খাগড়াছড়িতে অপহৃতরা এখনো উদ্ধার হয়নি, চলছে অভিযান 

এইচ এম আলমগীর হোসেন, (খাগড়াছড়ি): তিনদিন পেরিয়ে গেলেও খাগড়াছড়ি জেলা শহরের গিরিফুল এলাকা থেকে অপহৃত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ৫ শিক্ষার্থী এবং তাদের বহনকারী টমটম চালকের কোন খোঁজ মেলেনি।

তাদের উদ্ধারে গত দুইদিন জেলা শহরের গিরিফুল, শিব মন্দির, রাবার বাগানসহ প্রত্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথদল অভিযান পরিচালনা করছে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকাল থেকে যৌথবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য জেলা শহরের পানখাইয়াপাড়া, মধুপুর, এপিবিএন, তেতুলতলা ও পেরাছড়া এলাকার বিভিন্ন অলিগলি, বাসাবাড়ী ও সম্ভাব্য স্থানে অভিযান পরিচালনা করে।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাতেন মৃধা জানান, অপহৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় এখনো লিখিতভাবে কোন অভিযোগ দেয়া হয়নি। তবে পুলিশ এ ঘটনার খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সাথে সমন্বয় করে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করছে। তবে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি নেই।

অন্যদিকে স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যার পর পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় হেডম্যান কারবারিদের সমন্বয়ে অপহৃতদের উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তাও সফলতার মুখ দেখেনি। এদিকে এ অপহরণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপহৃত এবং অপহরণকারীদের পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। কেন তারা সন্তু লারমার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বিজুর অনুষ্ঠানে গেলো এবং সরাসরি বাসে চট্টগ্রাম না গিয়ে পানছড়ি গেল। ইউপিডিএফ এটিকে পরিকল্পিত নতুন কোন ষড়যন্ত্র বলে দাবি করে আসছে।

অপহৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রীদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন। এ সংগঠনের পক্ষ থেকে সুচিন্তা চাকমা এক বিবৃতিতে অপহরণ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তাদের মুক্তি দেয়ার দাবি জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার উল্লেখ করে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে অপরাজনীতি বন্ধ করে ঐক্যের আহবান জানানো হয়।

উল্লেখ্য, বুধবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে জনসংহতি সমিতি সমর্থিত (সন্তু লারমা) পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সদস্য ও চবি’র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রিশান চাকমাসহ ৬ জনকে ইউপিডিএফ (প্রসীত) গ্রুপ অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়। অপহরণের শিকার বাকি শিক্ষার্থীরা হলো চবির চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো এবং চারুকলা বিভাগের অলড্রিন ত্রিপুরা এবং তাদের বহনকারী টমটমের চালক। অপহৃত সকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানা যায়।

তবে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে ইউপিডিএফের জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা। তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য হচ্ছে অপহরণের সাথে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এই ধরনের প্রতিহিংসা পরায়ণ রাজনীতি আমরা করি না। আমরা সবসময় ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের পক্ষে। কোনো মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অপহরণের ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল জানান, যৌথবাহিনীর অভিযান চলছে। অমরা সর্বশক্তি দিয়ে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের অবস্থান শনাক্ত এবং উদ্ধারের চেষ্টা করছি।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top