নিজস্ব প্রতিবেদক : অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে ৪ মাস চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করেছিল কেন্দ্রিয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি বরং কোন্দল আরো বেড়েছে।
এবার দুই গ্রুপ আলাদা আলাদা ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে। এতে করে সাধারণ নেতাকর্মীরা হতাশ।
গত ১৬ জুলাই নগরীর ষোলশহরে কোটা সংস্কারের পক্ষে বিপক্ষে সংঘর্ষ চলাকালে হঠাৎ করে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে। এতে বলা হয়, চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক অনুমোদিত মহানগরের ৭টি থানা ও ১২টি ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করা হল এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর ইতোপূর্বে দেয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হল। সে সাথে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সকল নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধভাবে কোটাবিরোধী আন্দোলন রাজপথে থেকে প্রতিহিত করতে বলা হলো।
সংগঠনের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু এই নির্দেশনা প্রদান করেন বলে গণমাধ্যমে পাঠানো সংগঠনের কেন্দ্রিয় দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক আজিজ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ্য করা হয়।
জানা গেছে কেন্দ্রিয় নির্দেশনার পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা পরদিন মুরাদপুর-বহদ্দারহাটে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্রদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। কিন্তু নিজেদের মধ্যে যে সাংগঠনিক বিরোধের কারণে ৪ মাস সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত করেছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা সেই স্থগিতাদেশ তুলে দেয়ার পরও এক হতে পারেনি নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২০ সদস্যের আংশিক কমিটির দুই গ্রুপের নেতারা।
তারা এক পক্ষ নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও অপর পক্ষ বর্তমান নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পৃথক পৃথক সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করছে।
গতকাল ২৭ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই গ্রুপ আলাদা কর্মসূচি পালন করেছে।
দেশে চলমান পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে পৃথক কর্মসূচি পালনের ঘটনাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি গাজি মেজবাউল হোসেন সাচ্চু বলেছেন, এই ঘটনা তদন্ত করে গঠনতন্ত্র মোতাবেক দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২০২২ সালের ৯ মার্চ দেবাশীষ নাথ দেবুকে সভাপতি ও আজিজুর রহমান আজিজকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০ সদস্যের নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ আটজন সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন ভক্ত হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অন্য ১২ জন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী।
চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজের নেতৃত্বে এই অংশের উদ্যোগে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী। সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক চন্দন ধর, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী।
চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজের সঞ্চালনায় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি এডভোকেট তসলিম উদ্দিন, নাজমুল হুদা শিপন, আজাদ খান অভি, সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ আচার্য্য, প্রচার সম্পাদক তোসাদ্দেক নূর চৌধুরী তপুসহ বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দ।
অপরদিকে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ–সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ও সুজিত দাশের এই অংশের ১২ নেতার উদ্যোগে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ, মনোয়ার জাহান মনি, আজিজ মিছির, আব্দুর রশিদ লোকমান, মিনহাজুল আবেদীন চৌধুরী সায়েম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সরফরাজ নেওয়াজ রবিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ খান, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন প্রমুখ।
সূত্র জানায়, গত ১৪ মার্চ নগরের ৭ থানা ও ১২টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করেছিলো নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ। কমিটি ঘোষণার পর নগর কমিটির ১২ জন প্রতিবাদ জানান। কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে নালিশ দেন। এরই প্রেক্ষিতে দুই পক্ষকে নিয়ে ঢাকায় বৈঠক করে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ। ১৬ জুলাই সেই ১৯ কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। একই সঙ্গে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কোটাবিরোধী আন্দোলন মাঠে থেকে প্রতিহত করার নির্দেশনা দেয়া হয়।
জানতে চাইলে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মনগড়া কমিটি বাতিল করে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করার নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। কিন্তু দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কমিটিতে কোনো আলোচনা না করে একরতফা কর্মসূচি নিয়েছেন তারা (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক)।’
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কদম মোবারক মসজিদে মিলাদ মাহফিল, আন্দরকিল্লা মোড়ে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ ও প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন রয়েছে বলে জানান সংগঠনের সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন।
নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আজিজুর রহমান আজিজ বলেন, ‘সীমিত পরিসরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করার নির্দেশনা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। নির্দেশনা মেনে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।’
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলাদা কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান বলেন, ‘আলাদা কর্মসূচি নেওয়ার কী আছে। দেশ ও দলের ক্রাইসিস মুহূর্তে তাদের আমরা মাঠে দেখিনি। দলের জন্য তাদের কী ভূমিকা রয়েছে। তারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে একটি ফোনও করেনি। এই মুহূর্তে ডেকে ডেকে কর্মসূচি পালনের সুযোগ নেই।’
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ আচার্য্য জানান, দুপুর ১২টায় দারুল ফজল মার্কেটস্থ দলীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, জাতীয়-দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি শুরু হবে। এরপর নগর ও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হবে। সীমিত পরিসরে কর্মসূচি পালন করা হবে।
এদিকে, কোটা আন্দোলনকে ঘিরে দেশে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে সে ধরণের কোন ঘটনা যেন আর ঘটতে না পারে সে জন্য রাগ-অভিমান ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর থানার ২৭টি ইউনিট আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে দলের সভা শেষে এসব কমিটি ভেঙে দেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
চাটগাঁ নিউজ/এসআইএস