উজ্জ্বল দত্ত : জলাবদ্ধতা নিরসনে যন্ত্রপাতি কেনার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ২৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিলেও মন্ত্রণালয়ের ঋণের ফাঁদে তা এখন আটকা। আর এমন অবস্থায় সংস্থাটিকে চলমান বর্ষা মৌসুমের জলাবদ্ধতা নিরসন কাজ চালাতে হচ্ছে কোদাল, বেলচা আর পুরোনো যন্ত্রপাতি দিয়েই।
চসিকের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্মকর্তারা বলছেন, কোদাল, বেলচা, লক্কর-ঝক্কর মার্কা যন্ত্রপাতি দিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ করতে গিয়ে নানামুখী প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এতে করে পরিশ্রম, শ্রমঘণ্টা যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি গুণগত মানের কাজও করা যাচ্ছে না। আবার কর্মীদেরকে নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, কয়েকদিনের টানা বর্ষণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এমন অবস্থায় জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন এলাকায় নালা-নর্দমা পরিচ্ছন্নতাকরণের কাজ করছে চসিক। তবে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি না থাকায় কর্মীদেরকে সেই কোদাল,বেলচা আর হাত দিয়েই পরিস্কার করতে হচ্ছে নালা-নর্দমার ময়লা আবর্জনা।
আজ বুধবার (৯ জুলাই) দুপুরে নগরীর জিইসির মোড় এলাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে নালা পরিস্কার করছিলেন চসিকের কর্মীরা। তবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংকটের কারণে তাদেরকে কোদাল, কাঁটা বেলচা আর হাত দিয়েই নালার ময়লা পরিস্কার করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করতে দেখা গেছে। কয়েকজন কোদাল দিয়ে ময়লা হালকা করে দিচ্ছেন। আর কয়েকজন কাঁটা বেলচা দিয়ে ভাসমান বর্জ্য অপসারণ করছেন। আবার ভার উত্তোলন যন্ত্রের পরিবর্তে কয়েকজনকে হাত দিয়েই নালার ভারী স্ল্যাবগুলো তুলে নিতে দেখা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে চসিকের উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা বলেন, যে যন্ত্রপাতিগুলো আছে সেগুলো দিয়ে আর কাজ করা যায় না বললেই চলে। অনেক যন্ত্রপাতি মেয়াদোত্তীর্ণ। কাজের জন্য যন্ত্রপাতি নামানো হলেও দেখা যায় সেগুলো ঘনঘন বিকল হয়ে যাচ্ছে। তখন এগুলো মেরামত করতেই দিন পার। কাজ আর কিভাবে চলবে।
তিনি বলেন, আমাদের ড্রাম ট্রাক, স্কেভেটর, সুইপিং মেশিন, ব্যাকহো লোডার মেশিন, ড্রেন ক্লিনিং, সাকার মেশিন, ডাবল ড্রাম, থ্রি হুইলার রোলারের মত যন্ত্রপাতি লাগবে। এগুলো কেনার জন্য একটি প্রকল্প চুড়ান্ত অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল মন্ত্রণালয়ের কাছে। এটি নিয়ে মেয়র মহোদয় অনেক দেন দরবার করেছেন। কিন্তু প্রকল্পটি এখনও ঝুলে রয়েছে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের আগষ্টে জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩৫৩টি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল চসিক। প্রাথমিক প্রস্তাবে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৯৮ কোটি টাকা। তবে চার বছর পেরিয়ে গেলেও সেটি অনুমোদনে চসিকের পক্ষ থেকে আর চেষ্টা তদবির করা হয়নি।
জানা যায়, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুদীপ বসাকের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটির প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিল। তবে তিনি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে বদলি হওয়ার পর এ প্রকল্পটি অনুমোদনে চসিকের পক্ষ থেকে আর প্রচেষ্টা চালানো হয়নি। ডা. শাহাদাত হোসেন দায়িত্ব গ্রহণ পরবর্তী তিনি স্বউদ্যোগী হয়ে প্রকল্পটির চুড়ান্ত অনুমোদনে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ শুরু করেন। চুড়ান্ত অনুমোদন পেতে চলতি বছর গত জানুয়ারিতে চসিক থেকে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়। গত মে মাসে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির জিওবি অনুদানে সম্মতি দেয়। তবে সম্মতি দিলেও জিওবি অনুদানের অংশে মন্ত্রণালয় ঋণের শর্ত জুড়ে দেয়।
চসিকের প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রকল্পটির মোট ব্যয়ের ২৬৮ কোটি ৪৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা জিওবি (সরকারি ফান্ড) অনুদান এবং বাকি ২৯ কোটি ৮৩ লাখ ২০ হাজার টাকা নিজস্ব ফান্ডে ব্যয়ের প্রস্তাব ছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের শর্ত অনুযায়ী, চসিকের প্রস্তাবিত অনুদানের বিপরীতে ৬০ শতাংশ অর্থ দেয়া হবে ঋণ হিসেবে। যা টাকার অংকে ১৬১ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা। বাকি ৪০ শতাংশ বা ১০৭ কোটি ৩৯ লাখ ৫২ হাজার টাকা দেয়া হবে অনুদান হিসেবে। চসিককে ঋণ হিসেবে দেয়া অর্থ ৫ শতাংশ সুদে ২০ বছরে ত্রৈমাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। এমন অবস্থায় ঋণের শর্তেই আটকে রয়েছে জলাবদ্ধতা নিরসনে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের প্রকল্পটি।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ