খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির পৃথক সংঘর্ষে নিহত ৪, আহত অর্ধশতাধিক

১৪৪ ধারা জারি

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির পৃথক সংঘর্ষে ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এতে আহতের সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক বলে জানা গেছে।

সহিংসতার ঘটনায় নিহতরা হলেন- খাগড়াছড়ি সদরের জোনাল চাকমা (২৫) ও রুবেল ত্রিপুরা (২১) এবং দীঘিনালার ধনরঞ্জন চাকমা (৩০)। রাঙামাটির সংঘর্ষে নিহতের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতাল ও রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রিপল বাপ্পি চাকমা বলেন, আমাদের এখানে ৩ জনের মরদেহ হাসপাতালে রাখা আছে। ৯ জন বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়াও ৪ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল (চমেক) কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে মামুন নামে একজনকে পিটিয়ে হত্যার জেরে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল থেকে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।  আহত হয়েছেন আরো কমপক্ষে ৯ জন। তাদের খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সহিংসতা বন্ধে খাগড়াছড়ি পৌরসদর এলাকায় শুক্রবার বেলা ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি আছে।

একই ঘটনার জেরে আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে এক জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৫০ জন। এ সময় ভাংচুর করা হয়েছে পাহাড়ি-বাঙালিদের শতাধিক দোকানপাট। বাদ যায়নি মসজিদ-মন্দির ও প্যাগোডা। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সংবাদকর্মীদের গাড়ি। এ ঘটনায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাঙামাটির পৌরসভা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।

রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. শওকত আকবর বলেন, রাঙামাটিতে সংঘর্ষের ঘটনায়  ৫০ জনের মতো লোকজনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন মারা গেছে। তবে তার নাম পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়িরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের জিমনেশিয়াম চত্বর থেকে বনরূপায় পৌঁছালে সেখানে মিছিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে এমন অভিযোগ করে বাঙালিদের বেশ কিছু দোকানপাট ভাংচুর ও বনরূপা মসজিদে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে তারা। এ সময় রাস্তায় চলাচলকারী প্রচুর যানবাহন ভাংচুর করা হয়। এরপরই লাঠিসোঠা নিয়ে মাঠে নামে বাঙালিরাও। তারা কাঠালতলীতে অবস্থিত মৈত্রী বিহারে ভাংচুর চালায়। পুড়িয়ে দেয়া হয় বনরূপায় পাহাড়িদের মালিকানাধীন ২০-২৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতঘর। আগুন দেয়া হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়ে থাকা গাড়িতেও।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দুপুর থেকে রাঙামাটি পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এর পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। আমার পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি।

এদিকে গতকালের সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহতদের দেখতে গিয়েছেন সেনাবাহিনীর দীঘিনালা জোন অধিনায়ক লে. কর্নেল ওমর ফারুক, জেলা প্রশাসক মো. সজিদুজ্জামান ও পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল।

আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে যান তারা। এ সময় তারা সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ করেন এবং গুজবে কান না দিয়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের সাথে নিয়ে সমন্বিত কাজ চলছে বলে জানান।

উল্লেখ্য, বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে এক বাঙালি যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকালে দীঘিনালা সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করলে সেখানে হামলা চালানো হয়। এর জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ফাঁকাগুলি বর্ষণ ও অর্ধ শতাধিক দোকানপাটে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

দীঘিনালা হামলার জেরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়কে অবস্থান নিয়েছে পাহাড়িরা। রাতে পানছড়িতে সেনাবাহিনীর গাড়ি ও ফায়ার সার্ভিসে হামলার ঘটনা ঘটে। জেলা সদরের নারায়নখাইয়া ও স্বনির্ভর বাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে পাহাড়িরা। খাগড়াছড়ি শহরের বিভিন্ন স্থানেও গুলির শব্দ শোনা গেছে। এ অবস্থায় বিভিন্ন সড়কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছে।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top