এসেছে, সংগ্রাম করে উঠে এসেছে এবং খুব খারাপ সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য সুযোগ। আমরা এ সুযোগ গ্রহণ করতে হবে। সবাই তাকে সহযোগিতা করবেন। তার উদ্যোগের সঙ্গে কাজ করবেন। তাহলে আমরা চট্টগ্রামকে সত্যিকার অর্থে বদলাতে পারবো।

উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি রফিক উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল আলমের পরিচালনায় পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথির ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম শহরে একসময় ৭১টি গুরুত্বপূর্ণ খাল ছিল। এসব খাল ভরাট হয়ে যাওয়াই নগরের জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ। এসব খাল খননের দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হওয়ার কথা থাকলেও কিছু অসাধু ব্যক্তির চক্রান্তে নিয়মবহির্ভূতভাবে এই কাজ সিডিএর হাতে চলে যায়।

সিডিএ ৫৭টি খাল চিহ্নিত করলেও মাত্র ৩৬টি খাল খননের কাজ করছে। অন্যদিকে, সিটি করপোরেশন মাত্র একটি খাল খনন করছে। ফলে অন্তত ২০টি অতি গুরুত্বপূর্ণ খাল খননের আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে, যার ফলে নগরবাসী এখনও জলাবদ্ধতার ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না।

খাল খননে পূর্বঅভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও সিডিএ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেয়। বারবার মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়েও তারা প্রকল্পটি শেষ করতে পারেনি, বরং এর মাধ্যমে মেগা দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে।

তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময়ে সিডিএ ও চসিকের প্রধানরা খাল ও নালার ওপর মার্কেট, ভবন ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করেছে। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা খাল বা নালার ওপর থাকতে পারে না।

জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তবে সিটি করপোরেশনে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে। এ সংকট দূর করতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু এখনও বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রামকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সততার সঙ্গে কাজ করছি। তাই আমি অতিদ্রুত যন্ত্রপাতি কেনার জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

সমাবেশে বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সচিব আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এসএম সাইফুল আলম, কাজী বেলাল উদ্দিন, শাহ আলম, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মঞ্জুর আলম চৌধুরী মন্জু, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী। উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সদস্য আবুল হাশেম, জাফর আহমেদ, বিএনপি নেতা আব্বাস রশিদ, আবদুস সাত্তার সেলিম, মঈন উদ্দিন চৌধুরী মাঈনু, রেহান উদ্দিন প্রধান, আলী আজম চৌধুরী, আইয়ুব খান, শামছুল আলম, শ ম জামাল উদ্দিন, জমির আহমদ, সাইফুল আলম, হাবিবুর রহমান চৌধুরী, কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, সকিনা বেগম, মো. সেলিম, মো. আলাউদ্দিন, মো. শফি প্রমুখ।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top