নিজস্ব প্রতিবেদক: আর ক’দিন পরেই কুরবানির ঈদ। বাড়তি চাহিদা থাকায় এই ঈদকে সামনে রেখে দেশের সকল পাইকারি বাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে কুরবানির অপরিহার্য উপাদান মসলার দাম। যার রেশ গিয়ে ঠেকে খুচরা পর্যায়ের বাজারে। তাইতো স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বাড়তি দামে মসলা কিনতে বাধ্য হন ক্রেতারা। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন চট্টগ্রাম নগরীর সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে।
সরেজমিনে দেখা গেছে— দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে দাম কমে যাওয়ায় বিক্রি হচ্ছে ৪৩ থেকে ৪৮ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি চায়না রসুন ১৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। তাছাড়া একই সময়ের ব্যবধানে কেজিতে ১৫ টাকা কমে চায়না আদার দাম। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। অন্যদিকে পাইকারি বাজারটিতে বর্তমানে প্রতি কেজি কেরালা আদা ও দেশি রসুন ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি ইন্ডিয়ান জিরা ৫৭৫ টাকা, চায়না দারুচিনি ৩৬৫ টাকা, ইন্দোনেশিয়ান লবঙ্গ ১ হাজার ২৩০ টাকা, আফগানি কিসমিস ৫২৫ টাকা। এছাড়া এলাচি মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪২০০ থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে যা গেল বছর কুরবানে বিক্রি হয়েছিল ৬০০০ থেকে ৬৫০০ টাকায়।
মসলা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাজী জসিম ট্রেডার্সের ম্যানেজার আশিকুর রহমান জিহান জানান, কোরবানির ঈদে প্রতিবছর মসলা জাতীয় পণ্যের চাহিদা বাড়ে। স্বাভাবিকভাবে চাহিদা বাড়লে দামও বাড়ে। কিন্তু এবছর এসব পণ্যের দাম গতবারের তুলনায় কম রয়েছে। কারণ বাজারে প্রচুর পণ্য মজুদ আছে কিন্তু বিক্রি নেই। ঈদ উপলক্ষে এবার আশানুরূপ ব্যবসাও হচ্ছে না।
নগরীর অক্সিজেন এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী জয়নাল পাটোয়ারী খাতুনগঞ্জে এসেছেন তার দোকনের মুদি বাজার কিনতে। জানতে চাইলে তিনি চাটগাঁ নিউজকে বলেন— আমি তেল-চিনি-চাল-আটা ও মসলা আইটেম কিনতে এসেছি। অপ্রত্যাশিতভাবে এবার মসলার দাম কমে গেছে। আগামী কুরবানকে সামনে রেখে মসলার বাড়তি দাম হবে ভেবে অতিরিক্ত টাকা এনেছিলাম। কয়েকদিন পর দাম বেড়ে যেতে পারে তাই তেল চিনি অল্প নিয়ে মসলা আইটেম বেশি করে নিয়ে ফেললাম।
বেসরকারি চাকরিজীবী মো. মুজাহিদ চাটগাঁ নিউজকে বলেন, বাসার প্রায় বাজার আমি খাতুনগঞ্জ থেকে করি। সামনে কুরবানির ঈদ তাই ভাবলাম প্রয়োজনীয় কিছু মসলা আইটেম কিনে নিয়ে যায়। এসে দেখি গত মাসের তুলনায় এ মাসে পেঁয়াজ-রসুনসহ নিত্য ব্যবহার্য মসলাপাতির দাম অনেক কমে গেছে। প্রতিবছর ঈদকে পুঁজি করে যে সিন্ডিকেট এখানে গড়ে উঠে এবার বোধহয় সেটি ভেঙ্গে গেছে।
জানা গেছে, এবছর বৃহত্তম পাইকারি এই মশলার বাজার নিম্নমুখী। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে বুকিং রেট কম ও সরবরাহ বাড়ার কারণে এসব পণ্যের দাম নিম্নমুখী অবস্থায় রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান— দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজে ২ টাকা, চায়না রসুনে ২০ টাকা ও চায়না আদা ১৫, চায়না দারুচিনিতে ৫ টাকা, ইন্ডিয়ান জিরায় ও ইন্দোনেশিয়ান লবঙ্গে ১০ টাকা করে কমেছে। বর্তমানে খাতুনগঞ্জে ভারতীয় কোনো পেঁয়াজ নেই। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশটি থেকে কোনো পেঁয়াজও আসছে না। তাই পুরো বাজারে রয়েছে দেশি পেঁয়াজের দখলে। এবার পেঁয়াজের ফলন ভালো হওয়ায় গত একমাস ধরে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে— চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জুলাই মাসে ৯ হাজার ৬৮৭ টন, আগস্টে ৮ হাজার ৭৪৯ টন, সেপ্টেম্বরে ১২ হাজার ২৩৮ টন, অক্টোবরে ১২ হাজার ৪৭৫ টন, নভেম্বরে ১২ হাজার ৪১১ টন, ডিসেম্বরে ১৮ হাজার ৬১৪ টন, জানুয়ারিতে ১০ হাজার ৪৯৩ টন, ফেব্রুয়ারিতে ৪ হাজার ৬৯৮ টন এবং মার্চ ও এপ্রিল মিলে ১০ হাজার ৪৯৩ টন রসুন আমদানি করা হয়েছে।
অপরদিকে আদা আমদানি হয়েছে— জুলাই মাসে ৪ হাজার ৯২৩ টন, আগস্টে ৬ হাজার ৭৬৪ টন, সেপ্টেম্বরে ৪ হাজার ৩৬ টন, অক্টোবরে ৮৬০ টন, নভেম্বরে ৪৪৪ টন, ডিসেম্বরে ৩৮৪ টন, জানুয়ারিতে ৩১৪ টন, ফেব্রুয়ারিতে ৩২৯ টন এবং মার্চ ও এপ্রিল মিলে ২ হাজার ৯৬৫ টন ।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, দেশি পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে পেঁয়াজ আসছে। পুরো বাজার দেশি পেঁয়াজে সয়লাব। পাশাপাশি বিদেশ থেকেও আদা, রসুনের আমদানি ভালো। বাজারে কোনো সংকট নেই। সব মিলিয়ে সরবরাহ বাড়ায় এবার এই তিন পণ্যের দাম নিম্নমুখী। আশা করছি, এসব পণ্যের দাম বাড়বে না। কিন্তু সে হিসেবে আমাদের বেচাকেনা এখনও বাড়েনি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস. এম. নাজের হোসাইন বলেন, এবার পাইকারিতে অধিকাংশ ভোগ্যপণ্যের দাম নিম্নমুখী। এটা আমাদের জন্য স্বস্তির। খুচরা পর্যায়ে ভোক্তাদের সুফল পেতে হলে পণ্যমূল্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। এ সংক্রান্ত একটি অ্যাপ তৈরি করা যেতে পারে।
পাশাপাশি বাজার তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তবে সবচেয়ে বেশি দরকার, আমাদের ব্যবসায়ীদের নীতি–নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করা।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ/এসএ